ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪

কণ্ঠশিল্পী আসিফের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ (ভিডিও)

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:৩৭, ৬ জুন ২০১৮ | আপডেট: ১০:৫০, ৬ জুন ২০১৮

জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবর। মঙ্গলবার মধ্যরাতে গ্রেফতার করা হয়েছে তাকে। এফডিসির পার্শ্ববর্তী নিজ স্টুডিও থেকে এই সঙ্গীত তারকাকে গ্রেফতার করা হয়। তেজগাঁও থানায় তথ্য প্রযুক্তি আইনে দায়ের করা একটি মামলায় সিআইডি’র একটি টিম তাকে গ্রেফতার করে। সোমবার সন্ধ্যায় প্রতারণার অভিযোগ এনে মামলাটি করেন অপর এক সঙ্গীত শিল্পী শফিক তুহিন। আজ বুধবার আসিফ আকবরকে আদালতে সোপর্দ করা হবে।

মামলার এজাহারে শফিক তুহিন অভিযোগ করেছেন, গত ১ জুন আনুমানিক রাত ৯টার দিকে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল (চ্যানেল ২৪-এর সার্চ লাইট) নামের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, আসিফ আকবর তার অনুমতি ছাড়াই তার সংগীতকর্মসহ অন্যান্য গীতিকার, সুরকার ও শিল্পীদের ৬১৭টি গান সবার অজান্তে বিক্রি করেন। বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করে তিনি জানতে পারেন, আসিফ আকবর আর্ব এন্টারটেইনমেন্টের চেয়ারম্যান হিসেবে বিভিন্ন মাধ্যমে গানগুলো ডিজিটাল রূপান্তরের মাধ্যমে ট্রু-টিউন, ওয়াপ-২, রিংটোন, পিআরবিটি, ফুলট্রেক, ওয়াল পেপার, অ্যানিমেশন, থ্রি-জি কন্টেন্ট ইত্যাদি হিসেবে বাণিজ্যিক ব্যবহার করে অসাধুভাবে ও প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল অর্থ উপার্জন করেছেন। পরে ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি গত ২ জুন রাত ২টায় তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ‘অনুমোদন ছাড়া গান বিক্রির এই ঘটনা’ উল্লেখ করে একটি পোস্ট দেন। তার ওই পোস্টের নিচে আসিফ আকবর নিজের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে অশালীন মন্তব্য ও হুমকি দেন।

তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে, পরের দিন রাত ৯টা ৫৯ মিনিটে আসিফ আকবর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে লাইভে আসেন। এ পেজ অনুসরণ করেন ৩১ লাখেরও বেশি মানুষ। ৫৪ মিনিট ৩৪ সেকেন্ড লাইভ ভিডিওর ২২ মিনিট থেকে তার বিরুদ্ধে অবমাননাকর, অশালীন ও মিথ্যা-বানোয়াট বক্তব্য দেন আসিফ। ভিডিওতে আসিফ আকবর তাকে (শফিক তুহিন) শায়েস্তা করবেন এ কথা বলার পাশাপাশি ভক্তদের উদ্দেশে বলেন, তাকে যেখানেই পাবেন সেখানেই প্রতিহত করবেন। এই নির্দেশনা পেয়ে আসিফ আকবরের ভক্তরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে হত্যার হুমকি দেয়। আসিফ আকবরের এই বক্তব্য লাখ লাখ মানুষ দেখেছে। তিনি উসকানি দিয়েছেন। এতে তার (শফিক তুহিন) মানহানি হয়েছে। বিষয়টি সংগীতাঙ্গনের সুপরিচিত শিল্পী, সুরকার ও গীতিকার প্রীতম আহমেদসহ অনেকেই জানেন বলেও উল্লেখ করেছেন শফিক তুহিন।

প্রসঙ্গত- গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে তল্লাশির সময় আসিফ আকবরের স্টুডিওতে এক বোতল টাকিলা আর এক কেস হানিকেন বিয়ার পাওয়া যায়। তবে তিনি তার মদ্যপানের লাইসেন্স আছে বলে জানান। তিনি কর্মকর্তাদের এ-সংক্রান্ত লাইসেন্সের একটি কপিও দেখান। সিআইডির কর্মকর্তারা লাইসেন্সটি যাচাই করার জন্য একটি কপি নিয়ে গেছেন।

উল্লেখ্য, শুরুর দিকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ পায় যে- প্রীতম আহমেদ, শফিক তুহিন ও রবিউল ইসলাম জীবন- গানের জনপ্রিয় এই তিনজনকে বয়কট করার ঘোষণা দিয়েছেন আসিফ আকবর। সেইসঙ্গে যে সব কোম্পানি এই তিন গীতিকার, সুরকার ও কণ্ঠশিল্পীর সঙ্গে কাজ করবেন সে কোম্পানির জন্য কোনো গান গাইবেন না বলেও জানান তিনি।

ঠিক একই ভাবে তার (আসিফ আকবর) এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন প্রীতম আহমেদ, শফিক তুহিন। তারা প্রত্যেকেই জানান- আসিফ কি বয়কট করবে আমরাই তাকে অনেক আগে বয়কট করেছি।

প্রসঙ্গেত গত শনিবার রাত ১০টায় আসিফ তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে লাইভে এসে তার নতুন গানের খবরা খবর জানান। সেইসঙ্গে তার বিরুদ্ধে স্বাক্ষর জালিয়াতি করে গানের মাধ্য কোটি কোটি টাকা আয় করে তা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ নিয়ে মুখ খোলেন।

আসিফ তার ভিডিওতে প্রীতম ও শফিক তুহিনদের সমালোচনা করে বলেন, ‘গানের আঙিনা সুন্দর মানুষদের জন্য। এখানে কোনো নর্দমার কীট রাখা যাবে না। সিটি করপোরেশন দিয়ে সেইসব কীট পরিষ্কার করা হবে। প্রীতম মিথ্যেবাদি, প্রতারক। সে দাবি করে চ্যানেল আইয়ের প্রযোজক সে। মিথ্যে কথা। মিথ্যে পরিচয় দিয়ে সে মানুষকে ঠকায়। আর শফিক তুহিন কৌশলী। আমার হাত দিয়ে তার উত্থান। আমার সঙ্গেই বেঈমানী করে বেড়াচ্ছে। কোনো প্রমাণ ছাড়াই আমাকে অভিযুক্ত করছে। এ ধরনের ক্ষতিকরদের থেকে সবার সাবধান থাকা উচিত। আর রবিউল ইসলাম জীবন এই সেদিন প্রথম রোজার দিনও আমার বাসায় ইফতার করে গেছে। সেই জীবন পল্টি নেয়। ও সবাইকে ম্যানেজ করতে করতে ব্যক্তিত্বহীন হয়ে গেছে। নোয়াখালীর কলঙ্ক জীবন।

তিনি প্রীতম আহমেদ ও শফিক তুহিনের অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে এর পক্ষে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন। সেইসঙ্গে এই দুজনকে অকৃতজ্ঞ বলেই তুলে ধরেন। তাদের সঙ্গে গীতিকার রবিউল ইসলাম জীবনকেও অকৃতজ্ঞ অভিহিত করেন।

তিনি এই তিনজনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘প্রীতম, শফিক ও জীবনের সঙ্গে কোনো কোম্পানি কাজ করলে আমি তাদের সঙ্গে কোনো কাজ করবো না। আমি মিডিয়ার সবাইকে সাবধান করতে চাই এদের ব্যাপারে।

আসিফ বলেন, ‘আমি আট বছর গান থেকে দূরে ছিলাম। আবার ফিরে এসেছি। চুটিয়ে কাজ করছি। এটাই সবার মাথাব্যাথার কারণ। আমার প্রতি হিংসা থেকেই মিথ্যে তথ্য দিয়ে আমাকে ছোট করা হচ্ছে। এতদিন চুপ ছিলাম। কিন্তু এবার বাড়াবাড়িটা বেশি হচ্ছে। তাই মুখ খুলতে হলো।

এদিকে গত ২ জুন জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী জনপ্রিয় গীতিকার, সুরকার ও সংগীত শিল্পী শফিক তুহিন তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি লিখেছেন-

এভাবে অনুমতি ছাড়া ও স্বাক্ষরবিহীনভাবে অধিকার হরণ করে শুধু গীতিকার সুরকারদের অর্থ আত্মসাতই করেনি; জীবিত থাকতেই আমার মতো সব সৃষ্টিশীল মানুষদের মেধাস্বত্বকে করেছে ভীষনভাবে অপমান। এই যদি হয় স্বঘোষিত অডিও যুবরাজের অনৈতিক কর্মকান্ড তাহলে সত্যিকার অর্থে এদেশে সংগীতের ভবিষ্যত কোথায়!!? আর এরকম বন্চনার জন্যই একসময় শিল্পীদের নাম ওঠে দু:স্হ শিল্পীর তালিকায়!!’

দেশের শীর্ষ এই সঙ্গীত তারকাদের দ্বন্দ্ব ও পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের সূত্র ধরে কথা হয় জনপ্রিয় গীতিকার, সুরকার ও সংগীত শিল্পী শফিক তুহিনের সঙ্গে।

তিনি ওই সময় ইটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আসিফ আকবর আমাকে কি বয়কট করবে, আমিই তাকে ২০০৫ সালে বয়কট করেছি। তার সঙ্গে কোন কাজ করার প্রশ্নই ওঠে না। নিজেকে তিনি সঙ্গীতের যুবরাজ বলেন-কিন্তু কি নোংরামি তিনি করছেন? এভাবে লাইভে এসে মিথ্যা, বানোয়াট কথা প্রচার করে বেড়াচ্ছে। এমনকি তার পক্ষ থেকে আমাকে বহুবার হুমকিও দেওয়া হয়েছে।

শফিক তুহিন আরও বলেন, ‘আমি স্পষ্ট ভাবে বলছি- আমার যদি কখনও কিছু হয় তবে সে জন্য দায়ি থাকবে এই যুবরাজ। কারণ আমাকে সে ও তার ভক্তনামের সন্ত্রাসীরা বারবার প্রাণনাষের হুমকি দিচ্ছে। আমি সরকারকে এ বিষয়ে জানিয়ে রাখতে চাই।

ঠিক একই ভাবে গায়ক-গীতিকার, সঙ্গীত সুরকার, কবি প্রীতম আহমেদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়ে ইটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আপনারা শুধু একজনকে হিরো বানিয়ে দিচ্ছেন। ভেতরের খবর কি জানেন? আমি ১২ বছর আগে আসিফকে বয়কট করেছি। সে কি বয়কট করবে। তার সঙ্গে কাজ না করলে কি আমার কাজ থেমে যাবে।

তিনি আরও বলেন, ‘সে যা করছে তা অনৈতিক, মিথ্যাচার ও অন্যায়। ১২ বছর আগে সাংবাদিক মতিউর রহমান এর সামনে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে- আগামীতে আসিফের সঙ্গে আর কাজ করব না। এখন সে বড় বড় কথা বলে বেড়াচ্ছে। সে সবার সঙ্গে প্রতারণা করছে।

এসএ/

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি