ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪

এনু-রুপনের কত সম্পদ?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:৫৩, ১৫ জুলাই ২০২০

এনামুল হক এনু ও রুপন ভুঁইয়া। ক্যাসিনোকাণ্ডে আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা দুই ভাই। ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সেক্রেটারি জয়গোপাল সরকারের হাত ধরেই ক্যাসিনো বাণিজ্যে প্রবেশ করেন তারা। এ রাজ্যে ঢুকেই মাত্র পাঁচ বছরে টাকার কুমির বনে যান এই দুই ভাই। বিভিন্ন সময়ের অভিযানে দেখা গেছে, ৯১টি ব্যাংক হিসাবে ২০৮ কোটি ৪৪ লাখ ১১ হাজার ৬৫০ টাকা লেনদেন করেছেন তারা। 

এক সপ্তাহের মধ্যেই এনু-রুপনের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনের চারটি মামলায় অভিযোগপত্র দেয়া হচ্ছে। পুরান ঢাকা থেকে জয়গোপালকে গ্রেফতারের কথা জানিয়ে সিআইডি এ তথ্য দিয়েছে।

২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এনু ও একই কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুপনের অঢেল সম্পদের খোঁজ মেলে। সিআইডি বলেছে, মতিঝিলের ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক স্বর্ণ ব্যবসায়ী জয়গোপাল সরকারের হাত ধরে ২০১৪ সালে জুয়ার ব্যবসায় নামে ক্যাসিনো ব্রাদার নামে পরিচিত এনু-রুপন। এনু-রুপনের স্বীকারোক্তিতেও উঠে আসে জয় গোপালের নাম। ৯ মাস গাঢাকা দিয়ে থাকার পর জয় গোপালকে পুরান ঢাকা থেকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। জিজ্ঞাসাবাদে ক্যাসিনো বাণিজ্যের আরও অজানা তথ্য জানা যাবে বলে আশা করছে সংস্থাটির।

সিআইডি’র অর্গানাইজ ক্রাইম বিভাগের ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ বলেছেন, ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের অভিযানে বেশ কিছু এজেন্টকেও ধরেছি। তাদেরও অভিযোগপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এরাও ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে এবং সেখানেও জয়গোপালের নাম এসেছে।

সিআইডি বলেছে, জয়গোপালের হাত ধরে পাঁচ বছরেই ১২৮টি ফ্ল্যাট, ২০টি বাড়ির মালিক হন এনু-রুপন। এছাড়া কেরানীগঞ্জে ১৫ কাঠা, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখানে ১০ কাঠা, শরীয়তপুরের নড়িয়ায় ১২ শতাংশ, পালং থানায় ৩৪ শতাংশ জমির সন্ধান পাওয়া গেছে। তারা ৯১টি ব্যাংক হিসাবে লেনদেন করেছেন ২০৮ কোটি ৪৪ লাখ ১১ হাজার ৬৫০ টাকা। এখনও ওইসব হিসাবে আছে ১৯ কোটি টাকা। পুরান ঢাকার বংশাল, ইংলিশ রোড, নয়াবাজার, মতিঝিল, শান্তিনগর, গুলশান, ধোলাইখাল, নবাবপুর এলাকায় সাতটি বেসরকারি ব্যাংকে এসব টাকা লেনদেন হয়। মানিলল্ডারিং আইনে চারটির অভিযোগপত্র দেয়া হবে এক সপ্তাহের মধ্যেই। ক্যাসিনোকাণ্ডের মোট ১১টি মামলা তদন্ত করছে সিআইডি।

সিআইডি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, জয়গোপাল ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের একজন ফুটবলার ছিলেন। অবসরে গিয়ে পরিচালনা পর্ষদের সদস্য এবং দুই বছর ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালে ক্লাবের সেক্রেটারি হওয়ার পর এনু-রুপনের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন এবং ক্লাবে ক্যাসিনো পরিচালনায় দুই ভাইকে সহযোগিতা করেন। সিআইডি জানায়, এনু-রুপনের বাবা সিরাজুল ইসলামও জুয়াড়ি ছিলেন। সদরঘাটেই ছিল তাদের জুয়ার আড্ডা। সেখানেই তাদের পেশাদার জুয়া কার্যক্রমের শুরু।

উল্লেখ্য, অবৈধ ক্যাসিনোর ব্যবসা করে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক এনু ও তার ভাই রুপন ভূঁইয়া। তাদের ছিল কোটি কোটি টাকা, আলিশান গাড়ি-বাড়ি, স্বর্ণ গয়না ও আগ্নেয়াস্ত্র। এদের এতই টাকা যে, সেগুলো রাখার জায়গা না পেয়ে স্বর্ণ কিনতেন।

গত বছর ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানের পর থেকেই পলাতক ছিলেন এই দুই ভাই। পরবর্তিতে তাদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে তাদের গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ওই সময় তাদের কাছে থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা ও স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়। 

২০১৮ সালে রাজধানীর গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতির পদ পান এনামুল হক এনু। আর রুপন একই থানার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ পান। 

স্থানীয় লোকজন জানান, রাজনৈতিক পদ-পদবি ব্যবহার করে নির্বিঘ্নে জুয়া ও ক্যাসিনো ব্যবসা করে আসছিলেন তারা। এনু ছিলেন ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের পরিচালক। পরে তাদের আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

এছাড়া গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর পুরান ঢাকায় এনু-রুপন এবং তাদের দুই সহযোগীর বাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব। সে সময় তাদের বাসা থেকে পাঁচ কোটি ৫ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। এছাড়া আট কেজি স্বর্ণ ও ৬টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
এসএ/
 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি