ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪

নাটোরে পর্যটনে ক্ষতি কোটি টাকা, দর্শনীয়স্থান খুলে দেয়ার দাবি

নাটোর প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৫:৪৮, ১৭ আগস্ট ২০২০

ইতিহাস ঐতিহ্যের লীলাভূমি নাটোরে করোনার প্রভাবে বন্ধ রয়েছে পর্যটন কেন্দ্রগুলো। নাটোরের রানী ভবানী রাজবাড়ী, প্রধানমন্ত্রীর দ্বিতীয় বাসভবন উত্তরা গণভবন, চলনবিল ও হালতি বিলের ডুবন্ত সড়কসহ বিল এলাকার বিশাল জলরাশি পর্যটকদের ভির লেগেই থাকত। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রভাবে গত মার্চ মাস থেকে পর্যটকদের প্রবেশাধিকার বন্ধ রাখা হয়। 

ফলে গত প্রায় ছয় মাসে নাটোরে পর্যটন খাতে প্রায় কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে। এসব কেন্দ্রে কর্মরত কর্মকর্তা -কর্মচারীদেরও অলস সময় কাটছে। অপরদিকে, এসব পর্যটন এলাকাকে ঘিরে গড়ে ওঠা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকদেরও মন্দা সময় কাটাতে হচ্ছে। 

এদের অনেকেই প্রায় বেকার হয়ে পড়েছেন। লকডাউনে মানুষ রয়েছেন ঘরবন্দি। এদিকে লকডাউন শিথিল মনে করে অনেকেই নির্মল বিনোদনের উদ্দেশ্যে এসব দর্শনীয় স্থানে এলেও প্রবেশাধিকার না থাকায় তাদের ফিরে যেতে হচ্ছে। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনসহ দর্শনার্থীরা দর্শনীয় স্থানগুলো খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন।  

করোনার প্রাদুর্ভাবের আগে উত্তর জনপদের অর্ধ বঙ্গেস্বরী খ্যাত নাটোরের রানী ভবানীর রাজবাড়ী, প্রধানমন্ত্রীর দ্বিতীয় বাসভবন উত্তরা গণভবন (দিঘাপতিয়া রাজবাড়ী) পর্যটকদের আকর্ষনের শীর্ষে। এছাড়া রয়েছে বর্ষা মৌসুমের মিনি কক্সবাজার খ্যাত হালতি বিল, চলনবিলের ডুবন্ত সড়ক, চলনবিলের বিলসা এলাকার সৌন্দর্য্যময় বিশাল জলরাশি ও লালপুরের গ্রিনভ্যালীসহ রাজা মাহারাজা ও জমিদারদের প্রাসাদকে ঘিরে গড়ে তোলা দর্শনীয় স্থানগুলোতে দর্শনার্থীদের ভিড় লেগেই থেকেছে। 

কিন্তু করোনা প্রভাবে হঠাৎ থেমে গেছ এসব দর্শনীয় স্থানসহ পর্যটন এলাকার জনসমাগম। দোকানদারদের নেই বেচাকেনা।  ব্যবসা বন্ধও করতে পারছেস না তারা। দীর্ঘ ঘরবন্দি থাকার পর একটু প্রশান্তি নিতে পাশ্ববর্তী জেলাগুলোর অনেকেই ছুটে আসছেন নাটোরে। কিন্তু ফিরে যেতে হচ্ছে তাদের। এসব দর্শনার্থীরা দুর্ভোগ ও ভোগান্তিসহ নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। 
বিভিন্ন জেলা থেকে আসা দর্শনার্থীদের দাবি স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসব ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থানসমুহ প্রবেশের অনুমতি দেয়া হোক।

নাটোর আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক উত্তর বঙ্গবার্তা পত্রিকার সম্পাদক এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মালেক শেখ বলেন,‘দীর্ঘদিন গৃহবন্দি থাকার কারণে মানুষ বিশেষ করে নারী ও শিশুরা মনস্তাত্ত্বিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যেখানে অফিস আদালতসহ সবকিছুই রেগুলার হচ্ছে, সেখানে বিনোদন কেন্দ্রগুলো খুলে দেয়া উচিত।’

নাটোর পৌর মেয়র উমা চৌধুরী জলি বলেন,‘কিছু কিছু ঐতিহাসিক স্থান যেমন রানী ভবানী রাজবাড়ী ও উত্তরা গণভবন স্বাস্থ্যবিধি মেনে উন্মুক্ত করা যেতে পারে। তবে ব্যাপক জনসমাগম করা থেকে বিরত থাকার বিষয়টি সবাইকে গুরুত্ব দিতে হবে।’

এদিকে, করোনার কারণে দর্শনার্থীদের প্রবেশাধিকার বন্ধ থাকায় গত ছয় মাসে কেবলমাত্র উত্তরা গণভবনের রাজস্ব হারাতে হয়েছে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা। উত্তরা গণভবনের হিসাব সহকারী নুর মোহম্মদ এই রাজস্ব ঘাটতির বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান,‘দর্শনার্থীদের প্রবেশ বন্ধ করে দেয়ায় গত মার্চ মাস থেকে এই রাজস্ব আসছে না।’

সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু হাসান জানান,‘গত ছয় মাসে রানী ভবানী রাজপ্রাসাদের রাজস্ব ঘাটতি প্রায় ২০ লাখ টাকা। মার্চ মাস থেকে প্রবেশাধিকার বন্ধ থাকায় কোন রাজস্ব আদায় নেই। এছাড়া জেলার অন্যান্য দর্শনীয় স্থানসমূহে প্রবেশের অনুমতি না থাকায় রাজস্ব আদায় বন্ধ রয়েছে।’

জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ জেলার পর্যটন খাতের রাজস্ব ঘাটতির সত্যতা নিশ্চিত করে জানান,‘নাটোর হচ্ছে রাজা-মহারাজা ও জমিদার অধ্যুষিত ইতিহাস ঐতিহ্যের জেলা। এখানে রাজা মহারাদের রাজপ্রাসাদ, বিশাল চলনবিলসহ বিপুল সংখ্যক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। করোনার কারণে গত মার্চ মাস থেকে দর্শনীয়স্থান সমূহ দর্শনার্থীদের প্রবেশাধিকার বন্ধ রাখা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন  পেশাজীবী সংগঠনসহ বিশিষ্টজনরা ইতিহাসখ্যাত দর্শনীয় স্থানগুলো উন্মুক্ত করে দেওয়ার অনুরোধ করেছেন। এগুলো খুলে দেয়া যায় কী-না  সে বিষয়ে কমিটির মিটিং আহ্বান করা হয়েছে।’

সম্মিলিত মতামতের ভিত্তিতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক। 

এআই//এমবি 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি