ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৯ মার্চ ২০২৪

করোনা নিয়ন্ত্রণে আশার আলো

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:৩২, ২৮ মার্চ ২০২০ | আপডেট: ১৭:১৩, ২৮ মার্চ ২০২০

করোনা জ্বরে কাঁপছে বিশ্ব। ঘরের মধ্যে পুরো পৃথিবীর মানুষ। সবার একত্রিত প্রচেষ্টা এই যুদ্ধে জয়ী হওয়া। ইউরোপের কয়েকটি দেশে মহামারি আকার ধারণ করলেও অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে এশিয়ার দেশগুলো। এমনকি উৎপত্তিস্থল চীনও সফল হয়েছে ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে আনার। সেই সঙ্গে যার যার স্থান থেকে গবেষণা ও প্রচেষ্টায় এগিয়ে চলছে ভাইরাসটি নির্মূলের ভ্যাক্সিন আবিস্কারের কাজ। অনেকে সফলতার আলো দেখছেন।

ভাইরাসের উৎস চীনে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে এই মহামারি। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন সংক্রমণ বা মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। এর আগের দিন সেখানে নতুন রোগী পাওয়া গিয়েছিল মাত্র ৫৫ জন, মারা গিয়েছিলেন পাঁচজন।

নেপালে এখন পর্যন্ত কোন মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেনি। আজ শনিবার পর্যন্ত দেশটিতে নভেল করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত মোট রোগী পাওয়া গেছে মাত্র চার জন।

তাইওয়ানে করোনা ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা অনেক কম। অথচ উহানের খুব কাছে হওয়ায় সেখানে ভাইরাস মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি ছিল। কিন্তু দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাইওয়ান ভাইরাসকে আটকে দিতে সক্ষম হয়েছে। তাইওয়ান সম্ভাব্য সংকটের ভয়াবহতা আগেই বুঝতে পেরেছিল এবং ভাইরাসের চেয়ে এগিয়ে থাকতে সক্ষম হয়েছে।

যে চীনে করোনা ছড়ানোর পরেই অনলাইন এবং সোশ্যাল মিডিয়া তারা গুজব ছড়ায় যে, দক্ষিণ তাইওয়ানে ট্রাকে ট্রাকে লাশ চুল্লিতে নিয়ে গিয়ে পোড়ানো হচ্ছে। এই গুজব ঠেকানোর জন্যে তাইওয়ানের টিভি এবং রেডিও-গণমাধ্যম খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এবং করোনা ভাইরাস কীভাবে ছড়ায়, সংক্রমণ ঠেকানোর উপায় কী- এটা তারা খুব ইতিবাচকভাবে প্রচার করে। ফলে মানুষ আতঙ্কিত না হয়ে আশ্বস্ত হয় এবং সময়মতো কার্যকরী পদক্ষেপ তারা নিয়েছে।

একই সঙ্গে বাংলাদেশে নতুন করে নভেল করোনা ভাইরাসের কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি। অপরদিকে সুস্থ হয়েছেন আরও চারজন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে কারও মৃত্যু বা আক্রান্তের তথ্য না আসায় আক্রান্তের সংখ্যা ৪৮ এবং মৃতের সংখ্যা আগের মতই পাঁচজন।

অপরদিকে, দক্ষিণ কোরিয়ার কোভিড -১৯ সংক্রমণের হার দুই সপ্তাহ ধরে কমছে। যথাযথ পরীক্ষা-ব্যবস্থা এবং জনসাধারণের সঠিক তথ্যপ্রদানের কল্যাণেই এ সফলতা এসেছে।

কিন্তু এসব কিছুর মাঝে কোন কোন ভুল তথ্য ও কল্পনা মানুষের মধ্যে আরও বেশি আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। যখন চারপাশে বিভ্রান্তি থাকে, ভুলের ছড়াছড়ি থাকে, আতঙ্কের ছড়াছড়ি থাকে, তখন মানুষ আশ্বস্ত হতে চায়। 

ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন স্কুল অব মেডিসিনের এক দল গবেষক সম্প্রতি প্রকাশ করে যে- মহামারী করোনা ভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রে আগামী ৪ মাসে ৮১ হাজার মানুষের মৃত্যু হতে পারে। আর জুনের আগে ভাইরাসটির প্রকোপ নাও কমতে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা। যা বাস্তবতার সাথে কোন মিল নেই।

একই ভাবে যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম ডেইলি স্টার জানায়, সারা বিশ্বের জন্য আতঙ্ক হয়ে ওঠা করোনা ভাইরাসের থাবায় লন্ডনে ৪০ হাজার মানুষ মারা যেতে পারে। আর মৃতদের সৎকারের জন্য গণকবরের ব্যবস্থা করা হবে। সম্প্রতি এসব বিষয় নিয়েই লন্ডন কর্তৃপক্ষের একটি পরিকল্পনা ফাঁস হয়েছে। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) হিসাবে, ভারতে মে মাসের মধ্যে মারা যাবে অন্তত ৩০ হাজার মানুষ। আক্রান্ত হবে ১০ লাখের কাছাকাছি। আর মে মাসের শেষ বা জুনের প্রথম দিকে দেশটির হাসপাতালগুলোতে কোনো সিট খালি থাকবে না। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্ট জানায়, জৈব-পরিসংখ্যানবিদদের একটি দল প্রিডেকটিভ মডেল ব্যবহার করে ভারতের চিত্র আরও ভয়াবহ বলে জানিয়েছে। তারা বলছে, নিহতের সংখ্যা ডব্লিউএইচও’র পূর্বাভাসকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। আর করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ মে’র মধ্যে ১০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে।

কিন্তু এসব তথ্যের কোন ভিত্তি নেই। এতে আরও আতঙ্ক ছড়িয়ে মানুষের মধ্যে ভয় সৃষ্টি করা হয়েছে বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন।

বরং আশার কথা হচ্ছে- করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করতে বিজ্ঞানীদের গবেষণায় আরও অগ্রগতি এসেছে। এরই মধ্যে জার্মানি এ ভাইরাস পরীক্ষার কিট আবিষ্কার করে ফেলেছে। অস্ট্রেলিয়াও একটি ভ্যাকসিন আবিষ্কারে অনেক দূর এগিয়েছে। চীন সম্প্রতি ভল্লুকের পিত্ত ব্যবহার করে একটি গবেষণা চালাচ্ছে।

জার্মানির বিখ্যাত রবার্ট বোচ জিএমবিএইচ কোম্পানি করোনাভাইরাস পরীক্ষার নতুন কিট আবিষ্কার করেছে। জার্মান এই কোম্পানি বলছে, নতুন কিটের মাধ্যমে দুদিনে নয়; মাত্র আড়াই ঘণ্টার মধ্যে রোগীর শরীরে করোনার উপস্থিতি আছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যাবে।

রবার্ট বোচ জিএমবিএইচ কোম্পানির স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ নতুন এই কিট আবিষ্কার করেছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন হাসপাতাল, ল্যাবরেটরি এবং মেডিকেলে তাদের তৈরি এই কিটের পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু হয়েছে।

এছাড়া মিডল ইস্ট নর্থ আফ্রিকা ফিনান্সিয়াল নেটওয়ার্ক ও মিন্ট প্রেস নিউজ দাবি করছে, ইন্টারফেরন আলফা টু-বি' নামে পরিচিত কিউবার এক ওষুধ করোনার মুক্তিতে ব্যাপক কাজ করছে। চীনের চিকিৎসকরা করোনা আক্রান্তদের সুস্থ করে তুলতে এই ওষুধটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেছেন। এটি ব্যবহার করে এক হাজার পাঁচশোরও বেশি রোগীকে সুস্থ করে তুলেছেন তারা। করোনা রোগ প্রতিরোধের জন্য চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের নির্বাচিত ৩০টি ওষুধের মধ্যে অন্যতম এটি।

গণমাধ্যম দু’টির দাবি, ১৯৮৬ সালের দিকে কিউবার সেন্টার ফর জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি (সিআইজিবি) এই ওষুধটি আবিষ্কার করে। জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় এই ওষুধটির ব্যবহার চালু হওয়ার পর থেকে হাজার হাজার কিউবার রোগী সুস্থ হয়েছেন। 

এছাড়া কোভিড-১৯ এর চিকিৎসার জন্য নতুন এক পদ্ধতি আশার আলো দেখাচ্ছে। এ ভাইরাসের চিকিৎসায় নতুন ব্লাড-প্লাজমা থেরাপি সহায়ক হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ইয়ান লিপকিন।

এ পদ্ধতিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে ওঠা কোনো ব্যক্তির শরীর থেকে অ্যান্টিবডি নিয়ে তা ১০ জনের দেহে প্লাজমা থেরাপির মাধ্যমে প্রয়োগ করা হয়। তারা সবাই এখন সুস্থ আছেন।

সব মিলিয়ে আশার কথা হচ্ছে বিশ্ব যে কঠিন সময় অতিক্রম করছে তা কাটিয়ে ওঠা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। 

এসএ/

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি