ঢাকা, বুধবার   ২২ মে ২০২৪

নগরবাড়ী বন্দরে ফেলে রাখা সারে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ

পাবনা প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ২১:০২, ১৬ আগস্ট ২০২০ | আপডেট: ২১:০৮, ১৬ আগস্ট ২০২০

পাবনার নগরবাড়ী নৌবন্দরে নষ্ট হচ্ছে লাখ লাখ বস্তা সার। রোদ বৃষ্টিতে এই সারের ঝাঁঝাল গন্ধে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। সারের বস্তাগুলো নৌবন্দরের খোলা জায়গায় স্ট্যাক দিয়ে রাখায় জমাট বেঁধে গুণগতমান নষ্ট এবং প্রতি বস্তায় গড়ে প্রায় ৩ কেজি করে সার ঘাটতি হচ্ছে। ফলে কৃষকেরা হচ্ছে প্রতারিত। বাফার গুদাম না থাকায় বছরের পর বছর সরকারকে এই লোকসান গুনতে হচ্ছে। 

জানা গেছে, নগরবাড়ী নৌবন্দর ব্যবহার করে বিসিআইসি আমদানিকারকরা চীন, মিসর, সৌদি আরব, তিউনিশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ইউরিয়া, ডিএপি, এমওপি ও টিএসপি সার আমদানি করেন। পরে বিভিন্ন ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির মাধ্যমে সড়ক পথে সার মজুদের জন্য উত্তরাঞ্চলের ১৪টি বাফার গুদামেগুলোতে পৌঁছে দেয়া হয়।  

সরেজমিন দেখা যায়, নগরবাড়ীতে যমুনা নদীর পশ্চিম পাড়ে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মাটিতে স্ট্যাক দিয়ে সারের বস্তা স্তুপ করে রাখা হয়েছে। বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে শুকিয়ে শক্ত ও জমাট বেঁধে সারের গুণগতমান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বাতাসে ভাসছে ঝাঁঝাল গন্ধ। সারের ঝাঁঝাল গন্ধে এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। উত্তরাঞ্চলের ১৪টি বাফার গুদামগুলোতে জায়গা না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হযেছে।

এ দিকে চট্টগ্রাম নৌবন্দর থেকে প্রায় আড়াই হাজার টন রাসায়নিক সার বোঝাই ৫টি কার্গো জাহাজ নগরবাড়ী  নৌবন্দরে নোঙর করেছে। জাহাজ আনলোডের অপেক্ষায় রয়েছে। নিয়মানুযায়ী জাহাজ বন্দরে পৌঁছার পর আনলোড করে সার ট্রাকে বাফার গুদামগুলোতে পৌঁছে দেয়ার কথা। কিন্তু গুদামে জায়গা না থাকায় এই সার মাসের পর মাস বন্দরেই পড়ে থাকছে।

অন্য দিকে বিসিআইসির ডিলারদের যথাসময়ে সার উত্তোলনে অনীহা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ডিলার জানান, অনেক দিন ধরে খোলা জায়গায় পড়ে থাকায় জমাট বেঁধে সারের গুণগত মানের কিছুটা পরিবর্তন হয়। এ ছাড়া প্রতি বস্তায় প্রায় দুই থেকে তিন কেজি করে ওজনে কম পাওয়া যায়। ফলে কৃষকরা এই সার নিতে চায় না। কৃষকরা দেশী সারের প্রতি বেশি আগ্রহী। কিন্তু দেশী সার না দিয়ে চীন থেকে আমদানি করা সার দেয়া হচ্ছে। এ বিষয়টি তারা সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তদন্ত করে দেখার দাবি জানিয়েছেন।

নগরবাড়ী বন্দরের লোড-আনলোড লেবার সরদার ইছাক আলী শেখ জানান, নগরবাড়ীতে বাফার গুদাম নির্মাণ কাজ  এখনও শেষ হয়নি। এ কারণে জাহাজ থেকে সার আনলোড করে নদীর তীরে খোলা আকাশের নিচে স্ট্যাক দিয়ে রাখা হচ্ছে।

জননী ট্রান্সপোর্টের ম্যানেজার দুলাল দাস জানান, নগরবাড়ী গেজেটভুক্ত নৌবন্দর হলেও এখানে সরকারের নিজস্ব  কোনো বাফার গুদাম ছিল না। তবে বর্তমানে বাফার গুদামের নির্মাণ কাজ চলছে। উত্তরাঞ্চলের জন্য যে পরিমাণ সার নগরবাড়ী বন্দরে আসে, তাতে এখানে বাফার গুদাম নির্মাণকাজ জরুরি ভিত্তিতে শেষ করা দরকার।

স্থানীয় বাসিন্দা আওলাদ হোসেন বলেন, তীব্র গন্ধে বসবাস ও চলাফেরা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পরিবেশ দূষন করছে।

এব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত পাবনার সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ইসমাইল হোসেন বলেন, নগরবাড়ী নৌবন্দরে বাফারগুদাম না থাকায় রাসায়নিক সার খোলা আকাশের নিচে স্ট্যাক দিয়ে রাখা হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তবে বর্তমানে বাফার গুদামের নির্মাণ কাজ দ্রুত চলছে। অচিরেই এ সমস্যা দুর হবে।
কেআই// 
 


Ekushey Television Ltd.





© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি