ঢাকা, বুধবার   ০৪ জুন ২০২৫

নাইজেরিয়ায় ভয়াবহ বন্যায় ৭ শতাধিক মানুষের প্রাণহানির শঙ্কা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২১:৪৮, ২ জুন ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়ার মধ্যাঞ্চলীয় মোকওয়া শহরে ভয়াবহ বন্যায় প্রাণহানির সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে গেছে। তবে ওই শহরে পাঁচ শতাধিক মানুষ নিখোঁজ থাকায় নিহতের সংখ্যা ৭০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্থানীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে সোমবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

নাইজার প্রদেশের মোকওয়া শহরের স্থানীয় কর্মকর্তা মুসা কিমবোকু বলেছেন, গত বৃহস্পতিবার আকস্মিক বন্যা দেখা দেওয়ার পর শত শত উদ্ধারকর্মী উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেন। তবে বর্তমানে আর কাউকে জীবিত উদ্ধারের সম্ভাবনা না থাকায় উদ্ধার অভিযান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

গত ৬০ বছরে ওই অঞ্চলে এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা বলে দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। টানা ভারী বর্ষণের কারণে মোকওয়ার টিফিন মাজা ও আনগুয়ান হাউসাওয়া এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। রোগের বিস্তার ঠেকাতে শিগগিরই উদ্ধারকৃত মৃতদেহ দাফনের কাজ শুরু কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন মোকওয়ার জেলা প্রধান মুহাম্মদ আলী।

বিপর্যয়কর ভয়াল দৃশ্যের বর্ণনা করে স্থানীয় বাসিন্দারা বিবিসিকে বলেছেন, কীভাবে বাড়িঘর আর প্রিয়জন পানির স্রোতে ভেসে গেছে তারা তা দেখেছেন। আদামু ইউসুফ নামের এক ব্যক্তির স্ত্রী ও সদ্যজাত সন্তান পানির তোড়ে ভেসে গেছে।

তিনি বলেন, ‘‘আমি অসহায় হয়ে দেখলাম, কীভাবে আমার স্ত্রী আর সদ্যজাত সন্তান পানিতে ভেসে যাচ্ছে। আমি সাঁতার জানতাম বলে বেঁচে গিয়েছি।’’

আরেক বাসিন্দা সালিউ সুলাইমান বলেন, বন্যায় তিনি নিজের বাড়িঘর হারিয়েছেন। এছাড়া তার ব্যবসার নগদ টাকাও বন্যায় ভেসে গেছে। তিনি বলেন, আমি কমপক্ষে ১ হাজার ৫০০ ডলার হারিয়েছি। আগের দিন আমার খামারের ফসল বিক্রি করে এই অর্থ পেয়েছিলাম। আমি ভেবেছিলাম ঘরে ফিরে ফসল বিক্রির অর্থ নিয়ে আসব। কিন্তু পানির প্রবল চাপের কারণে তা করার সাহস পাইনি।

শহরটির স্থানীয় কিছু বাসিন্দা বলেন, ‘‘পাশের একটি বাঁধ ভেঙে যাওয়ার কারণে এই বিধ্বংসী বন্যা দেখা দিয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কোনও তথ্য জানায়নি। বন্যার পানির স্রোত এতটাই তীব্র ছিল যে, মোকওয়া থেকে প্রায় এক ঘণ্টা দূরের রাব্বা শহর পর্যন্ত মৃতদেহ ভেসে গেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

মোকওয়ার ডেপুটি ভাইস-চেয়ারম্যান মুসা কিমবোকু বলেন, কোনও মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া গেলে তার দাফন করে ফেলার জন্য আশপাশের গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলার প্রধান আলী বলেন, কিছু মরদেহ আর উদ্ধার করা সম্ভব নয়। কারণ নাইজার নদীর স্রোতে হারিয়ে গেছে গেছে এসব মরদেহ।

দেশটির জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা (নেমা) বলেছে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে সংস্থাটি বলেছে, বন্যায় রাস্তা ও সেতুও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয়েছে।

এর আগে, শুক্রবার নাইজেরিয়ার রেড ক্রস বলেছিল, বন্যায় ব্যাপক সংখ্যক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। স্মরণকালের ভয়াবহ এই বন্যায় দেশটিতে ব্যাপক মানবিক সংকটের সৃষ্টি হয়েছে।

সাধারণত বছরের এপ্রিল থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত নাইজেরিয়ায় বর্ষাকাল চলে। এই সময় দেশটিতে বন্যা দেখা যায়। ২০২৪ সালেও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয় দেশটিতে। সেসময় বন্যায় অনেক মানুষের প্রাণহানি ঘটে এবং বহু মানুষ বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হন। এর আগে, ২০২২ সালেও দেশটিতে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছিল। ওই বন্যায় ৬০০ জনের বেশি নিহত ও প্রায় ১৩ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন।

সূত্র: বিবিসি।

এসএস//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি