ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৮ জুলাই ২০২৫

ঢাকার পিএইচও নমুনার ৯২ শতাংশে মাত্রাতিরিক্ত ট্রান্সফ্যাট

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২২:২১, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২০

Ekushey Television Ltd.

ঢাকার পিএইচও (পারশিয়ালি হাইড্রোজেনেটেড অয়েল) নমুনার ৯২ শতাংশে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সুপারিশকৃত ২ ভাগ মাত্রার চেয়ে বেশি ট্রান্সফ্যাট (ট্রান্স ফ্যাটি এসিড) পাওয়া গেছে।

প্রতি ১০০ গ্রাম পিএইচও নমুনায় সর্বোচ্চ ২০ দশমিক ৯ গ্রাম পর্যন্ত ট্রান্সফ্যাট এর উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে, যা বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশকৃত মাত্রার তুলনায় ১০ গুণেরও বেশি।

ঢাকার শীর্ষস্থানীয় পিএইচও ব্র্যান্ডসমূহের নমুনা বিশ্লেষণ করে এই ফলাফল পেয়েছেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউট (এনএইচএফএইচআরআই) এর গবেষকরা। এই গবেষণায় সহায়তা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক নাজমা শাহীন ও গবেষণা উপদষ্টো আবু আহাম্মদ শামীম। 

গবেষণা ফল প্রকাশ উপলক্ষ্যে আজ ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত ‘এসেসমেন্ট অফ ট্রানস ফ্যাট ইন পিএইচওএস ইন বাংলাদেশ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়।

গ্লোবাল হেলথ এডভোকেসি ইনকিউবেটর (জিএইচএআই) এর সহযোগিতায় ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ, কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এবং প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) সম্মিলিতভাবে এই অনুষ্ঠান আয়োজন করে।

সাংবাদিক নাদিরা কিরনের পরিচালনায় সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এর ইপিডেমিওলজি অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী এবং করণীয় সম্পর্কে আলোকপাত করেন প্রজ্ঞা’র ট্রান্সফ্যাট বিষয়ক প্রকল্পের টিমলিডার মো: হাসান শাহরিয়ার।

সংবাদ সম্মেলনে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সবধরনের ফ্যাট, তেল এবং খাদ্যদ্রব্যে ট্রান্সফ্যাটের সর্বোচ্চ সীমা মোট ফ্যাটের ২ শতাংশ নির্ধারণ এবং তা কার্যকর করার দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি সহায়ক পদক্ষেপ হিসেবে মোড়কজাত খাবারের পুষ্টিতথ্য তালিকায় ট্রান্সফ্যাটের সীমা উল্লেখ বাধ্যতামূলক করা, উপকরণ তালিকায় পিএইচও এর মাত্রা উল্লেখ বাধ্যতামূলক করা, ফ্রন্ট অব প্যাকেজ লেবেলস বাধ্যতামূলক করা যা খাদ্যদ্রব্যে ট্রান্সফ্যাটের উপস্থিতি নির্দেশ করবে, এবং “ট্রান্সফ্যাট-মুক্ত” বা “স্বল্পমাত্রার ট্রান্সফ্যাট” এজাতীয় স্বাস্থ্যবার্তা ব্যবহারে বিধিনিষেধ আরোপসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়।

গবেষকদলের অন্যতম সদস্য অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, ‘এই গবেষণা প্রমাণ করে বাংলাদেশে অনেক পণ্যেই বিপজ্জনক মাত্রায় ট্রান্সফ্যাট রয়েছে, যা অধিক হারে হৃদরোগ ও হৃদরোগজনিত মৃত্যুঝুঁকি তৈরি করছে। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরকারের উচিত হবে সবধরনের ফ্যাট, তেল এবং খাবারে ট্রান্স ফ্যাটি এসিডের সর্বোচ্চ পরিমাণ মোট ফ্যাট বা তেলের ২ শতাংশ পর্যন্ত সীমিত করে নীতিমালা প্রণয়ন করা।’

অধ্যাপক নাজমা শাহীন বলেন, ‘ বাংলাদেশে বিরাজমান হৃদরোগজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে অতিদ্রুত পিএইচও’র ট্রান্সফ্যাট এর মাত্রা ২ভাগে এ নামিয়ে আনা অত্যন্ত জরুরি এবং এই পদক্ষেপের মাধ্যমেই বাজারজাত প্রসেসড খাবারে ট্রান্সফ্যাটের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।’

গবেষণা কার্যক্রমে সার্বিক সহযোগিতা প্রদানকারী গ্লোবাল হেলথ এডভোকেসি ইনকিউবেটর (জিএইচএআই) এর বাংলাদেশ কান্ট্রি লিডার মুহাম্মদ রূহুল কুদ্দুস বলেন, ‘বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুসরণ করে ভারত, থাইল্যান্ড, ব্রাজিলসহ অনেক দেশ খাদ্যদ্রব্যে ট্রান্সফ্যাট নিয়ন্ত্রণে নীতি করেছে। বাংলাদেশও এক্ষেত্রে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এই গবেষণার ফলাফল ট্রান্সফ্যাট বিষয়ক নীতি প্রণয়ন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করবে।’

ক্যাব এর প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর আহম্মদ একরামুল্লাহ বলেন, ‘ ট্রান্সফ্যাট নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশে কোনো নীতি না থাকায় ভোক্তা স্বাস্থ্য চরম হুমকির মধ্যে রয়েছে। ভোক্তা স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ট্রান্স ফ্যাট নির্মূল করার জন্য সরকার, ভোক্তা অধিকার সংগঠনগুলোকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।’

অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বলেন, ‘ট্রান্সফ্যাটের স্বাস্থ্যক্ষতি ও বিস্তর সর্ম্পকে জনসচেতনতা তৈরি এবং ট্রান্সফ্যাট নির্মূলে নীতিপ্রণেতাদের উদ্বুদ্ধ করতে গণমাধ্যম সবেচেয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে।’

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, পারশিয়ালি হাইড্রোজেনেটেড অয়েল (পিএইচও) বাংলাদেশে ডালডা বা বনস্পতি ঘি নামে অধিক পরিচিত। বাসা বাড়িতে ব্যবহার না হলেও পিএইচও বেকারি ও অন্যান্য বাণিজ্যিক ভাবে তৈরি করা খাবারে ব্যবহৃত হয়। গবেষণার আওতায় ঢাকার বিভিন্ন মার্কেটের খুচরা বিক্রেতাদের সাথে সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে বেকারি এবং রেস্তোরাঁয় খাবার তৈরিতে সচরাচর ব্যবহার হয় এমন চারটি শীর্ষস্থানীয় পিএইচও ব্র্যান্ডের তালিকা তৈরি করা হয়। এই তালিকার ভিত্তিতে পাইকারি বাজার (হোলসেলার) এবং পিএইচও উৎপাদনকারী কারখানা থেকে ব্র্যান্ডগুলোর মোট ২৪টি নমুনা সংগ্রহ করে পর্তুগালের ন্যাশনাল হেলথ ইনস্টিটিউট ফুড কেমিস্ট্রি ল্যাবরেটরি এর সহায়তায় সেগুলো বিশ্লেষণ করা হয়। 

অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন গ্যাস ক্রোমাটোগ্রাফি ব্যবহার করে ট্রান্স ফ্যাটি এসিড বা টিএফএ মাত্রা নির্ণয় করা হয়। পিএইচও নমুনা বিশ্লেষণ করে প্রতি ১০০ গ্রাম নমুনায় গড়ে ১১ গ্রাম ট্রান্সফ্যাট পাওয়া যায়। এছাড়া, একই ব্র্যান্ডের পিএইচও নমুনার মধ্যে ট্রান্সফ্যাটের উপস্থিতির ব্যাপক তারতম্য লক্ষ করা গেছে। যেমন, একটি পিএইচও ব্র্যান্ডের ৭টি নমুনায় ০.৬৯ গ্রাম থেকে শুরু করে ১৪.৫ গ্রাম পর্যন্ত ট্রান্সফ্যাট পাওয়া গেছে।

এতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশে পিএইচও বা ডালডা সাধারণত ভাজা পোড়া স্ন্যাক্স ও বেকারিপণ্য তৈরি এবং হোটেল-রেস্তোরা ও সড়কসংলগ্ন দোকানে খাবার তৈরিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের খাবারে ক্ষতিকর ট্রান্সফ্যাট উপাদানের উপস্থিতি সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য-উপাত্ত না থাকার কারণেই এই গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়।

আরকে//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি