ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪

‘ট্যাবলেট খাইয়ে মিন্নির জবানবন্দি নেয়া হয়’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:৫৮, ৬ আগস্ট ২০১৯

আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যার ঘটনায় দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন মামলার প্রধান সাক্ষী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি। তবে পরিবারের দাবি, মিন্নিকে ট্যাবলেট খাইয়ে জোর করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে।

সোমবার সন্ধ্যায় বরগুনা পৌর শহরের নয়াকাটা মাইঠা এলাকাস্থ নিজ বাসভবনে মিন্নির মা মিলি আক্তার গণমাধ্যমের কাছে এসব কথা বলেন।

মিলি আক্তারের অভিযোগ-মিন্নিকে রিমান্ডে নিয়ে ট্যাবলেট খাইয়ে জবানবন্দি নেয়া হয়েছে। তাকে ভয় দেখিয়ে ও নির্যাতন করে এই জবানবন্দি দিতে রাজি করানো হয়েছে। পুলিশের লিখে দেওয়া জবানবন্দি রাতভর মুখস্ত করানো হয়েছে। পরে আদালতে সেই জবানবন্দি দিতে মিন্নিকে বাধ্য করা হয়েছে।

এর আগের দিন রোববার মিন্নির মা-বোনসহ স্বজনরা কারাগারে তার সঙ্গে দেখা করতে গেলে তাদের কাছে এসব কথা জানান মিন্নি। 

মিন্নির বরাত দিয়ে মিলি আক্তার জানান, পুলিশের নির্যাতন ও ভয়ে মিন্নি আদালতে পুলিশের লিখে দেওয়া জবানবন্দি দিয়েছে। মিন্নিকে ট্যাবলেট মেশানো পানি খাইয়ে জোর করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। রিমান্ডের নামে আটকে রেখে রাতভর পুলিশের লিখে দেওয়া জবানবন্দি মুখস্থ করানো হয় তাকে। সেই জবানবন্দি না দিলে মা-বাবাকে আটক করে নির্যাতন করা হবে বলেও হুমকি দেয় রিতা নামের এক এএসআই। পুলিশি নির্যাতন ও ভয়ে মিন্নি আদালতে পুলিশের লিখে দেওয়া জবানবন্দি দিয়েছেন।

মেয়ের মুখ থেকে শোনা এসব নির্যাতনের ঘটনা সাংবাদিকদের বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মিন্নির মা মিলি আক্তার। তিনি বলেন, ‘রিমান্ডে নিয়ে মেয়েটাকে তিন দিন পুলিশ না খাইয়ে রেখেছে। একটু পানি পর্যন্ত খেতে দেওয়া হয়নি তাকে। বড়ির কথা বলে এক পর্যায়ে ট্যাবলেট মিশিয়ে তাকে পানি খেতে দেয়া হয়। পুলিশের লেখা জবানবন্দি মুখস্থ করানোর জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখে। এতে মিন্নি বারবার অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেও পুলিশের মন গলেনি।’

মিন্নির বরাত দিয়ে মিলি আক্তার আরও বলেন,‘পুলিশ আমার মেয়েকে বলতে বলে- 'তুমি আদালতে বলবা, আমার স্বামী তো ভালো না, তাই হালকা পাতলা মাইর দেওয়ার কথা বলেছি।'এমনটি বললে মিন্নির সাজা কম হবে বলে তাকে আশ্বস্ত করে পুলিশ।

মিন্নির মা আরও বলেন, আমার মেয়ে আমাকে বলেছে- ১৬ জুলাই পুলিশ মিন্নিকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে এসে ১২-১৩ ঘণ্টা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়। পুলিশ লাইনে একটি কক্ষে এএসআই রিতার নেতৃত্বে ৪-৫ পুলিশ সদস্য তাকে শারীরিক নির্যাতন করেছে এবং মারধর করেছে। এ সময় পানি পান করতে চাইলে তাকে পানিটুকুও দেওয়া হয়নি।

রিফাত শরীফ হত্যার আসামি রিফাত ও রিশান ফরাজীকে দিয়েও পুলিশ মিন্নির জড়িত থাকার বিষয়ে জোর করে স্বীকারোক্তি নিয়েছে বলেও দাবি করেন মিলি আক্তার। তিনি বলেন,‘আমার মেয়ে জবানবন্দি দিতে অস্বীকৃতি জানালে তার মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে নয়ন বন্ডের মতো গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজীকে আমার মেয়ের সামনে এনে বলতে বলে—বল, তোদের সঙ্গে মিন্নিও জড়িত ছিল। প্রথম দিকে না বললেও পুলিশের চাপে ও শারীরিক নির্যাতনের একপর্যায়ে তারা তা বলতে বাধ্য হয় এবং মিন্নি এ ঘটনায় জড়িত ছিল বলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।’

এ সময় নিজেদের নিরাপত্তাহীনতার কথা তুলে ধরে মিন্নির মা জানান, মিন্নির আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে গিয়ে তার বাবাকে পুলিশ খুঁজছে। আমার ছোট্ট ছেলে মেয়েরা আজ স্কুলে যেতে পারছে না। সন্ত্রাসীরা বাড়ির আশপাশে ঘুর ঘুর করছে।

উল্লেখ্য, গত ২৬ জুন রিফাত শরিফকে প্রকাশ্য রাস্তায় কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সে সময় স্বামীকে বাঁচাতে জোর চেষ্টা চালান মিন্নি। মিন্নির সে চেষ্টার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। পরেরদিন রিফাত শরীফের বাবা দুলাল শরীফ ১২ জনকে আসামি করে মামলা করেন। 

এনএস/কেআই


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি