ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪

নানা সমস্যায় জর্জরিত মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

প্রকাশিত : ১৩:২৮, ৯ এপ্রিল ২০১৯

চিকিৎসক ও জনবল সংকটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এ সব সমস্যার মধ্যে হাসপাতালটি যেন নিজেই রোগীতে পরিণত হয়েছে। স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উপজেলার ৫ লক্ষাধিক মানুষ।

১৯৬৫ সালে উপজেলা সদরের ঠিক উল্টো পাশে পানগুছি নদীর তীরে সানকিভাঙ্গা গ্রামে ৩০টি শয্যা নিয়ে  হাসপাতালটির যাত্রা শুরু হয়। দীর্ঘ ৫৩ বছর পরে ২০১৮ সালে ৫০ শয্যায় উন্নিত হলেও, আগের জনবল ও অবকাঠামো নিয়ে কোনও মতে চলছে স্বাস্থ্য সেবা। হাসপতালটিতে ৩৬টি চিকিৎসকের পদ থাকলেও রয়েছেন মাত্র তিনজন। এছাড়া দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর ২১৮ পদের মধ্যে ৬৩টি শূন্য রয়েছে। আবাসিক মেডিকেল অফিসার, এনেসথেসিয়া, গাইনি, কার্ডিওলজি, অর্থোপেডিক্স, চক্ষু ও শিশুসহ জুনিয়র কনসালটেনন্ট ও সহকারী সার্জনের মত গুরুত্বপূর্ণ সব পদ শূন্য রয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, একজন মেডিকেল অফিসার ও জুনিয়র কনসালটেন্ট সার্জারি দিয়ে চলছে হাসপাতালটি। গ্লাসের পরিবর্তে পলিথিন দিয়ে কোনমতে সচল রাখা হয়েছে হাসপাতালের একমাত্র এ্যাম্বুলেন্সটি। জনবলের অভাবে রোগীদের পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য প্যাথলজি বিভাগটি বন্ধ রয়েছে চার বছর ধরে। তবে হাসপাতালের একটি কক্ষে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্রাকের ব্যবস্থাপনায় শুধু কফ পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে।

চিকৎসক না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে এলাকাবাসী, রোগীর স্বজনরা দ্রুত চিকিৎসকের পদগুলো পূরণে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।

তিনদিন চিকিৎসা গ্রহণের পর কোনও উন্নতি না হওয়ায় বাধ্য হয়ে হাসপাতালে ভর্তি অসুস্থ ভাই হেলালকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন আব্দুস ছালাম।

আব্দুস ছালাম বলেন, আমরা অনেক দূর থেকে ট্রলার ও নৌকা যোগে এখানে চিকিৎসা নিতে আসি। কিন্তু যখন বলা হয় চিকিৎসক নাই, তখন কোনও উপায় থাকে না। বাধ্য হয়ে টাকা পয়সা ধার করে খুলনা নিয়ে যেতে হয়।

রুবিয়া বেগম বলেন, বাবাকে শ্বাস কষ্ট জনিত রোগের চিকিৎসা করাতে এসেছি। কিন্তু কয়েকদিন ধরে একই অবস্থা থাকায় হতাশার মধ্যে পড়েছি। একজন চিকিৎসক দৈনিক ওয়ার্ডে এসে ঘুরে যান, কিন্তু কোনও উপকার হয় না। গরীব মানুষ দূরে কোথাও চিকিৎসা নিতে যেতে পারি না, আমরা হাসপাতালে আরও চিকিৎসক চাই।

খাউলিয়া গ্রামের অটো ভ্যান চালক মো. মহারাজ শেখ বলেন, দুই মাস ধরে পেটের পীড়া ও শরীর দূর্বল হওয়ায় সকালে হাসপাতালে এসেছি। ডাক্তার পরীক্ষার কথা বলেছে। হাসপাতালে পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায়, হাসপাতালের বাইরে একটি প্যাথলজিতে প্রসাব ও রক্ষ পরীক্ষা করাই। মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যে পরীক্ষা রিপোর্ট দিয়েছে। কিন্তু পাঁচ মিনিটে সঠিকভাবে পরীক্ষা হয়েছে কি না, তা বোঝার সাধ্য আমার নেই। হাসপাতালে সরকারিভাবে পরীক্ষার জায়গা থাকলে মনকে বোঝাতে পারতাম।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা প্রদানকারী উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার মনিকা মল্লিক বলেন, হাসপাতালে প্রতিদিন অনেক রোগী আসে। এত রোগীকে আমার একার পক্ষে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. কামাল হোসেন মুফতি বলেন, ৩০ শয্যা থেকে হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নিত হলেও, পূর্বের জনবলে আমাদের সেবা দিতে হচ্ছে। অনুমোদিত জনবলের বেশিরভাগই শূন্য। প্রত্যন্ত অঞ্চলে চিকিৎসকরা এসে থাকতে চায় না। হাসপাতালের বর্হিবিভাগে প্রতিদিন ২ থেকে আড়াইশ রোগী চিকিৎসা নিতে আসে। এছাড়া হাসপাতালের একমাত্র এ্যাম্বুলেন্সটি প্রতি মাসেই মেরামত করতে হয়। জনবল যা আছে তা দিয়ে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা দূরূহ হয়ে পরে।


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি