ইরান হামলার আগেই ইসরায়েলকে গোপনে শত শত ক্ষেপণাস্ত্র দেয় আমেরিকা
প্রকাশিত : ১২:০৬, ১৪ জুন ২০২৫

ইরানের ওপর ইসরায়েলের নজিরবিহীন হামলার মাত্র তিন দিন আগে গোপনে প্রায় ৩০০টি হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র। এই সামরিক সহায়তা দেওয়া হয় এমন এক সময়, যখন ওয়াশিংটন প্রকাশ্যে তেহরানের সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনার আগ্রহ দেখাচ্ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের সময় এ সরবরাহ সম্পন্ন হয়। যদিও তখন প্রশাসন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং কূটনৈতিক সংলাপকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে বলেই জানানো হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়াতে এই অস্ত্র সহায়তা ছিল এক বড় ভূমিকা।
গত শুক্রবার ইরানের ওপর নজিরবিহীন হামলার আগে ইসরায়েলকে গোপনে শত শত হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই-এর (এমইই) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, হামলার ঠিক তিন দিন আগে, গত মঙ্গলবার, ইসরায়েলকে প্রায় ৩০০টি হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও তখন ট্রাম্প প্রশাসন প্রকাশ্যে জানায়, তারা ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনায় আগ্রহী।
মার্কিন দুই কর্মকর্তা এমইইকে জানান, এত বড় মাত্রায় ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ থেকে ধারণা করা যায়, ইরানে হামলার পরিকল্পনা সম্পর্কে আগে থেকেই অবগত ছিল ট্রাম্প প্রশাসন।
শুক্রবারের হামলার আগে যুক্তরাষ্ট্রের এই অস্ত্র পাঠানোর ঘটনা এতদিন প্রকাশ্যে আসেনি।
শুক্রবার দু'জন মার্কিন কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানায়, ইরানের দিক থেকে ছোড়া কিছু ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের দিকে চলে আসছিল, সেগুলো ভূপাতিত করতে সহায়তা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
হেলফায়ার হলো লেজার-নির্দেশিত আকাশ-থেকে-মাটিতে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে বোমা ফেলার জন্য এগুলো কার্যকর না হলেও, নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে নিখুঁতভাবে আঘাত হানার জন্য যথেষ্ট উপযোগী।
শুক্রবার ইরানে চালানো হামলায় শতাধিক যুদ্ধবিমান ব্যবহার করেছে ইসরায়েল। নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত করে হামলা চালানো হয় সামরিক কর্মকর্তাদের বাসভবন, গবেষণা স্থাপনা ও কমান্ড সেন্টারে।
এক মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা এমইই-কে বলেন, 'হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের সুনির্দিষ্ট সময় ও প্রেক্ষাপট থাকে। ইসরায়েলের জন্য এবার তা ছিল যথোপযুক্ত।'
ওই হামলায় ইরানের বহু শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন।
নিহতদের মধ্যে ছিলেন ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) প্রধান মেজর জেনারেল হোসেন সালামী, সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি এবং সর্বোচ্চ নেতা খামেনির ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা আলি শামখানি।
মিডল ইস্ট আই জানায়, ট্রাম্প প্রশাসন মাসের পর মাস ধরেই ইসরায়েলের এই হামলার পরিকল্পনার বিষয়ে জানত।
গত এপ্রিল ও মে মাসে সিআইএ-কে ইরানে পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে একতরফা হামলার পরিকল্পনা সম্পর্কে জানানো হয়। ইসরায়েলের 'টার্গেট সিস্টেমস অ্যানালাইসিস' এবং সাইবার আক্রমণ ও সুনির্দিষ্ট হামলার কৌশল সম্বলিত যুদ্ধ পরিকল্পনা ট্রাম্প প্রশাসনকে 'মুগ্ধ' করেছিল।
তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ট্রাম্পের অবস্থান দেখে বিশ্লেষকদের একাংশ এবং সম্ভবত ইরানও ধরে নেয়, নেতানিয়াহুর প্রকাশ্য চাপ থাকা সত্ত্বেও ট্রাম্প ইরানে হামলায় সায় দিতে রাজি হবেন না।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস শুক্রবার এক প্রতিবেদনে জানায়, ইসরায়েলি দুই কর্মকর্তার দাবি অনুযায়ী, বাইরে থেকে ইরানে হামলার বিরোধিতা করলেও তা ঠেকানোর কোনও পদক্ষেপ নেয়নি ট্রাম্প প্রশাসন।
পরবর্তীতে ট্রাম্প বলেন, তার প্রশাসন ইরানকে নতুন পারমাণবিক চুক্তিতে সম্মত হওয়ার জন্য ৬০ দিনের সময়সীমা দিয়েছিল।
ইসরায়েলি গণমাধ্যম জানায়, সময়সীমাটি নির্ধারিত হয়েছিল ২০২৫ সালের মার্চে। যুক্তরাষ্ট্র-ইরান আলোচনা শুরু হয় ১২ এপ্রিল। অর্থাৎ, হামলা চালানো হয় ঠিক এর ৬১ দিন পর।
আলোচনায় সবচেয়ে বড় অচলাবস্থা সৃষ্টি হয় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ইস্যুতে। যুক্তরাষ্ট্র চায় ইরান পুরোপুরি এটি বন্ধ করুক, কিন্তু তেহরান জানিয়ে দেয়—স্বল্পমাত্রায় সমৃদ্ধকরণের অধিকার তাদের জন্য অপরিহার্য।
এই আলোচনার পুরো সময়জুড়ে ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রাখে যুক্তরাষ্ট্র। মিডল ইস্ট আইকে মার্কিন দুই কর্মকর্তা জানান, এসব অস্ত্র হস্তান্তরের বিষয়টি আলাদাভাবে প্রকাশ করা হয়নি, কারণ তা চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে কংগ্রেস অনুমোদিত ৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের একটি অস্ত্রচুক্তির অংশ ছিল।
এই চুক্তির আওতায় বোমা, ক্ষেপণাস্ত্র ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহের অনুমোদন আগেই দেওয়া হয়।
এমবি//
আরও পড়ুন