ঢাকা, শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪

ঢাকাই মসলিনের প্রত্যাবর্তন (ভিডিও)

মুহাম্মদ নূরন নবী, একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:০৬, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

ফিরে এসেছে ঢাকাই মসলিন। সূক্ষ্ম ও অতি দামি কাপড়টির পুনরুদ্ধার মোটেই সহজ কোনো কাজ ছিলো না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা ও ঐকান্তিক তদারকির ফলেই ফিরেছে ঐতিহ্যের মসলিন। 

ঢাকাই মসলিন। বলা হতো, বাতাসে বোনা কাপড়। 

একেবারে স্বচ্ছ-সূক্ষ্ম কাপড়টি হাওয়ার মতই হালকা ও নরম। ঢাকাই মসলিনের কদর ছিল পৃথিবী জুড়ে। ইউরোপের বাজারে হঠাৎ চমক সৃষ্টি করে আবার হঠাৎই অদৃশ্য হয়ে যায় বাংলার মসলিন।

নিঃস্ব হলো তাঁতী আর মেপল পাতা আকৃতির ফুটি কার্পাস জংলী গাছে পরিণত হলো। কাপড় বোনার জটিল কৌশলও একসময় ভুলে গেলো মানুষ। 

তারপর বলতে গেলে, আড়াইশ’ বছরেরও বেশি সময় হা-হুতোশই চললো। অতঃপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে পুনরুদ্ধারের প্রথম উদ্যোগ নেয়া হলো ২০১৪ সালে। কিন্তু, কোথায় মিলবে আসল ফুটি কার্পাস?

বিলুপ্ত হবার পরও বন্য প্রজাতি হিসেবে উদ্ভিদ টিকে থাকে কমপক্ষে তিনশ’ বছর। বৈজ্ঞানিক এ ধারণাকে ভিত্তি ধরেই দেশের প্রান্তে প্রান্তে ছুটে চললেন গবেষকরা। সম্বল- ফুটি কার্পাসের একটা স্কেচ।

মসলিন পুনরুদ্ধার প্রকলোপর প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. মনজুর হোসেন বলেন, “ওই সময়ে কোনো বিজ্ঞানী তো গাছটা তৈরি করেননি, প্রকৃতি থেকে নির্বাচিত হয়ে কৃষকের মাধ্যমে তারা এটা ব্যবহার করেছেন। আমার শক্ত বিশ্বাস ছিল যে, বন-জঙ্গলের কোথাও না কোথাও এই তুলাটা পাবো।”

মুসলিন সূতা কাপড় তৈরির প্রযুক্তি পুনরুদ্ধার প্রকল্পের সদস্য অধ্যাপক ড. শাহ আলীমুজ্জামান বলেন, “কিভাবে স্থিতি আছে ঠিক ওইভাবে একটা স্কেচ দিয়ে দিয়ে গাছের ছবি নিয়ে আসি। এই ছবিটা ধরে ধরে আমরা সারা বাংলাদেশে খুঁজতে থাকলাম। এর জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি।”

সংগ্রহ করা ৩৯টি থেকে ৬টি জাতের নমুনা নির্ভরযোগ্য মনে হয় গবেষকদের। এরপর লন্ডনের ভিক্টোরিয়া-আলবার্ট মিউজিয়াম ও বাংলাদেশের জাতীয় জাদুঘরের বিদ্যমান নমুনার জিনোম সিকুয়েন্সে সাদৃশ্য মিলে শতভাগ। জানা গেলো, গাজীপুরের কাপাসিয়ার নমুনাই আসল ফুটি কার্পাস। 

প্রকল্প পরিচালক আইয়ুব আলী বলেন, “এটা হলো আরমনিয়াম। ওই আরমনিয়ামের সঙ্গে মসলিন কাপড়ের সূতার সঙ্গে সিয়োয়েন্স একদম মিলে যায়। ৯৫-৯৭ শতাংশ মিল করা গেছে। তখন আমরা নিশ্চিত হয়েছিলাম।”

অধ্যাপক ড. শাহ আলীমুজ্জামান বলেন, “অ্যানালাইসিস করার সাথে সাথেই বুঝে গিয়েছিলাম আসলে মসলিনের এই বিশেষত্বগুলো কেন।  যার ধরুন আলবার্ট থেকে বের হয়ে এসে বলেছিলাম, ইনশাল্লাহ আমরা মসলিন বানাতে পারবো।”

এর বাইরে সূক্ষ্ম সূতার কারিগর, মসলিনের মত বেশি কাউন্টের কাপড় বোনার দক্ষ তাঁতী তৈরি এবং বুননে বিশেষ ধরণের গর্ত তৈরির প্রচেষ্টাও এগুলো সমানে সমানে। 

১০ কাউন্ট থেকে শুরু করে ৭শ’ কাউন্ট পর্যন্ত মসলিন তৈরি হলো নারায়ণগঞ্জের মসলিন সেন্টারে। 

অধ্যাপক ড. শাহ আলীমুজ্জামান বলেন, “এক দেড়বছর আগে প্রায় ৭শ’ ৩০ মেট্রিক কাউন্ট সূতা আমরা তৈরি করতে পারলাম। যেটা হাতের মাধ্যমে ম্যানুয়ালী, সেটা সাধারণত চোখে দেখা যায় না।”

ঢাকাই মসলিনের পুনরুদ্ধারে আবারও শক্তিশালী ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার আশা গবেষকদের। 

একসময়ে বিশ্বের মানুষের কাছে প্রায় অবিশ্বাস্য ছিল মসলিনের মতো কাপড়কে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে। কিন্তু সেটা গবেষণা পর্যায় থেকে কারাখানা পর্যন্ত আনা সম্ভব হয়েছে। এখন এটা বেসরকারি পর্যায়ে মানুষের হাতে পৌঁছে দেবার অপেক্ষায়। আর সেটা যদি প্রকৃতপক্ষে করা সম্ভব হয় তাহলে একসময়ের গর্ব হারানো মানিক এদেশের ঐতিহ্য মসলিন কাপড় পৌঁছে যাবে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব প্রান্তে। এমনটাই প্রত্যাশা এই প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের।

এএইচ


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি