ঢাকা, রবিবার   ২৮ এপ্রিল ২০২৪

নদীকে জীবন্ত সত্ত্বার স্বীকৃতির দাবি

প্রকাশিত : ২৩:০০, ২৯ জানুয়ারি ২০১৯

নদী বাঁচাতে নদীকে জীবন্ত সত্ত্বা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন নদী নিয়ে কাজ করা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষক এবং সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, অপরিকল্পিত উন্নয়ন, দখল, দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন করে নদী মেরে ফেলছি আমরা। কারণ নদীর অনুভূতিকে আমরা আমলে নেই না। নদীর নিজস্ব একটা সত্ত্বা আছে সেটি আমরা ভাবি না।

মঙ্গলবার পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় ‘রিভার: এ লিভিং বিয়িং’ নামের একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলেনের উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে এমন কথা উঠে আসে। আলোচকরা বলেন, নদীর অধিকার রক্ষায় এবং নদীকে নদীর মতো থাকতে দিয়ে তার অনুভূতিকে আমলে নিয়ে তার সত্ত্বার স্বীকৃতি দিতে হবে।

দু’দিনের আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনের প্রথম দিনে মূল বিষয় তুলে ধরতে গিয়ে একশনএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে আমাদের নদীগুলো মরে যাচ্ছে। নদী মরে যাওয়ার প্রভাব পরে আমাদের জীবন-জীবিকায়। ফলে নদীকে নদীর মতো থাকতে দেওয়ার বিকল্প নেই। নদীর জীবনকে মানুষের মূল্যায়ন করতে হবে। এছাড়া নদী বাঁচানো যাবে না।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ফারাহ্ কবির একটি ধারণাপত্র তুলে ধরেন। ধারণাপত্রে বলা হয়, পানি এবং জীবন সমার্থক। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ পানির অধিকারকে মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু বিশ্বজুড়ে নদীর অধিকার এখনো ব্যাপকভাবে স্বীকৃতি পায়নি। দক্ষিণ এশিয়া শত-শত নদী দ্বারা পরিবেষ্টিত। যেহেতু এ নদীগুলোর অধিকাংশই আন্তঃসীমান্ত নদী, তাই বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল এবং মিয়ানমারে বসবাসরত মানুষের কাছে এসব নদীর পানি একটি সাধারণ প্রাকৃতিক সম্পদ। যা মানুষের জীবন-জীবিকার সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত।

ধারণাপত্রে বলা হয়, নদীরও অনুভূতি আছে। আছে বেঁচে থাকার অধিকার। এজন্য একে বাস্তবিক ও আইনগতভাবে জীবন্ত সত্ত্বা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া উচিৎ। তখন নদীকে নদীর মতো থাকতে দেওয়া আরও বেগবান হবে। এক্ষেত্রে নিউজিল্যান্ড এবং ভারতের দৃষ্টান্তকে বিবেচনায় নেওয়া যায়, যেখানে আইন প্রণয়ন এবং আদালতের বিধিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে নদীকে মানুষের মতই সমান আইনগত অধিকার দেওয়া হয়েছে। হোয়াঙ্গানুই, গঙ্গা এবং যমুনা নদীর এখন আইনগত অধিকার আছে, যার অর্থ হলো এদের অবশ্যই জীবন্ত সত্ত্বা হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, নদীকে বাঁচাতে হলে আমাদের নদীকে ভালভাবে বুঝতে হবে। নদী একটি জীবন্ত সত্ত্বা। আমাদের এই জীবন্ত সত্ত্বাকে ভালভাবে বুঝতে হবে। নদীর অনুভূতিকে বুঝতে হবে। এসব অনুধাবনের পর নদীবিষয়ক প্রকল্প হাতে নিতে হবে। নদীর যে সত্ত্বা আছে সেটি বুঝা যায় যখন নদী মরে গেলে মানুষের উপর তার প্রভাব পরে। নদী যখন খারাপ থাকে তখন মানুষের জীবনেও খারাপ প্রভাব পড়ে। নদী যে একটি জীবন্ত সত্ত্বা তা আমরা আমলে নেই না। কারণ নদীর অধিকার ও সত্ত্বা আমার ধ্বংস করছি দখল, দূষণ, অপরিকল্পিত পরিকল্পনা এবং জলবায়ু পরির্তনের মাধ্যমে।

তিনি আরও বলেন, নদীকে জীবন্ত সত্ত্বা হিসেবে স্বীকৃতির বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমাদেও নদীকেন্দ্রিক এবং পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন ব্যবস্থাকে উৎসাহিত করতে হবে।

আলোচনায় আরও উঠে আসে, নদীকে জীবন্ত সত্ত্বা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার মূল বিষয়গুলো। এক্ষেত্রে পানির অধিকার এবং সাধারণের সুরক্ষা, পানি গণতন্ত্র, পানিবিষয়ক উদ্ভাবন এমন বিভিন্ন ধ্যান-ধারণার বিনিময় এবং সংলাপকে উৎসাহিত করা প্রয়োজন। সম্মেলনে চারটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে নদীর সত্ত্বাকে বাঁচানোর কথা বলা হযেছে। পানি, শক্তি, জীববৈবিচত্র্য ও নদীবাহিত পলি, এই চারটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে নদীর বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলেন আলোচকরা।

পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মতিউল ইসলাম বলেন, আমাদের দেশের বেশিরভাগ নদী জীবন্ত সত্ত্বা থেকে মৃত সত্ত্বায় পরিণত হচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠানই নদী নিয়ে কাজ করছে। কিন্তু কেউ নদীকে জীবন্ত সত্ত্বা হিসেবে বিবেচনা করছে না। উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে নদী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর বিরূপ প্রভাব আমাদের জীবনেও পড়ছে। এজন্য নদীকে নদীর মত থাকতে দিতে হবে। তার অনুভূতিকে বুঝতে হবে।

এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি