ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪

মাইজভান্ডার দরবারে বসেছে মিলন মেলা

ওমর ফারুক চৌধুরী জীবন

প্রকাশিত : ২২:০৯, ২৪ জানুয়ারি ২০২০ | আপডেট: ২২:১২, ২৪ জানুয়ারি ২০২০

মাইজভান্ডার দরবার শরীফ

মাইজভান্ডার দরবার শরীফ

১০ মাঘ, মাইজভান্ডারী তরিকার প্রবর্তক হযরত মওলানা শাহ্‌ ছুফী সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (কঃ)-এর ওফাত দিবস। এ উপলক্ষে মাইজভান্ডার দরবারে বসেছে হাজার হাজার আল্লাহ, রাসুল (সঃ) ও ওলী প্রেমিকগণের এক মহামিলন মেলা। গোটা এলাকাজুড়ে বিরাজ করে আশেকী জজবা। সমগ্রদেশ হতে মানুষ এসে উপস্থিত হয় নানান হাদিয়া/তোহফা নিয়ে।  

সংক্ষিপ্ত জীবনী 
হযরত মওলানা শাহ্‌ ছুফী সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (কঃ) ১৮২৬ সালের ১৫ জানুয়ারী, বাংলা ১২৩৩ সালে ১ মাঘ চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি থানার প্রত্যন্ত অঞ্চল মাইজভান্ডার গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পারিবারিক নাম 'সৈয়দ আহমদ উল্লাহ'। তার পিতার নাম সৈয়দ মতিউল্লাহ মাইজভান্ডারী ও মাতার নাম সৈয়দা খায়রুন্নেছা। শাহ্‌ ছুফী সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (কঃ)-এর পুর্ব পুরুষ সৈয়দ হামিদ উদ্দিন গৌড় নগরে ইমাম ও কাজীর পদে নিয়োজিত ছিলেন। 

তিনি গৌড় নগরে মহামারীর কারণে ১৫৭৫ সনে চট্টগ্রামের পটিয়া থানার কাঞ্চন নগরে বসতি স্থাপন করেন। সেখানে তার নামানুসারে হামিদ গাঁও নামে একটি গ্রাম আছে। তার এক পুত্র সৈয়দ আব্দুল কাদের ফটিকছড়ি থানার আজিমনগর গ্রামে ইমামতি করার সুবাদে বসবাস শুরু করেন। তার পুত্র সৈয়দ আতাউল্লাহ, তদীয় পুত্র সৈয়দ তৈয়বুল্লাহর মেজ পুত্র সৈয়দ মতিউল্লাহ মাইজভাণ্ডার গ্রামে এসে বসতি স্থাপন করেন।  

চার বছর বয়স থেকে গ্রামের মক্তবে পড়ার মাধ্যমে শাহ্‌ ছুফী সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (কঃ)-এর শিক্ষাজীবন শুরু হয়। গ্রামের মক্তবের পড়ালেখা শেষ করার পর ১২৬০ হিজরীতে উচ্চ শিক্ষার্জনের উদ্দেশ্যে তিনি কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। ১২৬৮ হিজরীতে তিনি কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় বিশেষ কৃতিত্বের সাথে তৎকালীন সর্বোচ্চ পর্যায়ের শিক্ষা সম্পন্ন করেন। সেখানেই তিনি ইসিলামিক নানান অনুষ্ঠানাদিতে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে একজন সু-বক্তা হিসাবে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেন। সাথে সাথে ধর্মীয় প্রচার-প্রচারণায় জড়িত হয়ে পড়েন।   

তিনি শিক্ষা জীবন শেষে ১২৬৯ হিজরীতে ব্রিটিশ শাসনাধীন অবিভক্ত ভারতের যশোর অঞ্চলের বিচার বিভাগীয় কাজী পদে যোগদান করেন এবং একই সঙ্গে মুন্সেফী অধ্যায়ন শুরু করেন। পরবর্তিতে ১২৭০ হিজরীতে কাজী পদে ইস্তফা দিয়ে তিনি কলকাতায় মুন্সী বু আলী মাদ্রাসায় প্রধান মোদাররেছ হিসাবে যোগদান করেন। পরবর্তি সময়ে মুন্সেফী পরীক্ষায়ও তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন। তার চারিত্রিক গুণাবলী ও জ্ঞানের ব্যাপকতায় মুগ্ধ কলকাতাবাসী তার ওয়াজ শোনার জন্য উন্মুখ থাকতো। 

হাদিস, তাফসির, ফিকহ, মন্তেক, হিকমত, বালাগত, উছুল, আকায়েদ, ফিলছফা, ফারায়েজ সহ যাবতীয় বিষয়ে অত্যন্ত অভিজ্ঞ ছিলেন আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী। বিশেষ করে আরবী, উর্দু, বাংলা ও ফারসি ভাষায়ও তিনি পারদর্শী ছিলেন। ফলে তৎকালীন সময়ে তার নামডাক বিশেষভাবে ছডিয়ে পড়ে। অল্প কিছু দিন পরই তিনি আধ্যাত্মিক জীবন যাপনে আত্মনিয়োগ করেন। তখন হতে তিনি বাকি জীবন একজন সুফি সাধক হিসাবে অতিবাহিত করেন। 

সাংসারিক জীবনে হযরত মওলানা শাহ্‌ ছুফী সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (কঃ) ১২৭৬ হিজরীতে ৩২ বছর বয়সে আজিম নগর নিবাসী মুন্সী সৈয়দ আফাজ উদ্দিন আহমদের কন্যা সৈয়দা আলফুন্নেছা বিবির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্তু বিয়ের ছয় মাসের মাথায় তার স্ত্রী ইন্তেকাল করেন। সেই বছরই তিনি পুনরায় সৈয়দা লুৎফুন্নেছা বিবিকে বিবাহ করেন। 

১২৭৮ হিজরীতে তার প্রথম কন্যা সৈয়দা বদিউন্নেছা জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু চার বছর বয়সে কন্যা শিশুটি মারা যায়। এরপর তার একটি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করে অল্প দিনের মধ্যেই মারা যায়। অতঃপর ১২৮২ হিজরীতে দ্বিতীয় পুত্র সৈয়দ ফয়জুল হক (রঃ) এবং ১২৮৯ হিজরী সালে দ্বিতীয় কন্যা সৈয়দা আনোয়ারুন্নেছা জন্মগ্রহন করেন। তবে তার দ্বিতীয় পুত্রও পিতার পুর্বে ইন্তেকাল করেন। 

হযরত বড়পীর সৈয়দ আব্দুল কাদের জিলানী (কঃ)-এর বংশধর ও উক্ত তরিকার খেলাফত প্রাপ্ত সৈয়দ আবু শাহামা মুহাম্মদ ছালেহ আল কাদেরী লাহোরী (রঃ) নিকট বায়াত গ্রহণের মাধ্যমে বেলায়ত অর্জন করেন হযরত মওলানা শাহ্‌ ছুফী সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (কঃ) এবং সৈয়দ দেলওয়ার আলী পাকবাজ (রঃ) এর নিকট হতে তিনি এত্তাহাদী কুতুবিয়তের ক্ষমতা অর্জন করেন। তিনি দিনে দ্বীনি শিক্ষাদান ও রাতে এবাদত ও রেয়াজতের মাধ্যমে সময় কাটাতেন। এভাবে কঠোর সাধনার ফলে তিনি আধ্যাত্মিক জগতের সর্বোচ্চ বেলায়ত অর্জন করেছিলেন। 

হযরত মওলানা শাহ্‌ ছুফী সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (কঃ) তার পীরে ত্বরিকতের নির্দেশে ১৮৫৭ সালে নিজ গ্রাম মাইজভান্ডারে ফিরে আসেন। পরবর্তীতে লোকসমাজে যা পরিচিতি পায় ‘মাইজভান্ডার দরবার শরীফ’ হিসেবে। 

২৩ জানুয়ারী ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দ, ১০ মাঘ ১৩১৩ বঙ্গাব্দ, সোমবার দিবাগত রাতে ৭৯ বছর বয়সে হযরত মওলানা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (কঃ) এই নশ্বর পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন। তার নশ্বর জীবনের শেষ দিকে এক জুমাবারে এলাকার সমাজপতি ও জনগণের উপস্থিতিতে তার নিজ পুত্র বংশীয় আদরের নাতি হযরত মাওলানা শাহ্‌ ছুফী সৈয়দ দেলাওর হোসাইন মাইজভান্ডারী (কঃ) -কে নিজ গদী শরীফ অর্পণে উত্তরাধিকারী মনোনীত করেন। 

লেখক; কলামিস্ট, সংগঠক। 

এনএস/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি