ঢাকা, রবিবার   ০৬ জুলাই ২০২৫

বাযুদূষণে শীর্ষে ঢাকা, করণীয় কী?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:৪২, ২৬ নভেম্বর ২০১৯

Ekushey Television Ltd.

শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই ধুলায় ধূসর রাজধানী ঢাকা। বাতাসে ভাসছে ধুলা আর ক্ষতির উপাদান। এতে অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে বায়ুদূষণের সবসীমা। ফলে দিল্লিকে ছাড়িয়ে শীর্ষে এখন বাংলাদেশের রাজধানী। দূষিতের দিক থেকে যার আশেপাশে নেই কেউ। 

বায়ুর গুণমান নিয়ন্ত্রক সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়ালের তথ্যনুযায়ী, ভারতের ‘গ্যাস চেম্বার’ হিসেবে পরিচিত দিল্লির বাতাসের চেয়েও বেশি দূষিত ঢাকার বাতাস। সংস্থাটি বিশ্বের শহরগুলোতে প্রতি ঘণ্টায় বায়ুর মান নিয়ে প্রতিবেদন দিয়ে থাকে। 

তাদের দেয়া তথ্যে, গত চারদিন ধরে দূষিত বায়ুর তালিকায় শীর্ষে ঢাকা। যার বায়ুমান ২৪২। ২১১ ও ১৯৮ স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে অবস্থান করছে দিল্লি ও লাহোর। 

পরিবেশবিদরা বলছেন, বায়ুর মান যখন দুইশ অতিক্রম করে, তখন ওই শহরের বাসিন্দাদের সুস্থ জীবন নিয়ে তৈরি হয় শঙ্কা। এক্ষেত্রে, বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা পিএম ২ দশমিক ৫ এর মাত্রাকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়। 

কেননা, এতে করে পরিবেশের ভয়াবহতা থেকে শুরু করে মানুষের শ্বাস প্রক্রিয়া আক্রান্ত করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। বিশ্বের দূষিত শহরগুলোতে মানুষের আয়ু হ্রাস, মৃত্যু ও স্বাস্থ্যঝুঁকির অন্যতম কারণ এ ক্ষতিকর ধূলিকণা। গত ৬ দিনে ঢাকার বায়ুর সূচক সর্বনিম্ন ছিল ১০৯ আর সর্বোচ্চ ২৮৬। 

ফলে প্রশ্ন উঠেছে, ঢাকায় বায়ু দূষণ জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত জরুরি অবস্থার দিকে যাচ্ছে কী-না? এর থেকে উত্তরণের উপায় বা করণীয় কী হতে পারে? 

পরিস্থিতি বিবেচনা করে বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক ডা. আব্দুল মতিন বলছেন ‘জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা জারি করা দরকার।’ বায়ু দূষণের অসহনীয়তার কথা স্বীকারও করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রীও।

আশার কথা হলো, বায়ুদূষণ নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকেও কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে তা কতটুকু সুফল বয়ে আনতে পারবে তা নিয়ে রয়েছে শঙ্কা। 

সোমবার (২৫ নভেম্বর) বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সচিবালয়ে এক জরুরি আন্তমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে পরিস্থিতি উত্তরণের জন্য বেশকটি উদ্যোগের কথা জানানো হয়।

সভায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘ঢাকার বায়ু মান দিনকে দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। কয়েকমাস আগেও ঢাকার বায়ু দূষণের মান তিন থেকে থেকে চার নম্বরে ছিল। কিন্তু গত কয়েকদিনে বিশ্বের সবেচেয়ে দূষিত শহর হয়ে উঠেছে এ রাজধানী।’ 

এমন পরিস্থিতির কথা জানিয়ে বেশ কয়েকটি উদ্যোগের কথা জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে ইটভাটায় যাতে দূষণকারী পদার্থ বের না হয় তা নিশ্চিত করা হবে। ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনকে প্রতিদিন সকাল ও দুপুরে দুই বার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় পানি ছিটাতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটি (বিআরটিএ) এবং মেট্রোরেল প্রকল্পকেও নিজস্ব উদ্যোগে পানি ছিটানোর অনুরোধ করা হয়েছে।’

তবে এগুলো অস্থায়ী হওয়ায় তা কতটা কাজে দেবে তা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন।

দুই সিটির পরিত্যক্ত বর্জ্য না পোড়ানোর অনুরোধ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘ইট, বালু, মাটিসহ নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনকারী ট্রাক বা গাড়িগুলো যাতে অবশ্যই ঢেকে মালামাল পরিবহন করে তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ 

শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে গৃহীত পদক্ষেপের কথা জানাতে গিয়ে শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘আগামী ১৭ ডিসেম্বর থেকে সচিবালয়ের চারপাশ অর্থাৎ জিরো পয়েন্ট, পল্টন মোড়, কদম ফোয়ারা, শিক্ষাভবন মোড় হয়ে জিরো পয়েন্ট এলাকাকে নীরব জোন বা শব্দ বিহীন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হবে। এ এলাকায় কোনো পরিবহনকে কোনো প্রকার হর্ন বাজাতে বা শব্দ সৃষ্টি করতে দেওয়া হবে না।

ঢাকা শহরে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণের পাইলট কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এটা বাস্তবায়ন করা হবে। শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে হাইড্রোলিক হর্ন পুরোপুরি বন্ধে কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শহরে অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রয়োজনীয় শব্দের উৎস সন্ধান করে তা বন্ধ করা হবে।’

মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘নগরজুড়ে বিভিন্ন স্থানে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে এই ধুলাই হয়ে উঠেছে রাজধানীবাসীর নিত্যসঙ্গী। গত আট বছর ধরে এই  উৎস ক্রমেই বাড়ছে। ফলে বায়ু দূষণ মোকাবিলায় দূষণের উৎস বন্ধ করে শহরের বিভিন্ন স্থানে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি ঢাকার চারপাশের জলাশয়গুলোকে রক্ষা করতে হবে। একইসঙ্গে সরকারি-বেসরকারি অবকাঠমো ও বিভিন্ন কাজে সমন্বয় করা প্রয়োজন।’

মন্ত্রী বলেন, ‘ইউটিলিটি সার্ভিসের কাজের জন্য সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় করতে হবে। এলিভেটেড এক্সপ্রেস-হাইওয়েসহ বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। শহরের বিভিন্ন স্থানে ভবন নির্মাণের সময় পানি ছিটানো, যন্ত্রপাতি যত্রতত্র ফেলে না রাখা ও নির্মাণের ক্ষেত্র নির্ধারিত বেষ্টনীর মধ্যে আছে কি না তা দেখতে হবে বলেও জানান তিনি।’

এআই/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি