ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪

তাড়াশে পুকুর খননে নষ্ট হচ্ছে আবাদি জমি

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি 

প্রকাশিত : ২০:১৯, ২৯ জানুয়ারি ২০২০

উত্তরবঙ্গের শস্য ভান্ডার খ্যাত সিরাজগঞ্জের চলনবিল অঞ্চলের তাড়াশ উপজেলায় উর্বর ফসলী জমি দিন দিন সাবাড় করা হচ্ছে। ৩ ফসলী জমিগুলো বেকু দিয়ে কেটে তৈরি করা হয়েছে বড়-বড় পুকুর। এ যেন পুকুর খননের মহোৎসব। ফলে এখানে যেমন কমছে কৃষি জমি, তেমনি পুকুর আর জলাশয়ের কারণে ফসলের মাঠে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা।

কৃষি বিভাগের মতে, তাড়াশ উপজেলায় কোন রকম নিয়ম নীতি না মেনে অপরিকল্পিত ভাবে পুকুর খনন চলতে থাকায় ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। আর পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পুকুর খননে ভূমির শ্রেণী বদল হওয়ায় পরিবেশগত প্রতিকূলতার আশঙ্কা বাড়ছে। তবে স্থানীয় প্রশাসনের যথাযথ ভুমিকা না থাকায় এ অপরিকল্পিত পুকুর খননের  প্রতিযোগীতা থামানো যাচ্ছেনা। 

এসব এলাকা পরিদর্শন করে দেখা যায়, কমপক্ষে একশতকেরও বেশি পুকুর খনন কাজ চলমান রয়েছে। তবে পুকুর খনন করতে গিয়ে জমি মালিকরা গ্রামীণ ও আঞ্চলিক সড়কের ক্ষতি করছে। 

উপজেলা মৎস্য বিভাগের তথ্যমতে, গত কয়েক বছরে এ উপজেলায় পুকুর জলাশয়ের সংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুণ। অন্যদিকে তাড়াশ উপজেলায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, উপজেলায় মোট আবাদযোগ্য জমির পরিমান ২৫২০০ হেক্টর।

সর্বশেষ ২৮ জুলাই ২০১৯ এর হিসাব মতে, উপজেলায় ২৪ টি ব্লকে পুকুর খননের সংখ্যা নিমগাছী প্রকল্পের আওতায় ৭৫০টি, ভূমি অফিস এর আওতায় ৩৫০টি ও ব্যক্তি মালিকানায় ২০০০টি (নতুন ৪৯৫ টি)। যার মোট আয়তন নিমগাছী প্রকল্প বাদে ৪৩৫ হেক্টর।

উপজেলায় ১৯৯৮ সালের দিকে আবাদযোগ্য জমি ছিল ২৫২০০ হেক্টর। ২০১৮ সালে দিকে ছিল ১৫১৩৭ হেক্টর। বর্তমানে আবাদযোগ্য জমি এসেছে প্রায় অধেকে। ২ দশকে এ উপজেলায় আবাদযোগ্য জমি কমেছে প্রায় ১২ হাজার হেক্টর।

সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, উপজেলার নওগা ইউনিয়নের মুহষলুটি বাজারের সাথে বিস্তীর্ণ মাঠে ২৫ বিঘা ফসলী জমিতে পুকুর খনন কাজ চলছে।
 
স্থানীয়রা নাম প্রকাশ না শর্তে অভিযোগ করে বলেন, এমপির বড় ভাই এ্যাড. নূরুল ইসলাম, মিজান মাষ্টার, আব্দুল রহিম মাষ্টার স্থানীয় এমপি ডা: আব্দুল আজিজের নাম দিয়ে প্রভাব খাটিয়ে সেখানে ১১১৩ দাগের সরকারি জায়গা দখল করে এ পুকুর খননের মহাযজ্ঞ চালিয়েছে। সেখানে সরকারি জায়গাও আছে বলে জানিয়েছে। 

অপর দিকে গোয়ালগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা হেলাল, পাচানগ্রামের স্বপন, ইব্রাহিম প্রিন্সিপাল, বুলবুল, তাড়াশ সদরের রাশিদুল ইসলাম বাবু, অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মো. শফি, সোনাপাতি গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা লেবু মিয়া ও আলী প্রসাশন, স্থানীয় সাংবাদিককে ম্যানেজ করে পুকুর খনন করছে বলে তারা জানিয়েছে।

নওগা ইউনিয়নের মহিষলুটি গ্রামের ভুক্তভোগী কৃষক আবদুর রহিম জানান, মাঠের মধ্যে একটা বড় পুকুর খনন করলে আশপাশের বিপুল পরিমাণ জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে ওইসব জমিতে আর ফসল হচ্ছে না। যারা জমি কেটে পুকুর করছেন তারা অনেক প্রভাবশালী।

স্থানীয় এক কলেজ শিক্ষক নাম প্রকাশ না শর্তে বলেন, মাত্র চার-পাঁচ ফুট গভীর করেই মাছ চাষ শুরু করা হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী, পুকুর হলে ২০ ফুটের কম গভীর হওয়ার কথা নয়। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন এখনও পুকুর খনন বন্ধ করতে পারেনি। আর কয়েকজন ভয়ে কথা বলতে রাজি না হয়ে বলেন, এলাকায় বাস করি এমপির লোকের সাথে বিবাদ তৈরি করে এলাকায় থাকতে পারব না কারণ জানতে চাইলে বলে তাড়াশ স্থানীয় সাংবাদিকরা অনেক এসেছে কিন্তু তারা আসে চলে যায়। মাঝে মাঝে শহর থেকেও আসতে দেখি কিন্তু পুকুর কাটা বন্ধ হয় না। 

উপজেলার সদর ইউনিয়নের কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, কয়েক বছরে তাদের ইউনিয়নেই অর্ধেক আবাদি জমি পুকুরে চলে গেছে। যেটুকু জমি অবশিষ্ট ছিল নতুনভাবে তাতেও চলতে শুরু করেছে খননযন্ত্র। অপরিকল্পিত পুকুর খননে জলাবদ্ধতা হয়ে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি করছে।

তাড়াশ উপজেলার সাধারণ মানুষেরা বলছে, অর্ধেক আবাদি জমি পুকুরে চলে গেছে। যেটুকু জমি অবশিষ্ট ছিল নতুনভাবে তাতেও চলতে শুরু করেছে খননযন্ত্র। অপরিকল্পিত পুকুর খননে জলাবদ্ধতা হয়ে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি করছে। চারণভূমি সংকটে মানুষ গরু, মহিষ ও ছাগল প্রতিপালন ছেড়ে দিচ্ছেন। ক্ষতির পরিমাপ না করা হলেও পুকুর করে মাছ চাষে যে লাভ হচ্ছে, কৃষির ক্ষতিটা তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। 

তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইফ্ফাত জাহান বলেন, তাড়াশ উপজেলায় পুকুর খনন বন্ধে প্রশাসন তৎপর রয়েছে। প্রশাসনের উদ্যোগে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করা হচ্ছে। জমির শ্রেণী বদল করে আবাদি জমিতে পুকুর দীঘি খনন করা বেআইনি ও দন্ডনীয় অপরাধ। তবে এক শ্রেণীর অসাধু লোক তিন ফসলী আবাদি জমিকে নিচু ও জলাভূমি দেখিয়ে পুকুর খনন করছেন। এক শ্রেণীর লোক জমি লিজ নিয়ে বা কিনে পুকুর খনন করে মাছ চাষ করছেন। প্রশাসনের উদ্যোগে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করা হচ্ছে।

কেআই/আরকে


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি