ঢাকা, বুধবার   ০৮ মে ২০২৪

জঙ্গি নেতাকে কারাগার থেকে মুক্ত করার পরিকল্পনা এবিটির

প্রকাশিত : ১৩:৩৪, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ | আপডেট: ২১:৫৮, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) প্রধান নেতা জসিম উদ্দিন রহমানীকে কারাগার থেকে মুক্ত করার পরিকল্পনা ছিল এবিটির সদস্যদের। তাকে জামিনে মুক্ত করা সম্ভব না হলে বাহিরে থাকা সদস্যরা হামলার মাধ্যমে তাকে মুক্ত করবে। র‌্যাব- ১ এর অভিযানে গ্রেফতার হওয়া জঙ্গিদের কাছ থেকে এমন তথ্য জানা গেছে।  

শুক্রবার (০১ ফেব্রুয়ারি) সকালে কাওরান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান।

তিনি জানান, একটি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত বিবাহ সংক্রান্ত হাদিস নিয়ে মন্তব্যের জন্য ওই পত্রিকার সম্পাদককে হত্যার পরিকল্পনাও ছিল গ্রেফতারকৃতদের। সম্পাদককে হত্যার আগেই তাদের চারজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব- ১ এর সদস্যরা।     

গ্রেফতারকৃত এবিটির সদস্যরা হলেন- রেজাউল করিমের ছেলে- মোঃ শাহরিয়ার নাফিস ওরপে মোঃ আম্মার হোসেন (২০), মোঃ ইসমাইল হোসেনের ছেলে- মোঃ রাসেল ওরপে সাজেদুল ইসলাম গিফারী (২৪), রেজাউল করিমের ছেলে- মোঃ রবিউল ইসলাম ওরপে নুরুল ইসলাম (২৪), আবুল কালাম সর্দারের ছেলে- মোঃ আব্দুল মালেক (৩১)। এসময় তাদের কাছ থেকে উগ্রবাদী বই, মোবাইল ও ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

মুফতি মাহমুদ খান বলেন, গত ২৮ জানুয়ারী আশুলিয়া এলাকা থেকে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের বা এবিটির সক্রিয় সদস্য মোঃ আব্দুস ছোবহান ওরপে হাবিব (২৮) নামের একজনকে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল রাত ২টার দিকে রাজধানীর উত্তরা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতদের বরাত দিয়ে মুফতি মাহমুদ বলেন, বর্তমানে গোপনে তারা সংগঠনকে উজ্জীবিত করার কাজ করে যাচ্ছে। তাদের অন্যতম পরিকল্পনা হল- তাদের সংগঠনের প্রধান জসিম উদ্দিন রহমানীকে কারাগার থেকে মুক্ত করা। যদি তারা তাদের নেতাকে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জামিনে মুক্ত করতে না পারে, তাহলে কারাগারে হামলা করে হলেও জসিম উদ্দিন রহমানীকে মুক্ত করবে বলে জানায়। জসিম উদ্দিনকে মুক্ত করার জন্য তারা ইতোমধ্যে অর্থ সংগ্রহ করেছে। তারই একাংশ গ্রেফতারকৃত রাসেলের কাছে জমা ছিল বলেও জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, গ্রেফতারকৃতরা শুধু তাদের নেতাকে মুক্ত করতে কারাগারে হামলার পরিকল্পনা করেনি। সেই সঙ্গে একটি জাতীয় পত্রিকায় জুলাইয়ের ২৮ তারিখে বিবাহ সংক্রান্ত একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। সে প্রবন্ধে হাদিস নিয়ে কটুক্তি করা হয়েছে এমন দাবি নিয়ে তারা ওই পত্রিকার সম্পাদককে হত্যার পরিকল্পনাও করে। এজন্য তারা গোপনে এবিটির মতাদর্শী সদস্যদের সুসংগঠিত করার চেষ্টা করছে। তবে চেষ্টা সফল হওয়ার আগেই তাদেরকে র‌্যাব সদস্যরা গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় বলে জানান র‌্যাব কর্মকর্তা।  

র‌্যাবের মুখপাত্র গ্রেফতারকৃতদের পরিচয় সম্পর্কে বলেন, গ্রেফতার শাহরিয়ার বগুড়ার ধনুট উপজেলার বিভিন্ন মাদ্রাসায় ৭ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করে। এরপর ফেইসবুকের মাধ্যমে এবিটির সক্রিয় সদস্য আমানের মাধ্যমে সে এবিটিতে যোগ দেয়। এরপর আমানের নির্দেশে সে ৪-৫টি ফেইসবুক গ্রুফ তৈরি করে প্রচার প্রচারণা চালাত এবং জঙ্গি সদস্য সংগ্রহ করত। এভাবে সে সাত আট জনকে এবিটিতে যুক্ত করে। সে এবিটির টার্গেট কিলিং মিশনের মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে অনলাইনে বিভিন্ন এ্যাক্টিভিস্টদের নজরদারি করা শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় গ্রেফতারকৃত শাহরিয়ার ছদ্মবেশে একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি এ্যাকিটিভিস্ট (নাস্তিক গ্রুপ) গ্রুপ ঢুকে পরে। অতপর সংগঠনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক এ্যাকটিভিষ্ট গ্রুপের এক সদস্যকে হত্যার পরিকল্পনা করে। উক্ত মিশনে সংগঠন হতে গ্রেফতারকৃত শাহরিয়ার ও অপর দুই সদস্যকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ উদ্দেশ্যে গত সপ্তাহে ঢাকা থেকে একজন ধারালো অস্ত্র সহ এবং অপর একজন সদস্য বরগুনা থেকে বগুড়া গমন করে। বগুড়া গমনের পর তারা অনলাইনে ফোন করে ওই এ্যাকটিভিস্ট সদস্যকে সাক্ষাত করতে বলে। কিন্তু ওই ব্যক্তি সাক্ষাত না করায় তাদের মিশনটি সম্পন্ন হয় নাই। অতপর তারা বগুড়া থেকে স্ব স্ব গন্তব্য স্থলে ফেরত চলে যায়।

অপর গ্রেফতারকৃত মোঃ রাসেল ওরফে সাজেদুল ইসলাম গিফারী ভোলার ফুলকাছিয়া গ্রাম থেকে ২০১৩ সালে এসএসসি পাশ করে একটি গামেন্টর্সে চাকুরী নেয়। সে সময় সে ফেইসবুকে উগ্রবাদী পোস্ট ও ভিডিও দেখত এবং অন্যদের সাথে এ সম্পর্কে আলোচনা করত। ২০১৭ সালের মাঝামাঝি ফেইসবুক এর মাধ্যমে বর্ণিত গ্রুপের নিয়ন্ত্রক আমানের সাথে তার পরিচয় হয় এবং আমান তাকে জঙ্গি সংগঠনে যোগদানে জন্য উদ্বুদ্ধ করে। বর্তমানে সে ছদ্মবেশে একটি কনস্ট্রাকশন ফার্মে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিল। সে আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের এক অংশের সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করত। সে নিয়ন্ত্রকের নির্দেশনায় বিভিন্ন ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ, তাদের কাছে অর্থ সংগ্রহ ছাড়াও সদস্য সংগ্রহের দায়িত্ব পালন করে আসছিল।

মুফতি মাহমুদ জানান, নুরুল ইসলাম ২০১০ সালে দাখিল পাশ করে। অতপর সে বগুড়া পলিটেকনিক্যাল ভর্তি হয়ে ২০১৫ সালে ডিপ্লোমা ডিগ্রি সম্পন্ন করে। সে ২০১৮ সালে শাহরিয়ারের মাধ্যমে জঙ্গি সংগঠনে যোগদান করে। অপরজন মোঃ আব্দুল মালেক পেশায় একজন প্রাইভেট গাড়ী চালক। সে ২০১৮ সালে রাসেলের মাধ্যমে বর্ণিত গ্রুপে যোগদান করে।

এসি  

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি