ঢাকা, মঙ্গলবার   ০১ জুলাই ২০২৫

পাকা সড়কের অভাবে চরম দুর্ভোগে দুর্গাপুরবাসী

বেনাপোল প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৮:০৪, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২২

Ekushey Television Ltd.

যশোরের শার্শা উপজেলার লক্ষনপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড দুর্গাপুর গ্রামের প্রায় দুই কিলোমিটার কাঁচা সড়কটি পাকা না করায় জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন শত শত লোককে কাঁদা ভেঙে যাতায়াত করতে হয়। বর্ষায় সড়কটি কর্দমাক্ত হয়ে যায়। ফলে কোনো ভ্যান, সাইকেল, মোটরসাইকেল তো দূরের কথা, মানুষ পায়ে হেঁটে চলতেও কষ্টের শিকার হন। বিকল্প কোন সড়ক না থাকায় গ্রামবাসী বাধ্য হয়েই কাঁদা-পানি মাড়িয়ে প্রতিনিয়ত চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে। 

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই এ সড়কটি কাঁচা। সামান্য বৃষ্টি হলেই চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ে। প্রতিনিয়তই মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কাঁচা সড়ক পাকা হবে এ আশায় এলাকাবাসী বছরের পর বছর অপেক্ষায় আছেন। কিন্তু কাঁচা সড়ক আর পাকা হয় না। জনপ্রতিনিধিরা বারবার শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু আজ অবধি ওই সড়কটিতে কোন কাজ হয়নি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘদিনেও সংস্কার না হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই কাঁদা পানিতে একাকার। সড়কের মাঝখানে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য বড় বড় গর্তের। আর তাতে প্রতিনিয়ত জমছে পানি। চলাচল করতে পারছে না যানবাহন। পায়ে হেটে চলাচল করাও এখন কষ্টসাধ্য। সড়কটি পাকা হলে একদিকে যেমন বিভিন্ন গ্রামের ছাত্র-ছাত্রী ও লোকজনের যাতায়াতে ভোগান্তি কমবে, অন্যদিকে মুমূর্ষু রোগী বহনে বেগ পেতে হবে না। শ্রমজীবী মানুষেরা ভ্যান, অটোরিকশা চালিয়ে সহজে জীবিকা-নির্বাহ করতে পারবেন। এলাকার কৃষকরা ধান, পাট, কাঁচা ফসল কম খরচে বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে পারবেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, তাদের সড়কটি এ জীবনদশায় তারা আর পাকা দেখে যেতে পারবে না। এ গ্রামের শিক্ষার্থীরা কাঁচা সড়কটি ব্যবহার করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে পড়াশোনা করতে দুই কিলোমিটার দূরের বাহাদুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও রহিমপুর আলিম মাদ্রাসায় যায়। এছাড়াও এই গ্রাম থেকে দেশের বৃহত্তম বেনাপোল স্থল বন্দরে কাজ করতে যাওয়ার জন্য একমাত্র সড়ক এটি।

দুর্গাপুর গ্রামের জাকির হোসেন বলেন, গ্রামের মানুষের যাতায়াতের একটি মাত্র সড়ক এটি। বর্ষার দিনে এই সড়ক দিয়ে একেবারেই চলাচল করা যায় না। অনেক সময় মাটি পিচলে বয়স্ক মানুষ পড়ে গুরুতর আহত হয়। মোটরসাইকেল, ভ্যান গাড়ি, সাইকেল কাদাঁর মধ্যে ডেবে গিয়ে উল্টে যায়। প্রসূতি মা কিংবা জরুরী রোগী হাসপাতালে নেওয়ার জন্য এম্বুলেন্স কিংবা গাড়ি গ্রামের মধ্যে ঢোকানো যায় না। আমাদের এই দুর্ভোগ দেখার কেউই বুঝি নেই।

স্থানীয় বাসিন্দা কবির হোসেন বলেন, দিনের বেলায় কোন রকম করে জুতা হাতে নিয়ে কাঁদা পার হওয়া যায়। কিন্তু রাতের বেলায় আর যাওয়া যায় না। আমরা এলাকাবাসী এই সড়কটি দ্রুত পাকা হওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে ওই গ্রামের ইউপি সদস্য রাসেদ আলী বলেন, সড়কটির জন্য অনেক দপ্তরে যোগাযোগ করেছি কিন্তু কারো কাছ থেকে কোন প্রকার আশ্বাস পায়নি।

স্থানীয় সমাজকর্মী জহুরুল ইসলাম জানান, বর্তমান চেয়ারম্যানের ব্যর্থতার কারণে এ সড়কটি পাকা হচ্ছে না। শুধু এ সড়ক নয় এলাকার উন্নয়নে তিনি কোন কাজই করেন না। তিনি এমপিকে বাদ দিয়ে মেয়রের রাজনীতি করার কারণে এমপির কাছে কোন কাজের জন্য যান না। অন্যান্য চেয়ারম্যানরা কাজ পেলেও তিনি এলাকার উন্নয়নে কাজ পান না।

তিনি আরও জানান, এই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আনোয়ারা খাতুন ২০১৮ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সাড়ে ৪ বছর চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন। এর আগে তার স্বামী মরহুম সালাহউদ্দিন আহমেদ শান্তি এই ইউনিয়নে ২ বছর চেয়ারম্যান ছিলেন। তার মৃত্যুতে উপ-নির্বাচনে তার স্ত্রী আনোয়ারা খাতুন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০২১ সালের ২৯ নভেম্বরের ইউপি নির্বাচনে আবারও চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আনোয়ারা খাতুন।

এ ব্যাপারে লক্ষণপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ারা খাতুন বলেন, আমার ইউনিয়নের দূর্গাপুর গ্রামে একটি রাস্তাও পাকা নেই। খুবই কষ্টে আছে জনগণ। গত বছরও ঐ রাস্তাটির মাপ হয়েছিলো কিন্তু আমার ইউনিয়নে কোন কাজ আসেনি। আমি মেয়র সমর্থিত চেয়ারম্যান হওয়ায় এমপি সাহেবের পক্ষ থেকে আমি কোন কাজই পাচ্ছিনা।

এ ব্যাপারে যশোর-১ (শার্শা) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য আলহাজ শেখ আফিল উদ্দিন বলেন, শার্শা উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে রাস্তাঘাটসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের কাজ চলছে। আমার কাছে গ্রামের উন্নয়নে কোন বিভেদ নেই। তিনি চেয়ারম্যান হওয়ার পর এ পর্যন্ত আমার কাছে কোন কাজের জন্য আসেননি। তিনি কোন কাজ নিয়ে এলে আমি যদি কাজ না করে দিতাম তখন তিনি আমার ব্যাপারে কথা বলতে পারতেন। তিনি এলাকার উন্নয়নে কতটুকু আন্তরিক সেটা এলাকার লোকজনই বলবে। 
কেআই//
    
 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি