ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৬ মে ২০২৪

‘দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে জিতবে এবার নৌকা’

প্রকাশিত : ১৭:০০, ৫ জানুয়ারি ২০১৯ | আপডেট: ১৯:৩১, ৫ জানুয়ারি ২০১৯

তৌহিদ হোসেন

তৌহিদ হোসেন

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যে গানটি সারাদেশকে কাঁপিয়ে দিয়েছে সেটি হলো, "জয়বাংলা, জিতবে এবার নৌকা"। এর আগে অন্য কোন গান এরকম জনপ্রিয়তা পেয়েছে কি-না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে যতেষ্ট। নির্বাচন নিয়ে অন্যকোন গান এরকম ভাইরাল হয়নি বলে জানা যায়। দেশের এমন কোন গ্রাম নেই, যেখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের পক্ষে নেতাকর্মীরা এ গান বাজায়নি। আওয়ামী লীগের নির্বাচনি থিম সং হিসেবে মানুষের মুখে মুখে স্বীকৃতি পেলেও কয়েকজন তরুণ স্বপ্রণোদিত হয়ে গানটি লেখা থেকে গাওয়া পর্যন্ত সব কাজ সম্পন্ন করেছেন।

তরুণদের কথা মাথায় রেখে ভালো কিছু করার চিন্তা থেকে একাজ করলেও তখন অবশ্য ভাবেননি এতোটা জনপ্রিয়তা পাবে এই গান। সবার ধারণা পাল্টে দিয়ে হৈচৈ ফেলে দেওয়া গানটির গীতিকার তৌহিদ হোসেন। সুর করেছেন ডিজে তনু ও শুভ্র রাহা। আর কণ্ঠ দিয়েছেন সরোয়ার ও জিএম আশরাফ। গীতিকার তৌহিদ হোসেন- এর দাবি মাস খানেকের কম সময়ে ইউটিউবের বিভিন্ন চ্যানেলে "জয় বাংলা : জিতবে আবার নৌকা" গানটির ভিউয়ার্স হয়েছেন পনের থেকে ষোল কোটি দর্শক।

গীতিকার তৌহিদ হোসেন একজন তথ্য প্রয়ুক্তি উদ্যোক্তা। তাহলে কেন এই গান লিখলেন? কেন তারা গানটি নিয়ে কাজ করলেন? বা কীভাবে জন্ম নিল এই গান? কীভাবে দেশ বিদেশে এভাবে আলোড়ন তুলল? তৌহিদ হোসেন জানান, আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। ছোট বেলা থেকে আওয়ামী বলয়ে বড় হয়েছি। ফলে সব সময় দলের জন্য একটা ভালোবাসা সব সময় কাজ করত। আমার সেই ভালোবাসা একটা সময় দায়বদ্ধতায় রূপ নেয়।

কেন দায়বদ্ধতা এমন প্রশ্নে তৌহিদ হোসেন ফিরে যান অতীতে। বলেন, আমরা যখন ২০০৪ সালে ব্যবসা শুরু করি তখন ইন্টারনেটের অভাবে আন্তর্জাতিক কাজগুলো করতে পারতাম না। আমার অফিসে তখন ছ`জন লোক কাজ করতো (এখন অবশ্য কাজ করছে পাঁচশ লোক)। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ `দিন বদলের সনদ` ঘোষণা করে। এরপর থেকে আমাদের কাছে ইন্টারনেট সহজলভ্য হয়। শুধু তাই নয়, আমি অন্য সেক্টর নিয়ে বলব না, কিন্তু বর্তমান সরকারের আমলে আইটি সেক্টর যথেষ্ট উন্নতি করেছে। ইন্টারনেট জগৎটাই এমন যেখানে দক্ষতা থাকলে মানুষ স্নাতক ডিগ্রি অর্জন না করেও চাকরি করতে পারে। যদি কম্পিউটার জানে, যোগাযোগে পারদর্শী হয় তাহলে সে ইন্টারনেটকে কাজে লাগিয়ে কাজ করার সক্ষমতা রাখে। ফলে গত ১০ বছরে অনেক তরুণের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়া সম্ভব হয়েছে। আমরা বিগত সময়ে দেখেছি, সরকার পরিবর্তন হলে চলমান প্রকল্পগুলো বন্ধ হয়ে যায়। আমি ভাবলাম, যদি কোন কারণে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না আসে তাহলে আইটি সেক্টরে যে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে তাতে আঘাত আসবে। মুখ থুবড়ে পড়বে অনেক সম্ভাবনা। তাই নির্বাচন উপলক্ষে দলের জন্য কিছু করার তাগাদা অনুভব করি। সেই জায়গা থেকে লিখি "জয় বাংলা: জিতবে আবার নৌকা"।

তৌহিদ হোসেন কখনো সক্রিয় রাজনীতি করেননি। আইটি সেক্টর বা ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর বাইরে কোন বড় পদ নেই তার। তবে এবারের নির্বাচনে তথ্য প্রযুক্তিবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। ২০১৪ সালের নির্বাচনেও তার ভূমিকা ছিল ব্যতিক্রম। সেবার তিনি দলীয় প্রার্থীদের (আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী) আইটি`র ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে সহায়তা দিয়েছেন। আইটি উদ্যোক্তা ও সংগঠক হিসেবে তৌহিদ হোসেন একটি সফল নাম। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্য) -এর সাধারণ সম্পাদক তিনি। ইতোপূর্বে সরকারের আইসিটিবিষয়ক বিভিন্ন প্রকল্প সফলভাবে সম্পাদন করতে বেসরকারি খাত থেকে ভূমিকা রেখেছেন তিনি।

তৌহিদ হোসেন একুশে টেলিভিশন অনলাইনের সঙ্গে আলাপ করতে গিয়ে বলেন, বর্তমানের তরুণরা আইটি নির্ভর। এ খাতকে কাজে লাগিয়ে অনেক কর্মসংস্থান যেমন হচ্ছে তেমনি এর অপব্যাবহারও হচ্ছে অনেক। কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলন নামে দুটি আন্দোলনে অনেক গুজব ছড়ানো হয়েছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে। সেই জায়গা থেকে আমি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে তরুণদের পালস বুঝার চেষ্টা করেছি। এর আগেও আমরা `বদলে যাচ্ছে দেশ` শিরোনামে একটি গান করেছি। আরও দুটি গান করেছি। সেগুলো মানুষ শুনেছে। কিন্তু ভাইরাল হয়নি। এই গানটি লেখার সময় সেই অভিজ্ঞতাও কাজ দিয়েছে।

`জিতবে আবার নৌকা` গানটি লিখতে গিয়ে কোন চিন্তাটা মাথায় রেখেছিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, দেশে বর্তমানে তিন কোটি ১০ লাখ লোক ফেসবুক ব্যবহার করে। প্রায় ৩০ লাখ লোক ইউটিউব ব্যবহার করে। আমি নিজেও দৈনিক গড়ে চার পাঁচ ঘণ্টা ( গড়ে) ফেসবুক/ ইউটিউবে দিচ্ছি। দেশে এমন একটা ভোটার শ্রেণি আছেন যারা ভাসমান। তারা সব সময় ভালোকে ভালো বলেন। খারাপকে খারাপ বলেন। আমি তাদেরকে টার্গেট করেছি। তাদের কথা মাথায় রেখে কিছু করতে চাইলাম গানের মাধ্যমে। কারণ গান যদি পছন্দ হয় সেটা মানুষের মাথায় থেকে যায়।

সহকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, গানটি সুর ও গাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের টিমটি খুব আন্তরিক ছিল। গান গেয়েছেন সরোয়ার ও জিএম আশরাফ। আর সুর করেছেন ডিজে তনু ও শুভ্র রাহা। তনু যেহেতু ডিজে সে তরুণদের ভালো বুঝতে পারে। কোন ধরনের সুর তরুণদের উজ্জ্বীবীত করবে, সবার মধ্যে স্পন্দন জাগাবে- এই চিন্তার জায়গায় আমরা সবাই সচেষ্ট ছিলাম। গানের কয়েকটা লাইন আছে, "শেখ হাসিনার সালাম নিন, নৌকা মার্কায় ভোট দিন" - মিছিলে কথাগুলো সবাই বলে। কিন্তু গানে নিয়ে আসার জন্য একটা সাহস দরকার ছিল। আমাদের টিম সেই সাহসটা দেখিয়েছে।

তৌহিদ হোসেন বলেন, গানটি ভাইরাল হবে সেই বিশ্বাস আমাদের ছিল। কিন্তু এরকম তুলকালাম কাণ্ড ঘটাবে তা ভাবিনি। আমরা একটি ভিডিও বানিয়ে গানটি ছেড়েছিলাম। ভিডিও থাকলে মানুষকে আকর্ষণ করা সহজ। সত্য কথা হচ্ছে ভিডিওটা খুব ভালো মানের ছিল না। টাকার ঘাটতি ছিল। সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা। পুরো কাজটি ভলান্টিয়ারি করা হয়েছে।

সরকারের কাছ থেকে আমরা আইটি ক্ষেত্রে যেসব সুবিধা পেয়েছি এটা তার রিটার্নে আমাদের ক্ষুদ্র একটা প্রচেষ্টা এটা। গানটি ইউটিউব চ্যানেলে ছাড়ার পরপরই কেমন আলোড়ন তুলে সেই স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, রাতে আপ করেছি। সকালে উঠে দেখি পনের লক্ষ ভিউ হয়ে গেছে। মজার ব্যাপার হলো মানুষ যখন এটাকে শেয়ার দিয়েছে কেউ এটাকে থিম সং, কেউ বেস্ট সং- এভাবে আখ্যায়িত শুরু করে। আমরা একটি পেজে দু`বার আপ করার পর দেখলাম প্রায় সত্তর হাজার শেয়ার হয়েছে। সত্তর হাজার শেয়ার মানে এমনিতেই ভাইরাল।

তুমুল জনপ্রিয় হওয়া এমন গানের গীতিকার হিসেবে আপনার অনুভূতি কী এমন প্রশ্নে তৌহিদ হোসেন বলেন, গানটি নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ভালো ট্রল হয়েছে। জামাত-শিবিরের সরকার বিরোধী একটা পেজে লেখা দেখলাম, " জয় বাংলা ডুববে এবার নৌকা"। আমাদের সফলতা এখানে, তারাও `জয় বাংলা` বলছে। আগে তারা জয় বাংলা বলতো না। কারণ এটা আওয়ামী লীগ বলে তাই।

নির্বাচনের পর গাওয়া হয়েছে " জিতল আবার নৌকা"। এ সম্পর্কে তৌহিদ হোসেন বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল- এর স্ত্রীকে আমরা খালাম্মা ডাকি। তিনি আমাদের বলেছিলেন, নির্বাচনের পর আরেকটি করিও। তার উৎসাহেই আমরা "জিতল আবার নৌকা"।

"জিতবে আবার নৌকা" ও " জিতল আবার নৌকা" দুটো গানেরই কলার টিউন দেওয়া হয়েছে। কলার টিউনে সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা নির্বাচনের আগে কম হলেও নির্বাচনের পর বেড়ে যায় হু হু করে। তৌহিদ হোসেন হাসতে হাসতে বলেন, অনেকে হয়তো ভেবেছিল, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে হেরে যাবে। তারা হয়তো ভয়ে সাবস্ক্রাইব তখন করেনি।

আওয়ামী লীগ আবারও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে ক্ষমতায় এসেছে। `জিতবে আবার নৌকা` গানটির তুমুল জনপ্রিয়তার কারণে এ বিজয়ের পেছনে নিজেদের কৃতিত্ব দাবি করবেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, এ বিজয় জনগণের বিজয়। কারণ, জনগণ চেয়েছে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা পাক। জনগণের চাওয়া পূরণ হোক, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা পাক সেটাই প্রত্যাশা।

এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি