ঢাকা, বুধবার   ০১ মে ২০২৪

প্রতিটি আইনে মানবিকতার স্পর্শ থাকতে হবে: প্রধান বিচারপতি

শাকেরা আরজু

প্রকাশিত : ১৫:৩৬, ৩১ আগস্ট ২০২৩

প্রতিটি আইনে মানবিকতার স্পর্শ থাকতে হবে। আইন যদি দরিদ্রকে পিষে দেয় আর ধনী ব্যক্তি যদি আইনকে পিষে দেয় তাহলে রাষ্ট্র এবং বিচার বিভাগ সঠিকভাবে চলছে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দীকী। 

শেষ কার্যদিবসে আজ বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের জনাকীর্ণ এজলাসে এসব বক্তব্য রাখেন দেশের ২৩তম বিদায়ী প্রধান বিচারপতি। 

প্রিয় সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনের দীর্ঘ কর্মজীবনের শেষ কার্যদিবস প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকির। তাই বৃহস্পতিবার সকালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ১ নম্বর বিচারকক্ষে বিদায়ী সংবর্ধনায় অংশ নেন আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ও আইনজীবীরা। এসময় এজলাস কক্ষ ছিল পরিপূর্ণ। 

সংবর্ধনায় প্রথমে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বিদায়ী প্রধান বিচারপতির কর্মময় জীবন নিয়ে বক্তব্য দেন। পরে বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকির।

এরপর প্রধান বিচারপতি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। বক্তব্যে ব্যক্তি জীবন, পরিবার, রাষ্ট্র, বিচারালয় নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন তিনি। এক পর্যায়ে মা-বাবার কথা স্মরণ করে আবেগআপ্লুত হন প্রধান বিচারপতি।

আইনজীবীদের বিভক্তি, মতভেদ ও এর প্রতিক্রিয়া বিচারালয়কে ক্ষতিগ্রস্ত করে বলে মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

বিচার বিভাগ প্রজান্তের হৃদপিণ্ড বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, শক্তিশালী গনতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য বিচার শক্তিশালী বিচারবিভাগ অপরিহার্য। তিনি বলেন, বিচার বিভাগ জনগণের মৌলিক অধিকারের রক্ষক, সংবিধানের রক্ষক। তাই বিচারকদের সাহসী ও সুবিচারক হতে হবে। বিচার বিভাগ যদি আইনের নিরপেক্ষ প্রয়োগ করতে ব্যর্থ বা পিছ পা হয় তাহলে রাষ্ট্র এবং নাগরিক ক্ষতিগ্রস্ত হতে বাধ্য। 

স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর শহীদদের স্মরণ রেখে বিচার পরিচালনার আহ্বান জানিয়ে দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি বলেন, সংবিধানপ্রণেতারা স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা করেছেন-সে স্বাধীনতা কার্যকর করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গের এবং প্রতিটি নাগরিকের। সে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে ’৭১-এর রক্ত বৃথা যাবে। মনে রাখতে হবে জনগণের ঐক্যবদ্ধ বীরত্ব এবং সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে আমরা এই দেশ, এই বিচারালয়কে পেয়েছি।

আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমার চমৎকার শেখার অভিজ্ঞতা হয়েছে। শিখেছি বিজ্ঞ আইনজীবীদের আলোচনা, যুক্তি, আইনি ব্যাখ্যা, ঘটনার বিশ্লেষণ করার কৌশল থেকে।আমি প্রতিটি স্তরে বারের কাছে ঋণী। বার হলো বিচারকদের বিচারক। আমি সব সময় তেমনটিই ভেবেছি। আমি চেষ্টা করেছি ধৈর্য সহকারে শোনার, যত্ন সহকারে বিবেচনা করার, সঠিকভাবে বোঝার এবং ন্যায়সঙ্গত সিদ্ধান্ত দেওয়ার।

দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী অবসরে যাচ্ছেন আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর। কিন্তু সে সময় সুপ্রিম কোর্টে অবকাশকালীন ছুটি চলবে। সে জন্য বৃহস্পতিবার ছিল প্রধান বিচারপতির বিচারিক জীবনের শেষ কর্মদিবস।

বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ১৯৫৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮১ সালে জেলা আদালতে আইনজীবী হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট এবং ১৯৯৯ সালের ২৭ মে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। 

২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর বঙ্গভবনে প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ শপথ বাক্য পাঠ করান।

এএইচ


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি