ঢাকা, বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪

ইকরামুলের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন এখন হার্ডওয়ারের দোকানে

যশোর প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৭:৩৬, ৩ অক্টোবর ২০১৯ | আপডেট: ১৭:৩৮, ৩ অক্টোবর ২০১৯

শিশুশ্রম সমাজে একটি অপরাধমূলক ব্যাধি হলেও এর থেকে পরিত্রাণে কোনো কার্যকরি পদক্ষেপ চোখে পড়েনা। তাই অহরহ সমাজের বিভিন্ন কর্মস্থলে চোখে পড়ে শিশুশ্রমের অসংখ্য চিত্র।

সংসারে অভাব অনটন আর দরিদ্র পিতা-মাতার হাতে অর্থের যোগান দিতে বাধ্য হয়েই অনেক শিশুকে খুব অল্প বয়স থেকে শ্রম দিতে হয় বিভিন্ন পেশায়। যে বয়সে শিশুদের বই খাতা নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা সেই বয়সে শিশুরা তাদের কচি হাতে ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় শ্রম দিচ্ছে। 

যশোরের শার্শা উপজেলার নাভারণ বাজারের একটি হার্ডওয়ারে শ্রম দিচ্ছে ইকরামুল (১১) নামের এক শিশু। মাত্র এক হাজার টাকা মাসিক বেতনে চাকরি করছে সে। লেখাপড়া করার অধিক আগ্রহ থাকলেও পিতা-মাতার সংসারে অভাব, দারিদ্রতা তার লেখাপড়াকে থমকে দিয়েছে। দারিদ্রতার কষাঘাতে কোমলমতি শরীর নিয়ে কচি হাতে সে শ্রম দিচ্ছে একটি হার্ডওয়ার দোকানে। 

ইকরামুলের সংসারের বর্তমান অবস্থা ও তার অনিশ্চিত লেখাপড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সে জানায়, সংসারে চার ভাই বোনের মধ্যে সে ছোট। দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। হতদরিদ্র পিতা সংসারে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জোগাড় করতে করতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে বর্তমানে প্যারালাইস হয়ে শয্যাশায়ী। প্রায় বছর খানেক আগে তিনি অসুস্থ হয়ে প্যারালাইসে আক্রান্ত হন। অর্থাভাবে তার চিকিৎসার ব্যয়ভারও থেমে গেছে।

মেজো ভাই দুই হাজার টাকা বেতনে একটি ওয়ার্কশপে শ্রম দিচ্ছে। ইকরামুলের থেকে মাত্র দুই বছরের বড় সে। দুই ভাইয়ের তিন হাজার টাকায় না খেয়ে, না পরে কোনো মতে দিন পার হচ্ছে তাদের সংসার। একদিকে লেখাপড়া শেখার অদম্য ইচ্ছা, অন্যদিকে সংসারের বর্তমান চিত্র ও দৈন্যদশার কারণে মানষিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে ইকরামুল। 

আধো আধো কন্ঠে বলে, আমি লেখাপড়া শিখে ডাক্তার হতে চাই-যেন কেউ অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় ধুকে ধুকে না মরে। কিন্তু আমি কিভাবে লেখাপড়া চালাবো বুঝতে পারিনা। ইকরামুলের লেখাপড়ার হাতেখড়ি তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। এরপর থেকে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে তাকে। অস্বচ্ছল আর দারিদ্রের জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বেড়েই চলেছে এমন শিশুশ্রমের সংখ্যা।

জীবিকার তাগিদে জীবনের শুরুতেই কোমলমতি শিশুরা মুখোমুখি হচ্ছে এমন কঠিন বাস্তবতার সঙ্গে। পরিবারকে দু‘মুঠো অন্ন আর অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনের জন্য এভাবে বদলে যাচ্ছে আগামীর ভবিষ্যত প্রজন্ম, ভবিষ্যতের বড় মানুষ হওয়ার সংখ্যা। 

ইকরামুল জানায়, সমাজের বিত্তবান ও হৃদয়বান ব্যক্তিরা যদি আমাকে সাহায্য করতো তাহলে আমার সংসার ও লেখাপড়া চালাতে পারতাম। ইকরামুল যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার নাভারণ বেলের মাঠ দেউলি গ্রামের কামরুলের ছেলে।

আই/এসি
 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি