ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪

প্রস্তাবনা উপস্থাপন না করতে দেওয়ায় অপমানিত বোধ করেছি: মাহবুব

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:৪৬, ১৫ অক্টোবর ২০১৮ | আপডেট: ১৯:০৫, ১৫ অক্টোবর ২০১৮

নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করতে তার নিজস্ব প্রস্তাবনা উপস্থাপন করতে না দেওয়ায় অপমানিত বোধ করেছেন বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। এজন্য তিনি নোট অব ডিসেন্টে দিয়ে সভা বর্জন করেন বলে জানিয়েছেন।

আজ সোমবার বিকেলে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে প্রেস বিফ্রিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি। এর আগে বেলা ১১টার দিকে কমিশন বৈঠক শুরু হলে হয়। সেখানে নিজের প্রস্তাবনা উপস্থাপন করতে চেয়ে না পেরে সভার ৭ মিনিটের মাথায় বেরিয়ে আসেন।

সভা বর্জনের ব্যাখ্যায় মাহবুব তালুকদার বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশীদারমূলক ও গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে কতিপয় প্রস্তাবনা শিরোনামে আমি যা আলোচনা করতে চেয়েছিলাম, আমাকে নির্বাচন কমিশন সভায় তা উপস্থাপন করতে দেওয়া হয়নি।

তিনি বলেন, ‘গত ৮ অক্টোবর ইসি সচিবালয় থেকে ইউও নোটের মাধ্যমে আমাকে আজকের সভায় তা উপস্থাপনার অনুরোধ জানানো হয়েছিল। আমাকে আমার প্রস্তাবনা উপস্থাপন করতে বলে তা না দেওয়ায় আমি আপমানিত বোধ করেছি।’

তিনি বলেন, ‘বাক প্রকাশের স্বাধীনতা ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা সংবিধান প্রদত্ত আমার মৌলিক অধিকার। নির্বাচন কমিশন কোনোভাবেই আমার এই অধিকার খর্ব করতে পারে না। এমতাবস্থায় অনন্যোপায় হয়ে আমি নির্বাচন কমিশনের এরকম সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছি এবং এর প্রতিবাদস্বরূপ নির্বাচন কমিশনের সভা বর্জন করেছি।

ইসি সভায় কি নিয়ে কথা বলেছিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনা মোতায়েন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন, নির্বাচনে নিরপেক্ষতা, নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও সরকারের সঙ্গে সংলাপ-এই পাঁচটি বিষয়ে কমিশন সভায় কথা বলতে চেয়েছিলেন।

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বিষয়ে এই কমিশনারের বক্তব্য, ‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলে নির্বাচনে অনিয়মের পথ বন্ধ হয়। নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ না হলে তা গণতন্ত্রের পূর্ণ বিকাশকে সমর্থন করে না। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশন দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতে আলোচনা করতে পারে।’

নির্বাচনে নিরপেক্ষতা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে নিরপেক্ষতা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের ওপর নির্ভর করে। নির্বাচনের সময় সংসদ সদস্যদের নিষ্ক্রিয় রাখা নির্বাচন কমিশনের একার ওপর নির্ভর করে না। এতে সরকারের সহযোগিতার দরকার হয়।’

ইসির সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের যথেষ্ট ক্ষমতা আছে। কিন্তু ক্ষমতা প্রয়োগে সীমাদ্ধতাও আছে। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনগুলোতে দেখা গেছে, রাজনৈতিক বাস্তবতায় কমিশন ক্ষমতা প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর ওপর খুব একটা নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারে না। ক্ষমতা প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে কীভাবে আরও নিয়ন্ত্রণাধীন করা যায়, তা দেখা উচিত।

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে’ ৫ দফা প্রস্তাব নিয়ে সভায় বক্তব্য দিতে চেয়েছিলেন মাহবুব তালুকদার। কিন্তু সেই সুযোগ না পাওয়ায় ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়ে তিনি বেরিয়ে যান।

গত ৮ অক্টোবর কমিশনে দেওয়া এক আনঅফিশিয়াল নোটে ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে’ ওই পাঁচ দফা প্রস্তাব দিয়েছিলেন মাহবুব তালুকদার।

ওই ৫ দফায় নির্বাচনী দায়িত্বে সেনাবাহিনীর কার্যপরিধি নির্ধারণ, সবার জন্য সমান ‍সুযোগ রেখে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আয়োজন, ভোটে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা, ইসির সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সরকারের সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে নিজের মতামত সেখানে তিনি তুলে ধরেন।

সোমবারের কমিশন সভায় ওই বিষয়গুলো নিয়েই বক্তব্য দিতে চেয়েছিলেন মাহবুব তালুকদার।

ওই পাঁচ দফা প্রস্তাব কমিশন সভার কার্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করারও অনুরোধ করেছেন এই নির্বাচন কমিশনার। 

এর আগে গত ৩০ আগস্ট একাদশ নির্বাচনে ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ব্যবহারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে ইসি সভা বর্জন করেন মাহবুব তালুকদার। তখনও নোট অব ডিসেন্ট দেন তিনি। নোট অব ডিসেন্টে উল্লেখ করেন, তিনি ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে নন। কিন্তু এখনই ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে নন তিনি। তার মতে ইভিএম খরুচে এবং দেশের অধিকাংশ মানুষ এর ব্যবহার জানেন না।

আরও পড়ুন 

নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে ইসির সভা বর্জন মাহবুব তালুকদারের

নোট অব ডিসেন্টে যা লিখেছেন মাহবুব তালুকদার

এ সংক্রান্ত আরো খবর

/ এআর /


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি