ঢাকা, বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪

বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে রক্তের অভাবে কোনো মানুষ মারা যেতে পারে না

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:৩৫, ৩০ জুলাই ২০২১ | আপডেট: ১৫:৪৬, ৩০ জুলাই ২০২১

১৯৭২ সালের ১০ জুন দেশে স্বেচ্ছারক্তদান কার্যক্রমের সূচনা করেন জাতীয় অধ্যাপক ডা. নুরুল ইসলাম

১৯৭২ সালের ১০ জুন দেশে স্বেচ্ছারক্তদান কার্যক্রমের সূচনা করেন জাতীয় অধ্যাপক ডা. নুরুল ইসলাম

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলতেন, ‘একজন মানুষ হিসাবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই আমি ভাবি। একজন বাঙালি হিসেবে যা কিছু বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। এই নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস ভালোবাসা, অক্ষয় ভালোবাসা, যে ভালোবাসা আমার রাজনীতি এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে।’

বঙ্গবন্ধু সারাজীবন মানুষের জন্য কাজ করেছেন। বাঙালি জাতির জন্য তিনি জীবন দিয়ে গেছেন। বাঙালীর জাতীয় জীবনে বঙ্গবন্ধু চিরন্তন আলোকবর্তিকা বাহক। তার রেখে যাওয়া আদর্শ জাতিকে পথ দেখাবে অনন্তকাল ধরে। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাঙালি জাতি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আজ আমরা নিজের দেশে স্বাধীনভাবে চলতে পারছি। বঙ্গবন্ধুর এ ঋণ আমরা কোনওদিন শোধ করতে পারব না। জাতির পিতার আদর্শ বাস্তবায়নকারী কাজ করলেই তাঁর স্বপ্ন পূরণ হবে।
 
সত্যিই বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে রক্তের অভাবে আর কোনো মানুষ মারা যেতে পারে না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপ্ন দেখেছিলেন সোনার বাংলা গড়ার। তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা আজ সে স্বপ্ন পূরণে কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু বাস্তবিক সোনার বাংলা গড়তে ত্যাগী মানুষ দরকার। স্বেচ্ছা রক্তদাতারা অন্যতম ত্যাগী মানুষ।

‘মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধারা নির্দিষ্ট কোনও ধর্মমতের ভিত্তিতে না, হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান সবার মুক্তির জন্যে একসাথে শত্রুর বিপক্ষে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। এক্ষেত্রে তারা তাদের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদটি দান করেছেন, তা হলো রক্ত- মহান স্রষ্টার এক অমূল্য সৃষ্টি। রক্তের বিষয়টি যেমন সার্বজনীন তেমনি এটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার একটি অন্যতম উপাদান।

ভাষা আন্দোলনে আমরা রক্ত দিয়েছিলাম মাতৃভাষা রক্ষার জন্যে। আর ১৯৭১ সালে আমাদের মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করার জন্যে রক্ত দিয়েছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। তাই রক্তদানের সাথে মানবিকতার বিষয়টি সবসময়ই ছিল।

অন্যের জীবন বাঁচাতে পারে আপনার দেয়া এক ব্যাগ রক্ত। এরচেয়ে বড় দান আর কিছুই হতে পারে না। রক্ত আর জীবন এক আর অভিন্ন। যার বিকল্প আর কোনও কিছুই আবিষ্কার হয়নি। রক্তের বিকল্প শুধুই রক্ত। একজন সুস্থ মানুষ তাঁর শরীরে থাকা এক ব্যাগ রক্ত দিয়ে অসহায় একজন মানুষকে বাঁচাতে পারে। এর চেয়ে বড় দান আর কিছুই হতে পারে না। মনে রাখতে হবে, আমাদের শরীরে রক্ত- বিশেষ করে লাল রক্ত ১২০ দিনে ভেঙে যায় এবং নতুন করে আবার তৈরী হয়।

সড়ক দুর্ঘটনা, আগুনে পুড়ে যাওয়া, বড় বড় অপারেশন, থ্যালাসেমিয়া রোগীদের রক্তের প্রয়োজন হয়। থ্যালাসেমিয়া বা হিমোফিলিয়া রোগে আক্রান্তদের কারো কারো সপ্তাহে দুইবার রক্ত নিতে হয়। এখন ডেঙ্গু জ্বর বাড়ছে। ডেঙ্গু রোগীর জীবন বাঁচাতে রক্তের প্লাটিলেট প্রয়োজন বাড়ছে।

আমাদের দেশে প্রতিবছর প্রায় সাড়ে ৮ থেকে ৯ লাখ ব্যাগ (কখনও আরো বেশি) নিরাপদ রক্তের চাহিদা রয়েছে। এর বিপরীতে কেবল ৩০ শতাংশ নিরাপদ রক্ত আসে স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে। বাকি ৭০ শতাংশ আসে রক্তগ্রহীতার স্বজন, বন্ধু-বান্ধবসহ পরিচিতজনদের কাছ থেকে। সেখানেও ব্যর্থ হলে তারা পেশাদার রক্ত বিক্রেতার স্মরণাপন্ন হয়। যা অত্যন্ত বিপজ্জনক। তাদের রক্ত ব্যবহারের ফলে রোগীর দেহে ঘাতকব্যাধির জীবাণু সংক্রমিত হতে পারে। এজন্য স্বেচ্ছা রক্তদাতার রক্তই সবচেয়ে নিরাপদ। তাই রক্তের বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। না হলে বহুবিধ সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। আর রক্তের বিশুদ্ধতা পেশাদার নয়, কেবল স্বেচ্ছা রক্তদাতাদের মাধ্যমেই নিশ্চিত করা সম্ভব।

১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী শারীরিকভাবে সুস্থ ও সক্ষম ব্যক্তি প্রতি চার মাস অন্তর রক্ত দিতে পারবেন। এতে স্বাস্থ্যে কোনও ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে না। উপরন্তু রক্তদানের বহুবিধ উপকারিতা রয়েছে। প্রথমত নিয়মিত রক্তদাতার রক্ত দেয়ার সময় অনেকগুলো ফ্রী টেস্ট করা হয়। তখন সে জানতে পারে তার কোনও বড় অসুখ হলো কিনা। এরপর নিয়মিত রক্তদানে রক্তদাতার লোহিত কণিকাগুলোর প্রাণবন্ততা বাড়িয়ে দেয় এবং শরীরে আয়রণের ভারসাম্য বজায় রাখে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, নিয়মিত স্বেচ্ছা রক্তদানকারী দুরারোগ্য রোগব্যাধি যেমন- ক্যান্সার, হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাকের মতো রোগের ঝুঁকি থেকে প্রায়ই মুক্ত থাকেন। 

চিকিৎসকেরা বলেন, যারা নিয়মিত রক্তদান করেন, তাদের হার্ট ডিজিস কম হয়। যেমন- হার্টের এরিথমিয়া, হার্ট অ্যাটাক, এগুলো কমে যায়। কারণ রক্তদানের মাধ্যমে শরীর থেকে অতিরিক্ত আয়রন চলে যায়। অতিরিক্ত আয়রনের জন্যে হার্টের ওপর একটা এফেক্ট পড়ে। এছাড়া রক্তে মাত্রাতিরক্ত লৌহ শরীরের ব্লাড ভেসেল স্ট্রিক্ট করে, এ থেকে তার স্ট্রোক হতে পারে। নিয়মিত রক্তদান করলে স্ট্রোকের আশঙ্কা ৮৮% কমে যায়। এছাড়া রক্ত দেয়ার মাধ্যমে ওবেসিটির পেশেন্টরাও উপকৃত হতে পারেন।

এছাড়া দেখা যাচ্ছে, রক্তে যদি আয়রনের পরিমাণ বেশি থাকে সেগুলো লিভারে জমা হয়। যা পরবর্তীতে হেমোক্রোমাটোসিস সৃষ্টি করে। এখান থেকে লিভার সিরোসিস হয়। এমনকি ক্যান্সারও হতে পারে। অতএব রক্তদান করলে অনেকের ক্যান্সার ঝুঁকি কমে যায়।

যিনি রক্ত দিচ্ছেন তার শরীরে ৬০-১২০ দিনের মধ্যে রক্ত পূরণ হয়ে যায়। তার কোনও ক্ষতি হয় না। রক্ত দেয়ার মাধ্যমে তার পুরনো রক্তগুলো চলে যায়, ফলে শরীরে নতুন রেড সেল তৈরির জন্যে স্টিমুলেশন হয়। নতুন রক্ত তৈরি হবে। আর নতুন রক্ত তৈরির মাধ্যমে তার শরীর সুস্থ থাকে এবং তারুণ্য দীর্ঘস্থায়ী হয়।

এছাড়া কিছু সাইকোলজিক্যাল ফ্যাক্টরও আছে। একজন রক্তদাতা ভাবেন যে, আমি রক্ত দেয়ার মাধ্যমে মানুষের সেবা করছি। সে উৎফুল্ল থাকে। সে যে মানবতার সেবা করছে এটাও তাকে সাহায্য করে মানসিকভাবে প্রশান্ত থাকতে। রক্ত প্রদান করলে সামান্য সূচের যে খোঁচা এটাই শুধু লাগে। রক্ত দিয়ে মানুষ মারা গেছে এমন কোনও নজির নেই।

এনএস//


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি