ঢাকা, শনিবার   ২৮ জুন ২০২৫

বাংলাদেশ নিয়ে চাপে মোদি!

সুজিত সজীব, ডেস্ক রিপোর্ট 

প্রকাশিত : ১৮:১৮, ২৮ জুন ২০২৫ | আপডেট: ১৮:২২, ২৮ জুন ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

বাংলাদেশের সঙ্গে টানাপোড়েনপূর্ণ সম্পর্ক মেরামতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ওপর চাপ বাড়াচ্ছেন দেশটির অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক পরিমণ্ডলের একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতা। ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, কূটনৈতিক মহল এবং নাগরিক সমাজ মনে করছে, ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের আরও অবনতি রোধে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

জানা গেছে, থাইল্যান্ডের ব্যাংককে অনুষ্ঠিত বিমসটেক সম্মেলনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মোদির বৈঠকের পর থেকেই এই চাপের মাত্রা আরও বৃদ্ধি পায়। ওই বৈঠকে মোদি বাংলাদেশের রাজনীতিতে "উসকানিমূলক বক্তব্য ও অস্থিতিশীল পরিবেশ" এড়িয়ে চলার আহ্বান জানান বলে দ্য সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট-এর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ভারতের পার্লামেন্টের পররাষ্ট্রবিষয়ক স্থায়ী কমিটির এক বিশেষ বৈঠকে বিশেষজ্ঞ ও সংসদ সদস্যদের মধ্যে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ‘সামনে এগিয়ে নেওয়ার’ জোরালো সুপারিশ উঠে এসেছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কংগ্রেস এমপি শশী থারুরের নেতৃত্বে এই কমিটির সঙ্গে চার শীর্ষ বিশেষজ্ঞের আড়াই ঘণ্টার দীর্ঘ আলোচনা হয়। বৈঠকটিতে দুই দেশের সম্পর্কের বর্তমান পরিস্থিতি এবং ভারতের ‘হারানো অবস্থান’ পুনরুদ্ধারের কৌশল নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়।

ভারতের প্রভাবশালী সংবাদপত্র দ্য হিন্দু সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, গতকাল শুক্রবার বিকেলে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে ভারতের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিব শংকর মেনন, বাংলাদেশে ভারতের সাবেক হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলী দাস, লেফটেন্যান্ট জেনারেল সৈয়দ আতা হাসনাইন (অব.) এবং জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ডিন অমিতাভ মাত্তু উপস্থিত ছিলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র দ্য হিন্দুকে জানায়, সব সংসদ সদস্য ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার সমস্যাগুলো সম্পর্কে গভীর সহমর্মিতা ও বোঝাপড়া দেখিয়েছেন। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক মেরামত করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁদের মধ্যে সত্যিকারের আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়েছে।


তিস্তা ও বাণিজ্য ঝুলে থাকা ইস্যু

কূটনৈতিক সূত্র বলছে, ভারতের ভেতরেই অনেক সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা মনে করেন, তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি ও সীমান্ত বাণিজ্যে জটিলতা বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ভারতের প্রতি নেতিবাচক ধারণা তৈরি করছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাদেশের পাটজাত পণ্যের আমদানিতে কঠোরতা আরোপ করে, শুধু সমুদ্রবন্দর দিয়ে ঢুকতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় — যা বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের ওপর চাপ বাড়িয়েছে বলে টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে।


ধর্মীয় নিপীড়ন নিয়েও উদ্বেগ

এদিকে বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও মন্দির ধ্বংসের অভিযোগেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, “ঢাকার খিলক্ষেতে দুর্গা মন্দির ভাঙচুর এবং সরকারিভাবে কার্যকর পদক্ষেপের অভাব ভারতের কাছে গুরুতর উদ্বেগের বিষয়” — এমনটি জানায় টাইমস অব ইন্ডিয়া।

রাজনৈতিক চাপ বাড়ছে

ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরার নেতারা, এই টানাপোড়েনের কারণে সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা, অভিবাসন এবং বাণিজ্যে বিরূপ প্রভাবের আশঙ্কা করছেন। কংগ্রেসের সিনিয়র নেতারা এবং তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদেরাও বিষয়টি নিয়ে সংসদে প্রশ্ন তুলেছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।

সম্পর্ক স্বাভাবিকের সংকেত

যদিও দুই দেশের মধ্যে একাধিক স্তরে যোগাযোগ চলছে, তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে হলে শুধু কথাবার্তায় নয়, বরং দৃশ্যমান অগ্রগতি আনতে হবে। বিমসটেক সম্মেলনে মোদি ও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে বৈঠককে ‘সম্পর্ক পুনর্গঠনের সূচনা’ বলে উল্লেখ করেছে দেশটির একাধিক সংবাদমাধ্যম।

এক আন্তর্জাতিক কূটনীতিকের বরাতে টাইমস অব ইন্ডিয়া এ বিষয়ে তাদের প্রতিবেদনে বলেন, “যদি এখন দুই দেশের সরকার কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে বিদ্যমান অবিশ্বাস আগামী নির্বাচনী রাজনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

এসএস//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি