ঢাকা, সোমবার   ২৮ জুলাই ২০২৫

অপরিকল্পিত উন্নয়নে মরছে নদী: একশনএইড

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:৪৯, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ২১:০০, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

Ekushey Television Ltd.

আঞ্চলিক ও দেশীয় পর্যায়ে অপরিকল্পিত উন্নয়ন বাংলাদেশে প্রবাহমান নদীগুলোকে মেরে ফেলছে। একইসঙ্গে তৈরি হচ্ছে নদীকেন্দ্রীক মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক সমস্যা। এমন পরিস্থিতিতে নদী ও পানি কেন্দ্রীক উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের কথা বললেন বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও চীনের বিশেষজ্ঞরা।

শুক্রবার পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় একশনএইড বাংলাদেশ আয়োজিত পানি ও জন-উদ্ভাবন সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এমন মত উঠে আসে। পানির ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জন-উদ্ভাবনকে পরিচিতি ও প্রচার নিশ্চিত করতে দুইদিনব্যাপি এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। 

অনুষ্ঠানের শুরুতেই নদী, পানি ও জন-উদ্ভাবনের বিষয়টি তুলে ধরেন আয়োজকরা। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশ, নেপাল ও ভারতের নদীগুলোকে কেন্দ্র করে বহু দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক চুক্তি করা হয় কিন্তু এসব চুক্তিতে কখনোই নদীর ওপর সাধারণের অধিকার কিংবা স্বতন্ত্র সত্ত্বা হিসাবে নদীর নিজের অধিকারের আলোচনাকে স্থান দেয়া হয়নি। বরং উন্নয়নের নামে দেশগুলো নিজ নিজ স্বার্থ রক্ষায় প্রায়ই নদীর ওপর অপরিকল্পিত ব্যারেজ, বাঁধসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ ও তীরবর্তী মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করেছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ বলেন, ‘উজানে ফারাক্কার মত বাঁধের কারণেই বাংলাদেশের নদীগুলো মরে যাচ্ছে। তার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে আমাদের দেশের অপরিকল্পিত উন্নয়ন। পানি ও নদীর নিজস্ব যে একটা গতিধারা আছে তা মাথায় না নিয়ে আমরা নদীকে ব্যবহার করছি। যার খেসারত দিতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।’

এ বিষয়ে উজানের পরিস্থিতি তুলে ধরেন ভারতের গঙ্গা ভাঙন প্রতিরোধ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. তরিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘যখন ফারাক্কা বাঁধ হয় তখন আমাদের দেশের অনেকেই এর ভবিষ্যতে কি ধরনের বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে তা নিয়ে কথা বলেছিলেন। তখন তাদের পাকিস্তানি চর হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল। বাস্তবতা হলো, ফারাক্কার কারণে আমাদের ওখানেও গঙ্গার আশপাশের মানুষের অবস্থাও খুব খারাপ। দিনকে দিন মানুষ নানা জীবিকা হারাচ্ছে। নির্মূল হয়েছে সমাজ, সংস্কৃতি, কৃষি। আমরা ফারাক্কায় বাধ চাই নি, ব্রীজ চাইছিলাম।। ফারাক্কা আমাদের জন্য বিষফোড়া।’

একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, ‘একটা সময় ছিল মানুষ তার নিজস্ব উদ্ভাবন দিয়ে সেচ কাজ থেকে শুরু করে যাতায়াতের জন্যেও নদীকে ব্যবহার করত। পানি ও নদীর বহুমুখি ব্যবহারে আমাদের ইতিহাস, অর্থনীতি ও সংস্কৃতি ছিল সমৃদ্ধ। আঞ্চলিকভাবে নানা উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা নদীর অধিকার কেড়ে নিচ্ছি। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে আমাদের দেশের অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও নগরায়ণ। নদীকে বাঁচাতে তাই মানুষের উদ্ভাবনকে জোর দিতে হবে।’

অনুষ্ঠানে চীনে তিয়ানজিন ফিন্যান্স ও অর্থনীতি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই অধ্যাপক যোগ দেন। তাদের একজন অধ্যাপক ঝ্যাং লিয়ান বলেন, ‘যেভাবে উন্নয়ন হচ্ছে তাতে ছোট ছোট উন্নয়ন হারিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়ননের প্রয়োজন আছে, তবে সেটি হওয়া উচিৎ মানুষ বান্ধব। দেখা যায় যে উন্নয়নটা করা হয় সেটি একদিকে দখল দূষণ হচ্ছে অন্যদিকে সাধারণ মানুষের উদ্ভাবনকে মেরে ফেলছে। সমস্যা সমাধানে কৃষক ও যুবকদেরসঙ্গে নিয়ে কথা বলতে হবে নদীকেন্দ্রীক নতুন উদ্যোগ নিতে হবে।’

পানি ও জন-উদ্ভাবন সম্মেলনে নেপাল, ভারত ও চীনের মোট ছয়জন গবেষকসহ বংলাদেশের বিবিন্ন পর্যায়ের উদ্ভাবক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক- শিক্ষার্থী, গবেষক ও এক্টিভিস্টগণ এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। দুই দিনে মোট ৬ উদ্ভাবনমূলক প্রবন্ধ উপস্থাপন করছেন।

একশনএইড বাংলাদেশ মনে করে পানি বা নদী নিয়ে জনতার উদ্ভাবনই নিশ্চিত করবে পানি ইস্যুতে ন্যায্যতা ও জনমানুষের অধিকারের প্রতিষ্ঠা এবং স্থানীয় প্রযুক্তি ও কম খরচের বিভিন্ন উদ্ভাবন দিয়েই পানি সম্পদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান সম্ভব। তাই, পানি নিয়ে জন-মানুষের চিন্তা ভাবনা ও উদ্ভাবনকে সবার সামনে তুলে আনার লক্ষ্যে একশনএইড বাংলাদেশ এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে।


এসি/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি