ঢাকা, বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪

বলতেন গাড়ি ব্যবসা, করতেন অনৈতিক কাজ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:২৮, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০

সবাই জানতেন তারা গাড়ি ব্যবসা করেন। কিন্তু এ ব্যবসার আড়ালে ছিল ভয়ংকর অপরাধ। ধরা খেয়ে নিজেরাই বললেন সব। শামিমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ এবং স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন। 

রাজধানীর এফডিসি গেটসংলগ্ন এলাকায় পার্টনারশীপে ‘কার একচেঞ্জ’ গাড়ি ব্যবসা শুরু করেন শামিমা। পরে তার স্বামীও নরসিংদীতে গাড়ি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হন। রাজনৈতিক উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের ব্যবহার করে তারা করেন তদবির বাণিজ্য। একে একে অবৈধ ব্যবসা। অস্ত্র, মাদক, চাঁদাবাজি এবং নারী পাচার করে অল্প সময়ের মধ্যে নংসিংদী ও ঢাকায় একাধিক বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লটসহ বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থের মালিক হয়ে যায়। এক পর্যায়ে গাড়ি ব্যবসার আড়ালে হয়ে ওঠে ভয়ংকর অপরাধী। অবৈধ টাকা উপার্জন করে ঐ টাকা পাচার করে বিদেশে। এছাড়াও তারা জাল টাকা, ডলার প্রস্তুতসহ বিভিন্ন দেশের মুদ্রা পাচারেও জড়িত ছিল।

গতকাল শনিবার সকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হতে দেশ ত্যাগের সময় অবৈধ অর্থসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে পাপিয়া এবং তার স্বামী সুমনও রয়েছেন। গ্রেফতারকৃত অন্যরা হলো, পাপিয়ার পিএস সাবিক্ষর খন্দকার (২৯) ও সুমনের পিএস শেখ তায়্যিবা (২২)। 

গতকাল শনিবার কাওরান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল এসব জানান। 

র‌্যাব জানায়, পাপিয়া আন্ডার ওয়ার্ল্ডের মাফিয়া চক্রের সদস্য। পাপিয়া ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে অস্ত্র ব্যবসাসহ বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ব্যবহার করে তিনি বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যেত। একজন মুসলিম নারী হয়েও নিয়মিত কালীপূজা করত পাপিয়া।

লে. কর্নেল শাফি উল্লাহ বুলবুল বলেন, তারা দীর্ঘদিন যাবত জাল টাকা প্রস্তুতসহ নরসিংদী ও রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অবৈধ অস্ত্র, মাদক ও নারীসংক্রান্ত অনৈতিক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল। এছাড়াও নরসিংদী জেলার বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় সন্ত্রাসী বাহিনীর মাধ্যমে চাঁদাবাজি করে আসছিল পাপিয়া ও সুমন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়া জানায়, সে একজন ব্যবসায়ী। তেজগাঁও বিএফডিসি গেটসংলগ্ন এলাকায় অংশীদারিত্বে তার একটি ‘কার একচেঞ্জ’ নামক গাড়ির শো রুম আছে। এছাড়া নরসিংদী জেলায় তার ‘কেএমসি কার ওয়াস অ্যান্ড অটো সলিউশন’ নামে একটি গাড়ি সার্ভিসিং সেন্টার আছে। এসব ব্যবসার আড়ালে সে অবৈধ অস্ত্র, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। 

গুলশানে অবস্থিত অভিজাত একটি হোটেলের ২১ তলায় তার দুটি রুম ভাড়া নেওয়া আছে। সমাজ সেবার নামে সে নরসিংদীর অসহায় নারীদের আর্থিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সহযোগিতার নামে তাদের অনৈতিক কাজে লিপ্ত করে বলে জানায়। বছরের অধিকাংশ সময় সে নরসিংদী ও রাজধানীর বিভিন্ন বিলাসবহুল হোটেলে অবস্থান করে। সেখান থেকে সে ও তার স্বামী ব্যাবসায়িক অংশীদারদের নারী সরবরাহ করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এবং তার কাছ থেকে পাওয়া রশিদ অনুযায়ী, গত তিন মাসে অভিজাত একটি হোটেলে বার খরচ ও রুম ভাড়া হিসেবে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা খরচ করেছেন তিনি।

লে. কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল আরও জানান, পাপিয়ার স্বামী সুমন চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, দেশে তার স্ত্রীর ব্যবসায় সহযোগিতার পাশাপাশি থাইল্যান্ডে বারের ব্যবসাও চালায় সে। দীর্ঘদিন যাবত অবৈধ অস্ত্র, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা বিচারাধীন আছে। স্ত্রীর মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের অসহায় নারীদের অনৈতিক কাজে ব্যবহার ছাড়াও অবৈধ অস্ত্র, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধের জন্য নরসিংদী এলাকায় তার কুখ্যাতি রয়েছে। নরসিংদী এলাকায় তার একটি ক্যাডার বাহিনী আছে। সেখানে একটি টর্চার সেল রয়েছে। নংসিংদী ও ঢাকায় তার একাধিক বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট ও প্লট আছে বলে জানা যায়।

শনিবার বিদেশ পাড়ি দেওয়ার উদ্দেশ্যে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গেলে র‍্যাব তাদের আটক করে। আটকের সময় তাদের নিকট হতে ৭টি পাসপোর্ট, বাংলাদেশি নগদ ২ লাখ ১২ হাজার টাকা, জাল ২৫ হাজার টাকা, ভারতীয় রুপি ৩১০, শ্রীলংকান মুদ্রা ৪২০, ১১ হাজার ৯০ ইউএস ডলার উদ্ধার করা হয়। 

এমএস/আরকে


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি