ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪

আশা মিটলো ভাষা মতিনের গ্রামের মানুষের

স্বপন মির্জা-সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি 

প্রকাশিত : ২৩:২১, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০

দীর্ঘ প্রতিক্ষার পালা শেষে সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের উদ্যোগে গড়া দুটি শহীদ মিনারে আশা মিটলো ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিনের জন্মভুমিসহ তার দুই গ্রামের মানুষের।

৫২-এর পৃথিবীর আলোড়িত ভাষা আন্দোলনের পুরোধা ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিনের জন্ম ভুমি জেলার চৌহালী উপজেলার যমুনার দুর্গম শৈলজানা চর এবং ভাঙ্গনের কারণে পরবর্তীতে বসতি গড়া নদীর পশ্চিম পাড় শাহজাদপুর উপজেলার গুদিবাড়িতে ছিলনা দীর্ঘ দিন ধরে শহীদ মিনার। 

এ বিষয়ে এলাকাবাসীর দাবী নিয়ে গণ মাধ্যমে সংবাদ প্রচারের কারণে সাবেক মন্ত্রী সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ বিশ্বাস সাড়ে ৫ লাখ টাকা দিয়ে ২টি শহীদ মিনার তৈরী করে দিয়েছেন। তাই এবার উৎসাহ নিয়ে ক্ষনিকের শহীদ মিনারের পরিবর্তে পুর্নাঙ্গ শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে মহান ভাষা সৈনিকদের স্মরণ করবে তারা। 

জানা যায়, যার দৃঢ় নেতৃতে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ উর্দূকে প্রতিহত করা আন্দোলনে মায়ের ভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল, সেই সংগ্রামের আহবায়ক প্রয়াত ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিন। তার জন্মভুমি সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালীতে-এনায়েতপুরের এই জনপদে রয়েছে প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দেশে ভাষা প্রতিষ্ঠার গত ৫৫ বছরেও এখানে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পূর্ণাঙ্গ শহীদ মিনার ছিলনা। যে কারণে প্রতিবছর ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাঁশ ও কলাগাছের ক্ষনিকের শহীদ মিনার তৈরী করে শহীদদের শ্রোদ্ধাভরে স্মরণ করতো। 

বিশেষ করে আজীবন সংগ্রামী ভাষা মতিনের জন্মভুমি চৌহালীর ধুবুলিয়া-শৈলজানা চরে শহীদ মিনার ছিলনা বলে সবাই ব্যাথিত ছিল। এ নিয়ে ব্যাপক দাবির প্রেক্ষিতে ২০০৮ সালে প্রশিক্ষার চেয়ারম্যান কাজী ফারুকের সহযোগীতায় শৈলজানা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় চত্ত্বরে জাতীয় নকশাকৃত শহীদ মিনার এবং লাইব্রেরী নির্মাণ করে ভাষা মতিনকে দিয়েই ২১ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন করানো হয়। এরপর থেকে চরাঞ্চলের মানুষ এই শহীদ মিনারে নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে মাতৃভাষা দিবস পালন করে আসছিল। তবে দুর্ভাগ্যজনক গত ২০১৫ সালের ১ জুন ভাষা মতিনের গ্রামের সেই শহীদ মিনারটি যমুনায় বিলীন হয়ে যায়। এরপর থেকে এখানে ভাষা দিবস উদযাপনে আবারো কলা গাছের ক্ষনিকের শহীদ মিনারই ভরসা হয়। 

এদিকে জন্মভুমির ঘর-বাড়ি যমুনায় বিলীনে ১৯৬৯ সালের দিকে পাশের শাহজাদপুর উপজেলার গুদিবাড়িতে তিনি পরিবার নিয়ে বসতি গড়েন। সেখানেও শহীদ মিনার না থাকায় ক্ষনিকের শহীদ মিনার তৈরি ছাড়া শহীদদের স্মরণে উপায় ছিলনা এলাকাবাসীর। 

ভাষা প্রতিষ্ঠাতার এ দুই গ্রামে শহীদ মিনার না থাকায় এলাকাবাসীর বুক ফাটা দাবি নিয়ে গনমাধ্যমে সংবাদ প্রচারের কারণে নজরে আসে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের। পরে গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে পরামর্শক্রমে জেলা পরিষদ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে গুদিবাড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্তরে এবং শৈলজানা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২ লাখ টাকা ব্যয়ে তৈরী করা হয় শহীদ মিনার। বছর খানেক আগে তৈরী করা এই শহীদ মিনার পেয়ে এলাকাবাসীর বহু প্রতিক্ষিত স্বপ্ন পুরণ হয়েছে বলে জানালেন চৌহালীর শৈলজানা গ্রামের শিক্ষক মাসুদুর রহমান এবং শাহজাদপুরের গুদিবাড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোজাম্মেল হক ও স্বাস্থ্য সহাকারী আসাদুজ্জামান আসাদ। 

তারা জানান, বড়-বড় নেতা এমপিরা এখানে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য কথা দিয়েছিল। কিন্তু রাখেনি। আমাদের দীর্ঘ দিনের দাবি পুরণ হওয়ায় ভাষা মতিনের গ্রামবাসী হিসেবে উন্নয়ন দরদী লতিফ বিশ্বাসের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। গত বছর ২১ ফেব্রুয়ারীর কয়েক দিন আগে তৈরী হওয়ায় শহীদ মিনারের বেদি কাঁচা ছিল। এজন্য কিছুটা সমস্যা ছিল। এবার তা নেই। অনেক উৎসাহ নিয়ে এলাকার প্রতিজন নতুন শহীদ মিনারে বিনম্র শ্রোদ্ধা জানাবে। 

এ বিষয়ে প্রয়াত কিংবদন্তি ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিনের স্ত্রী গুলবদন নেছা মনিকা, ছোট ভাই গোলাম কিবরিয়া হান্নান জানান, শহীদ মিনার ২টি ছিল বহু প্রতিক্ষার। লতিফ বিশ্বাস প্রকৃতই দেশাত্ববোধ বুকে লালন করে। তাই তিনিই একমাত্র সকলের স্বপ্ন পুরণ করেছেন।  

এ বিষয়ে সাবেক মন্ত্রী ও সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ বিশ্বাস জানান, ভাষা মতিন ভাইকে নিয়ে আমরা গর্ব করি। তার জন্মভুমি ও গ্রামে শহীদ মিনার নেই জেনে আমিও ব্যাথিত ছিলাম। তাই সেখানে ২টি শহীদ মিনার তৈরী করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। তবে তা পরিচ্ছন্ন ও মর্যাদা রক্ষা করতে হবে এলাকাবাসীর।  

এসি

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি