ঢাকা, শুক্রবার   ২০ জুন ২০২৫

বাংলাদেশ ও সরকারের বিরুদ্ধে অপতথ্য ছড়াচ্ছেন শোয়েব চৌধুরী: প্রেস উইং

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:২২, ২০ জুন ২০২৫ | আপডেট: ২০:২৪, ২০ জুন ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

প্রপাগান্ডা ছড়ানো বিতর্কিত সালাহ উদ্দিন শোয়েব চৌধুরী ফ্যাসিবাদের পতনের পর দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা নস্যাৎ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ এবং অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ভুয়া ও অপতথ্য ছড়াচ্ছেন বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।

বৃহস্পতিবার রাতে প্রেস উইংয়ের ফেসবুক পেইজে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, বহুল আলোচিত প্রপাগান্ডা ছড়ানোকারী সালাহ উদ্দিন শোয়েব চৌধুরী ১৮ জুন তারিখে আইসল্যান্ডভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ইন্টেল ড্রপ’-এ ‘১৯৭১ সালের প্রতিশোধ: পাকিস্তানের ডিপ স্টেট কীভাবে বাংলাদেশকে পুনরায় উপনিবেশ বানাতে চায় এবং ভারতের উপর ছায়া যুদ্ধ চালাতে চায়’ শীর্ষক একটি ভিত্তিহীন ও উসকানিমূল নিবন্ধ লিখেছেন।

তার এই অনুমান নির্ভর কলামে চৌধুরী অদ্ভুত দাবি করেছেন, পাকিস্তানের আইএসআই প্রান্তিকায়িত বিহারি সম্প্রদায়কে ব্যবহার করে বাংলাদেশকে পুনরায় উপনিবেশ বানাতে চাইছে। তার অযাচাইকৃত বর্ণনায় বলা হয়েছে, বিহারি শরণার্থী শিবিরগুলো অস্ত্র ও মাদক চোরাকারবার এবং জিহাদি নিয়োগের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

তিনি মনগড়া প্রতিবেদনে জোর দিয়ে বলেছেন যে ২০২২ সালের গোড়ার দিকে বেছে বেছে নিয়োগ দেওয়া বিহারিরা বিস্ফোরক, গেরিলা যুদ্ধ এবং উগ্রপন্থা বিষয়ে পাকিস্তানি প্রশিক্ষণ পেয়েছে, ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে ৫ হাজারের বেশি ‘প্রশিক্ষণ’ পেয়েছে এবং জুলাইয়ের শেষের দিকে এই সংখ্যা ৫০ হাজার সশস্ত্র সদস্যে পৌঁছেছে। বিবরণ অনুসারে, তিনি দাবি করেছেন যে এই সদস্যরা পরে পুলিশের ওপর আক্রমণ শুরু করে, জেল ভাঙার পরিকল্পনা করে এবং টার্গেটকৃত হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করে।

প্রেস উইং জানিয়েছে, শোয়েব চৌধুরী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ‘গোয়েন্দা সূত্রের’ বরাত দিয়ে নিবন্ধে আরও দাবি করেছেন, হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশ আইএসআই’র কঠোর নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে, প্রশিক্ষিত জঙ্গিরা মানব পাচারের রুট ব্যবহারের মাধ্যমে ভারতে অনুপ্রবেশ করে অস্থিরতা  উসকে দেবে।

প্রেস উইং জানায়, তার সবচেয়ে অদ্ভুত দাবি হলো, আইএসআই পরিকল্পিতভাবে অর্থের বিনিময়ে বিহারী নারীদের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণ ঘটিয়েছে, যাতে তারা ভারতীয় যৌনপল্লীতে গিয়ে টার্গেট করে ধনাঢ্য হিন্দুদের মধ্যে এইডসের ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে পারে। আবার তাদের মধ্যে ‘মারাত্মকভাবে অসুস্থ’ কেউ কেউ আত্মঘাতী ‘মানব বোমা’ হিসেবে কাজ করতে স্বেচ্ছায় রাজি হয়েছে।

চৌধুরী পাকিস্তানকে বাংলাদেশকে পুনঃদখল ও ভারতের অস্থিতিশীল করতে একটি হাইব্রিড যুদ্ধে লিপ্ত হিসাবে চিত্রিত করতে একটি ভূরাজনৈতিক চক্রান্তের অংশ হিসেবে এসব মিথ্যাচার উদ্ভাবন করেছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এটা জোর দিয়ে বলা জরুরি যে সালাহউদ্দিন শোয়েব চৌধুরীর ফ্যাসিবাদ-উত্তর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সুনাম ক্ষুণ্ন করার এবং দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রগতি নস্যাৎ করার লক্ষ্যে ভুল তথ্য ছড়ানোর দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।’

প্রেস উইং জানিয়েছে, চৌধুরীদের দাবি সম্পূর্ণ কাল্পনিক এবং এর কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ নেই।

বাংলাদেশে পাকিস্তানের আইএসআই গোপনে কাজ করার বা বিহারি সম্প্রদায়কে ‘অস্ত্র-সজ্জিত’ করার কোনো  গোয়েন্দা তথ্য নেই। ৫০ হাজারের বেশি বিহারীকে পাকিস্তান কর্তৃক নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে বলে যে দাবি করা হয়েছে তা ভিত্তিহীন, যার সমর্থনে কোনো প্রতিবেদন বা নথিভুক্ত ঘটনা নেই।

প্রেস উইংয়ের মতে, জুলাই আন্দোলনের সময় বিহারীদের দ্বারা ব্যাপক সহিংসতা পরিচালনার কোনো প্রমাণ নেই। বাস্তবে জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী স্বৈরশাসক হাসিনা সরকার নৃশংস দমন-পীড়ন চালিয়ে ১,৪০০-এরও বেশি লোককে হত্যা করায় জনরোষ সৃষ্টি করেছিল, যার ফলে পুলিশ ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। কিছু বিহারি নাগরিক হিসেবে জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে পারে, তবে সম্প্রদায়গতভাবে তাদের পরিকল্পিত সহিংসতার কোনো প্রমাণ নেই।

‘চৌধুরীর কল্পনার উলটোটা হলো আইএসআই বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণ করে না এবং এটি ভারতের মধ্যে মানব পাচারের নেটওয়ার্কও চালায় না। যদিও বিচ্ছিন্ন কিছু অবৈধ সীমান্ত অতিক্রমের ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো আইএসআই পরিচালিত ষড়যন্ত্রের অংশ নয়। প্রকৃতপক্ষে, ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে তারা বেআইনিভাবে তার নিজ নাগরিকদের বাংলাদেশে ঠেলে দিচ্ছে, যা বিবিসি ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো তাদের প্রতিবেদন তুলে ধরেছে।’

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আইএসআইয়ের পরিকল্পিতভাবে বিহারী নারীদের এইচআইভি সংক্রমিত করার দাবি শুধু মিথ্যাই নয় বরং অবাস্তবও, এর পক্ষে কোনো নথিভুক্ত প্রমাণ বা যৌক্তিক ভিত্তি নেই।

আন্তর্জাতিক সাংবাদিক অধিকার সংস্থাগুলো সাপ্তাহিক ভিন্নমতাবলম্বীদের লক্ষ্য করে অপতথ্য ছড়ানোর জন্য ব্লিৎজ পোর্টাল পরিচালনাকারী শোয়েব চৌধুরীর নিন্দা জানিয়েছে। তিনি আন্তঃধর্মীয় সংঘাত উসকে দেওয়ার পাশাপাশি অর্থ আত্মসাতের জন্যও দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন, যা একজন তথ্যদাতা হিসেবে তার বিশ্বাসযোগ্যতা আরো ক্ষুণ্ন করেছে।

তবে, দ্য ইন্টেল ড্রপ ৫ আগস্টের পরে ৩৮টি প্রচারণামূলক নিবন্ধ প্রকাশ করেছে, যার সবকটিতেই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনামলে বাংলাদেশকে তালেবানীকরণ করা হয়েছে হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। দ্য ইন্টেল ড্রপের পরিবেশিত সমস্ত বয়ান ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে মিলে যায় বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। 

এএইচ


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি