ঢাকা, সোমবার   ২৮ জুলাই ২০২৫

আজ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়

প্রকাশিত : ০৮:৪২, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ১০:৩২, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

Ekushey Television Ltd.

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা হওয়ার নির্ধারিত দিন আজ। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আজই রাজধানীর বক্সীবাজারের আলিয়া মাদ্রাসায় স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতে ঘোষণা করা হবে বহুল আলোচিত এ মামলার বহুল প্রতীক্ষিত রায়। ছয় আসামির মধ্যে মূল অভিযুক্ত এবং প্রধান আসামী হলে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া।

তবে এ রায়কে ঘিরে ইতোমধ্যে রাজধানীসহ সারা জুড়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে। রায়ে বেগম জিয়ার সাজা হলে নাশকতার সৃষ্টি করতে পারে বিএনপি সমর্থিত নেতা কর্মীরা। আবার রায় ঘোষণা বানচাল করার জন্যও বিশৃংখলা সৃষ্টি করা হতে পারে বলেও মনে করছেন অনেকেই।

যেভাবে আদালতে যাবেন

বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া সকাল সাড়ে দশটায় গুলশানে তার বাসভবন ‘ফিরোজা’ থেকে বের হবেন। আলিয়া মাদ্রাসায় স্থাপিত বিশেষ জজ আদালত-৫ এ সকাল ১১টায় উপস্থিত হবেন তিনি। সেখানে বিচারক ড. আক্তারুজ্জামান মিয়া এ মামলার রায় ঘোষণা করবেন। বিএনপি’র কিছু সূত্র থেকে জানা যায় যে, আগের হাজিরাগুলোতে চেয়ারপার্সনের সাথে যেমন নেতাকর্মীদের বহর ছিল এবার তা থাকছে না। তবে বেগম জিয়ার গাড়ি বহরের সাথে থাকতে পারেন দলীয় নেতা কর্মীরা। কিন্তু ঢাকা মহানগর পুলিশ মিছিলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় তা কতটুকু সম্ভব হবে এ নিয়ে সন্দেহে আছেন বিএনপি নেতা কর্মীরা। অনেকের ধারণা, নিজ বাসভব থেকে বের হওয়ার সময়েই পুলিশের সাথে ঝামেলায় জড়িয়ে যেতে পারেন নেতা কর্মীরা।

বেগম জিয়ার নিরাপত্তায় অন্যান্য বারের চেয়ে এবার তিন গুণ বেশি পুলিশ থাকার কথা শোনা গিয়েছে। বেগম জিয়ার নিজস্ব গাড়িতে বরাবরের মত থাকবেন মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস এবং সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ। বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন সুলতানা আহমেদ। তবে ঠিক কোন পথ ধরে আদালতের উদ্দেশ্যে যাবেন বেগম জিয়া তা এখনও নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারেনি।

নিরাপত্তা

এদিকে রাজধানীসহ পুরো দেশে আইন শৃংখলা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সতর্ক অবস্থানে আছে পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীগুলো। গতকাল বুধবার থেকেই রাজধানীতে ২০ প্লাটুনসহ পুরো দেশে মোতায়েন করা হয়েছে ৭৬ প্লাটুন বিজিবি। রাজধানীর বিশেষ জায়গাগুলোতে বসানো হয়েছে তল্লাশী চৌকি। সাদা পোশাকে কড়া নজরদারিতেও আছে এসব বাহিনীর সদস্যরা। পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত রাজধানীতে সকল প্রকার মিছিল-মিটিং এবং লাঠিসোটা, বাঁশসহ বিভিন্ন ধরণের ধারালো বস্তু বহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া। বন্ধ রাখা হয়েছে রাইড শেয়ারিং সেবাগুলোও।

উৎকণ্ঠা

রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে জনমনে এক ধরণের উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে রাজধানীবাসী আছেন গভীর উদ্বেগে। যে যেভাবে পারছেন রাস্তাঘাটের সার্বিক অবস্থার সর্বশেষ আপডেট জানার চেষ্টা করছেন। চোখ রাখছেন টেলিভিশন, পত্রিকা ও অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোতে। এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে সর্বশেষ অবস্থার চিত্র জানতে চেয়ে একের পর এক পোস্ট করছেন অনেকেই।

রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী লোপা আফরিনের সাথে সকাল ৮টায় কথা হয় এই প্রতিবেদকের। কাওরান বাজার থেকে কলেজে যাওয়ার জন্য উইনার বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি। ইটিভি অনলাইনকে তিনি বলেন, “আজ কলেজে যাওয়ার কোন পরিকল্পনাই ছিল না। কিন্তু ফাইনাল পরীক্ষার ফরম পূরণের নির্ধারিত তারিখ আজকে। আমাদের ঐ দিকেই আলিয়া মাদ্রাসা। আল্লাহই জানেন আজ কী হয়!”

আবার অনেকেই খুব একটা প্রয়োজন না হলে বাসাবাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না। মিরপুরের ই-কমার্স ব্যবসায়ী আমিন উদ্দীন জানান, “আজ অফিসের সবাইকে ছুটি দিয়েছি। বন্ধ রেখেছি সব ধরণের পণ্য সরবরাহ। আমি নিজেও আজ বাসায় অবস্থান করব”।

সকালে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখা যায় যে, অন্যান্য দিনের থেকে সড়কে যানবাহনের চাপ কম। বিভিন্ন পরিবহণ চালকের সাথে কথা বলে জানা যায় যে, দুপুরের দিকে যানবাহনের সংখ্যা আরও কমে যাবে। আর রায়ে যদি বেগম জিয়ার সাজা হয় তাহলে সড়কে খুব একটা চলাচল করবে না গণপরিবহণগুলো। এছাড়াও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলো বেশ ফাকাই হয়ে আছে। 

তবে এত কিছুর মধ্যে আজ মিরপুরের শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে শুরু হবে বাংলাদেশ ও শ্রীলংকার মধ্যেকার দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচ। অনুষ্ঠিত হচ্ছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা।

উল্লেখ্য, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে বিদেশ থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই খালেদা জিয়াসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১০ সালের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়াসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপ-পরিচালক হারুন অর রশীদ।

এ মামলার ১২০ কার্যদিবসের বিচারকার্য শেষ হয়েছে ২৩৬ দিনে। সাক্ষ্য দিয়েছেন ৩২ জন। আত্মপক্ষ সমর্থনে গেছে ২৮ দিন। যুক্তি উপস্থাপন চলেছে ১৬ দিন। রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে ২৫ জানুয়ারি ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ মো. আখতারুজ্জামান আজ রায়ের জন্য দিন নির্ধারণ করেন।

  

 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি