ঢাকা, শনিবার   ২৮ জুন ২০২৫

লকডাউন ৩ মাস থাকলে দারিদ্র্যর হার দ্বিগুণ হবে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২১:৩৩, ১ মে ২০২০ | আপডেট: ২১:৪২, ১ মে ২০২০

(ছবি- সংগৃহীত)

(ছবি- সংগৃহীত)

Ekushey Television Ltd.

দেশে দারিদ্রের হার কমার যে গতি এতদিন চলে আসছিল তা এবার বিপরীতমূখি হচ্ছে। এ অবস্থার সৃষ্টি করেছে প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস। দেশে চলমান লকডাউন (অবরুদ্ধ) ৩ মাসের কোঠায় পড়লে দারিদ্রের হার দ্বিগুন হবে বলে আশঙ্কা করেছে অর্থনীতি গবেষণা সংস্থা সানেম।  আজ শুক্রবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নিজেদের গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)।

বাংলাদেশ গত দেড় দশক দারিদ্রের হার নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছিল। দেশে বর্তমানে মোট জনগোষ্ঠীর ২০ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ দরিদ্র। লকডাউনের কারণে তিন মাস পর ২০০৫ সালের মতো দারিদ্রের হার ৪০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। এমনটি আশঙ্কা করছে সানেম। 

মার্চের শেষে বাংলাদেশে প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর প্রাদূর্ভাব দেখা দিলে পুরোদেশ কার্যত লকডাউন করে সরকার। এতে স্বল্প আয়ের এবং শ্রমজীবী মানুষের নাভিশ্বাস শুরু হয়। 

সানেম’র বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এক মাস পেরিয়ে আসা এই লকডাউন তিন মাস স্থায়ী হলে দেশের মানুষের আয় ২৫ শতাংশ কমে যেতে পারে। যে কোনো দুর্যোগে আয়ের ২৫ শতাংশ নেতিবাচক প্রভাব পড়লে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ৪০ দশমিক ৯ শতাংশে পৌঁছাবে। নতুন করে আরও ২০ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ দরিদ্র হবে।

গবেষণায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো সর্বশেষ খানার আয় ও ব্যয় নির্ধারণ জরিপের উপাত্ত ব্যবহার করে অর্থনৈতিক মডেলের মাধ্যমে তুলনামূলক বিশ্লেষণের কথা জানিয়েছে সানেম। গবেষণার ফলাফলে আরও বলা হয়, তিন মাসের লকডাউনের ফলে পরিবারের আয় ন্যূনতম এক-চতুর্থাংশ কমে যাবে।

অর্থনৈতিক মডেলের ফলাফল অনুযায়ী, বাংলাদেশে নতুন যেসব মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নামতে পারে তাদের মধ্যে ফসল উৎপাদন, গবাদিপশু লালন-পালন ও মাছ উৎপাদন খাত থেকে ৪৩ শতাংশ। তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য শিল্প খাতের ১৬ শতাংশ, খুচরা ব্যবসা ১১ শতাংশ, যোগাযোগ ব্যবস্থার ১০ শতাংশ এবং নির্মাণ খাতের ৭ শতাংশ।

গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, দেশের ৪০টি জেলার দারিদ্র্য হার জাতীয় হারকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। যেমন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে রাঙামাটি। এই জেলায় নতুন করে ৩০ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ নতুন করে দরিদ্র্য হবে।এভাবে ময়মনসিংহে ৩০ দশমিক ২ শতাংশ, সুনামগঞ্জে ২৮ দশমিক ৭ শতাংশ, কক্সবাজারে ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ, নীলফামারিতে ২৭ দশমিক ২ শতাংশ, নড়াইলে ২৭ দশমিক ২ শতাংশ, চট্টগ্রামে ২৬ দশমিক ৯ শতাংশ, নেত্রকোনায় ২৫ দশমিক ৯ শতাংশ, চুয়াডাঙ্গায় ২৫ দশমিক ৮ শতাংশ, শেরপুরে ২৫ দশমিক ৬ শতাংশ, বরগুনায় ২৫ দশমিক ৫ শতাংশ এবং শরীয়তপুরে ২৫ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ এই দুর্যোগে নতুনভাবে দরিদ্র হতে পারে।

অন্যদিকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং নরসিংদী জেলায় এ দুর্যোগের অর্থনৈতিক নেতিবাচক প্রভাব অপেক্ষাকৃত কম হতে পারে। যদিও প্রাথমিক পর্যায়ে এসব জেলায় করোনাভাইরাস এর প্রকোপ অপেক্ষাকৃত বেশি। প্রকৃতপক্ষে এসব জেলায় অনুমিত আয় ২৫ শতাংশেরও বেশি কমতে পারে।

অর্থনীতির উপর করোনা ভাইরাস সঙ্কটের প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকার ঘোষিত আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ এবং বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি অর্থ খরচে তিনটি পরামর্শ দিয়েছে সানেম। তা হলো- দরিদ্র ও অসহায় জনগোষ্ঠীকে কার্যকরভাবে চিহ্নিত করা এবং এর মাধ্যমে তাদের সহায়তা প্রদানের ধরণ ও সময়ের ব্যাপ্তি নির্ধারণ করা, এটি নিশ্চিত করা যাতে প্রকৃত অর্থে যেসব শিল্প কল-কারখানা এবং গরিব মানুষের সহায়তা প্রয়োজন, তাদের কাছে এই সহায়তা সঠিকভাবে পৌঁছায় এবং সর্বশেষটি হলো, একটি ‘পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়া’ চালু করা, যার মাধমে এই সহায়তা প্রদান কার্যক্রমের কার্যকারিতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা যায়।

এমএস/এসি

 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি