ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪

কষ্টে আছেন সৌদিতে বাংলাদেশী প্রবাসীরা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:২০, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯

এশিয়ার অন্যতম প্রাকৃতিক তেল সমৃদ্ধ দেশ সৌদি আরবে বাংলাদেশী প্রবাসীরা বেশ কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। এর মধ্যে চলতি সপ্তাহে দেড় শতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশীদেরকে ফেরত পাঠিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। ফেরত আসা কর্মীদের অভিযোগ, বৈধ কাগজপত্র থাকার পরও তাদেরকে গ্রেফতার করে দেশে পাঠানো হয়েছে। 

সৌদি আরব প্রশাসনের ধরপাকড়ের শিকার হয়ে রবিবার রাতে দেশে ফিরেছেন ১৭৫ প্রবাসী কর্মী। খালি হাতে ফেরা এসব কর্মীদের কারও ছিল খালি পা, কেউ আবার কাজের পোশাক পরেই বিমানে উঠেছেন। সৌদি প্রশাসন প্রতিদিন শত শত বিদেশি কর্মীকে গ্রেফতার করছে। রিয়াদ ডিপোর্টেশন ক্যাম্পে এখনও হাজার খানেক বাংলাদেশি রয়েছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

জানা যায়, মরুর এ দেশে ভাগ্য বদলের চেষ্টায় আসা কর্মীরা ভালো নেই। অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীদের নেই কাজ, নেই থাকার জায়গাও। অনাহার ও অর্ধাহারে অনেকেই দিন কাটাচ্ছেন। বিশ্ব বাজারে তেলের দর পতনের কারনে সৌদিতে অর্থনৈতিক মন্দা, যুদ্ধবিগ্রহ, প্রতিবেশি রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের টানাপড়েন, সেই সঙ্গে জঙ্গি গোষ্ঠীর হামলার ফলে সৌদি আরবে কর্মসংস্থান ক্রমেই সংকুচিত হয়ে এসেছে, আর্থিক সংকটের মুখে বন্ধ হয়ে গেছে অনেক বড় বড় কোম্পানি, তার সাথে সৌদিকরণ নীতি প্রবাসীদের সংকট আরও ঘনীভূত করে তুলেছে।

সৌদিতে ভাগ্য বদল করতে গিয়েছিলেন চাঁদপুরের বাবুল হোসেন। তিনি একটি জাতীয় দৈনিককে বলেন, সৌদিতে ছয় মাসের বৈধ আকামা (কাজের অনুমতিপত্র) থাকার পরও কর্মস্থল থেকে ধরে তাকে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার কোনো কথা শোনেনি দেশটির প্রশাসন। ভাগ্য বদল করতে বিদেশে গিয়ে এমন দুর্দশা নিয়ে ফেরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না চাঁদপুরের বাবুল হোসেন। 

তার অভিযোগ, সৌদিতে ছয় মাসের বৈধ আকামা (কাজের অনুমতিপত্র) থাকার পরও কর্মস্থল থেকে ধরে তাকে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার কোনো কথা শোনেনি দেশটির প্রশাসন।

টাঙ্গাইলের আলিম ও মনির হোসেন, নরসিংদীর মো. জোবাইর, লক্ষ্মীপুরের ফরিদ, মুন্সিগঞ্জের শরিফ হোসেন ও মেহেরপুরের সেলিম রেজাসহ অনেকের অভিযোগ, বৈধ আকামা থাকা সত্ত্বেও তাদের জোর করে ধরে জেলখানাতে নিয়ে যাওয়া হয়। অনেকক্ষেত্রে মালিকপক্ষ আকামা নবায়ন করেনি বা তা বাতিল করে শ্রমিকদের দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে জানিয়ে তারা বলেন, এক্ষেত্রে সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাস তাদের কোনো সহযোগিতা করেনি। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এখনই ব্যবস্থা নেওয়া না হলে সমস্যাটি বড় আকার ধারণ করবে বলে জানান তারা।

মধ্যপ্রাচ্যসহ যেসব দেশে বাংলাদেশের শ্রমিকরা কাজ করতে যান তাদের বেশিরভাগেরই অভিযোগ থাকে যে, তারা সেখানকার দূতাবাস থেকে ন্যূনতম সহায়তাটুকু পান না। পাঁচ মাস আগে সৌদি আরবে কাজ করতে গেলেও দেশটির আবহাওয়া এবং কাজের চাপের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারছিলেন না রানী দাস বলে একটি আন্তর্জাতি সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে। এমন অবস্থায় তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসতে চাইলেও দূতাবাস থেকে তাকে কোন ধরণের সহায়তা করা হয়নি। তার মতো এমন ছয়জন নারীকে এখন ভিক্ষাবৃত্তি করে খেতে হচ্ছে বলে জানান রানী দাস।

দেশে ফিরতে পারলেও কাজের পুরো পারিশ্রমিক ছাড়াই ফিরতে হয়েছে দিনাজপুরের মোর্শেদা বেগমকে। প্রায় দেড় বছর সৌদি আরবে কাজ করলেও বেতনের মাত্র অর্ধেক তুলতে পেরেছেন তিনি।

এর মধ্যে সম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ সৌদি আরবে অবস্থানরত বাংলাদেশি কর্মীদের সুবিধা অসুবিধার বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে সৌদি প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করেন। গত মঙ্গলবার সৌদি আরবের জেদ্দায় ইমরান আহমদের সঙ্গে কিংডম অফ সৌদি আরবের ডেপুটি ইন্টেরিয়র মিনিস্টার ড. নাসের এ আল দাআদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইমরান আহমদ বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে আরও বেশী কর্মী নেওয়ার আহবান করলে সৌদি আরবের ডেপুটি ইন্টেরিয়র মিনিস্টার এ ব্যাপারে  ইতিবাচক আশ্বাস দেন।

সৌদি প্রেস এজেন্সির সংবাদ অনুযায়ী, দেশটির কর্তৃপক্ষ তাদের চলমান অভিযানে কাজ ও থাকার নিয়ম লঙ্ঘনের দায়ে প্রায় ৩৮ লাখ বিদেশিকে গ্রেফতার করেছে। ২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে এ অভিযান চলছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সৌদি আরবে জুনের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে ৫ লাখ ৪৪ হাজার ৫২১ জনকে।

গ্রেফতার হওয়া বিদেশিদের মধ্যে ২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত ৯ লাখ ৪০ হাজার ১০০ জনকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলেও সংবাদে উল্লেখ করা হয়।

এমএস/এসি


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি