ঢাকা, শনিবার   ২৪ মে ২০২৫

ডয়চে ভেলের প্রতিবেদন

নির্বাচন নিয়ে সেনাপ্রধানের বক্তব্য : কে কী ভাবছেন?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২১:৩০, ২৩ মে ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

ঢাকা সেনানিবাসের সেনা প্রাঙ্গণে অফিসার্স অ্যাড্রেসে সেনাপ্রধানের বক্তব্য ঘিরে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। তিনি তার বক্তব্যে সংস্কার প্রসঙ্গে বলেন, কী সংস্কার হচ্ছে, কিভাবে হচ্ছে, এ বিষয়ে তার কিছু জানা নেই। এ বিষয়ে তার সঙ্গে কোনো পরামর্শ বা আলোচনা করা হয়নি। মানবিক করিডর বিষয়ে সিদ্ধান্ত একটি নির্বাচিত সরকার থেকেই আসতে হবে এবং তা বৈধ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই হতে হবে।

এছাড়া সেনাপ্রধান জানিয়েছেন, ডিসেম্বরেই জাতীয় নির্বাচন হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

নির্বাচন নিয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের এমন বক্তব্যের পর থেকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সরকারেও। কেউ কেউ তার বক্তব্য যৌক্তিক মনে করছে। আবার কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা 'অপ্রত্যাশিত' বলে মন্তব্য করছেন।

তার এই বক্তব্যের পর ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠে বিএনপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল। নবগঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এখনো ভিন্ন পথে। আগে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের সরাসরি বিরোধিতা না করলেও এ বিষয়ে অনেকগুলো কঠিন ও সময়সাপেক্ষ শর্ত জুড়ে দিয়েছে তারা।

গত বুধবার ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের দাবিতে আবার সরব হয়েছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা না করলে বিএনপির পক্ষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে - এবার এমন কথাও জানিয়েছে দলটি। বৃহস্পতিবার গুলশানে দলের চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ হুঁশিয়ারি দেন বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

সংবাদ সম্মেলনের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, "সেনাপ্রধান যৌক্তিকভাবেই তাদের অবস্থান ব্যাখা করেছেন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করা তো সেনাবাহিনীর দায়িত্ব না। সবাই তো একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করেছে। দেশের সর্বত্র এখন বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে।

সরকার এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। ফলে যত দ্রুত সম্ভব একটা নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা সরকারের দায়িত্ব। সেনাপ্রধান যেটা বলেছেন, সেটা তো দেশের সব মানুষের দাবি। এটাকে ভিন্নভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। তারা তো তাদের নিজেদের কাজে ফিরে যেতে চায়।
কতদিন তারা রাস্তায় থাকবে?”

সেনাপ্রধানের বক্তব্য সম্পর্কে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, "তার বক্তব্য নিয়ে এখনো আমরা দলীয়ভাবে কোনো আলোচনা করিনি। তবে আমার ব্যক্তিগত মত হলো, নির্বাচন কবে হবে সেটা সরকারের সিদ্ধান্ত। আমরা যারাই দাবি করছি, তারা কিন্তু সরকারের কাছেই দাবি করছি। এই জায়গায় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এই ধরনের বক্তব্য সরকারের উপর বা অন্যান্য দলের ক্ষেত্রে কতটুকু ভালো বার্তা দেয়? সেনাপ্রধানের এই ধরনের কোনো মন্তব্য করার সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না। এর আগেও আমরা সেনাপ্রধানের এই ধরনের মন্তব্য শুনেছি। একেবারে ডিসেম্বরেই ভোট হতে হবে- ওনার কাছ থেকে এই ধরনের মন্তব্য অগ্রহণযোগ্য।”

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. জাহেদ উর রহমান মনে করেন, "নির্বাচন নিয়ে যখন রাজনৈতিক দলগুলো এক ধরনের বিবাদে জড়িয়ে পড়েছিল তখন সেনাপ্রধানের এই বক্তব্য একটা বার্তা দেয়।'' ডয়চে ভেলেকে তিনি আরো বলেন, ‘‘আমি মনে করি, অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনী অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে। তাদের যে ক্ষমতা দখলের কোনো মোহ নেই সেটা তারা পরিস্কার করে বুঝিয়ে দিয়েছেন। গত কয়েকদিন ধরে ক্যান্টনমেন্টে কী হচ্ছে তা নিয়ে কিন্তু নানা মহলে আলোচনা হচ্ছিল। সেই জায়গায় নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়ে সেনাপ্রধানের এই বক্তব্য অত্যন্ত ইতিবাচক। সেভাবেই বিষয়টি দেখতে হবে।”

ডিসেম্বরে ভোট নিয়ে দলের অবস্থান স্পষ্ট করতে গিয়ে এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন বলেন, "এনসিপি তো নির্বাচনের বিরুদ্ধে নয়। তবে আমরা পরিস্কার করে বলেছি, বিচার, সংস্কার ও গণভোটের পরই জাতীয় নির্বাচন হওয়া উচিত। মানুষ তো শুধু একটা নির্বাচনের জন্য জীবন দেননি। আমরা বলেছি, এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। সরকার সংস্কার কমিশন গঠনের আগেই শেখ হাসিনার করা আইনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। ফলে এই কমিশন ভেঙে দিয়ে নতুন কমিশন গঠন করতে হবে। আর নির্বাচন কমিশন জাতীয় নির্বাচনের জন্য কতটুকু প্রস্তুত, সেটা দেখার জন্য হলেও আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে হবে।”

এদিকে বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন এনসিপি নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ। ফেসবুক পোস্টে হাসনাত বলেন, ‘এনসিপিকে নির্বাচনবিরোধী আখ্যা দিয়ে সচেতনভাবেই এক ধরনের কলঙ্ক দেওয়ার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি ছাত্র উপদেষ্টারা দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকতে চায়—এমন গুজব ছড়িয়ে নেতিবাচক ইমেজ তৈরি করার নানা কার্যক্রমও চলমান। এই চক্রান্ত কয়েকটি দিক থেকে পরিচালিত হচ্ছে।’

সেনাপ্রধানের বক্তব্য ইস্যুতে তিনি লিখেছেন, ‘আমাদের সাব-কনশাস মাইন্ডে আর্মিকে রাজনৈতিক সালিসের ক্ষমতা দিয়ে দেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। অথচ বিএনপি ঐতিহাসিকভাবে সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের ভুক্তভোগী একটা দল। আমরা এখনো ওয়ান-ইলেভেনের ইতিহাস ভুলে যাইনি, এখনো তারেক রহমানের নির্যাতনের ঘটনা আমাদের স্মরণে রয়েছে। সেনাবাহিনী আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সদা সতর্ক পাহারাদার।দেশের প্রয়োজনে, সার্বভৌমত্বের প্রয়োজনে, আমরা প্রয়োজন হলে সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করব। কিন্তু গণতান্ত্রিক অধিকার এবং সুষ্ঠু ক্ষমতা হস্তান্তরের যে আকাঙ্ক্ষা থেকে ২০২৪-এর অভ্যুত্থান ঘটেছে, সেখানে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপকে আমরা মেনে নেব না। রাজনৈতিক সালিসের সুযোগ দিয়ে আরেকটি ওয়ান-ইলেভেনের পথ কেউ প্রশস্ত করছে কি না—তা নিয়ে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।’

নির্বাচন কমিশন ডিসেম্বরে ভোটের জন্য প্রস্তুত কিনা জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার বেগম তাহমিদা আহমদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিন্তু কথা হলো, রূপরেখা নিয়ে যে আলোচনা হচ্ছে, সেটা কিন্তু নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করতে পারবে না। এটা সরকারের কাছ থেকে আসতে হবে। অন্তত এই নির্বাচন কমিশন সেটা পারবে না। এখন সরকার যদি বলে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে, আমরা সেটাই করবো। যদি অন্য কিছু বলে, সেটা করবো। আমরা ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি নিচ্ছি। সরকার বললেই আমরা রূপরেখা দিতে পারি। আসলে নির্বাচনের সবকিছু সরকারের উপরই নির্ভর করছে। তবে আমরা আমাদের প্রস্তুতি জোরেসোরেই এগিয়ে নিচ্ছি।”

এমবি//
 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি