ঢাকা, রবিবার   ০৬ জুলাই ২০২৫

মোয়াজ্জেমের রায়ে সন্তুষ্ট নুসরাতের পরিবার

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:২৩, ২৮ নভেম্বর ২০১৯

Ekushey Television Ltd.

ফেনীর মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির জবানবন্দির ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়ানোর অভিযোগে সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় আট বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত।

রায়ে সন্তুষ্ট হয়েছে নুসরাতের পরিবার। নুসরাতের ভাই রাশেদুল হাসান রায়হান বলেন, ‘ওসি মোয়াজ্জেমের যে সাজা হয়েছে, তাতে আমরা সন্তুষ্ট। সাজা যেন বহাল থাকে সে প্রত্যাশা করি।’

বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা ২০ মিনিটে বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আস-শামছ জগলুল হোসেন এজলাসে আসন গ্রহণ করেন। দুপুর ২টা ১৭ মিনিটে ওসি মোয়াজ্জেমকে কাঠগড়ায় তোলা হয়। এরপর রায় পড়া শুরু করেন আদালত। এটি বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের হওয়া কোনো মামলার প্রথম রায়। কারাদণ্ডের পাশাপাশি ১৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। মামলার বাদি ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সকাল পৌনে ১০টার দিকে ওসি মোয়াজ্জেমকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আদালতে নেয়া হয়। ২০ নভেম্বর মামলাটিতে রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে আজ রায় ঘোষণার দিন ঠিক করা হয়েছিল।

নুসরাতের মামা সৈয়দ সেলিম বলেন, ‘নুসরাত আমাদের ছেড়ে চলে গেছে কিন্তু শিক্ষা দিয়ে গেছে প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের ঘটনার প্রতিবাদ করতে। যেন পরবর্তীতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটা একটা প্রত্যাশিত রায়।’

নুসরাতের পরিবারের পাশাপাশি এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। রায়ের পর এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, “রায়ে আমরা ন্যায়বিচার পেয়েছি। এ রায় বাংলাদেশের সব থানার ওসির জন্য একটা ‘অশনি সংকেত’। বিভিন্ন থানায় বসে যে সব ওসি নিজেদের জমিদার মনে করেন, তাদের জন্য এ রায় ‘অশনি সংকেত’ হয়ে থাকবে। কেউ অপরাধ করলে তাকে বিচারের আওতায় আসতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩১ ধারায় তাকে সাজা দেয়া হয়নি। পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি পাওয়ার পর আমরা তা নিয়ে আপিল করব।’

ওসি মোয়াজ্জেমের এ শস্তির বিষয়ে নুসরাত জাহান রাফির মা শিরিন আখতার বলেন, ‘বিচারে আমি সন্তুষ্ট।’

বৃহস্পতিবার বিকালে ফেনীতে গ্রামের বাড়িতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এমন কথা বলেছেন।

শিরিন আখতার বলেন, ‘উনার ভিডিওর কারণে আমি মা হয়ে থানার ভেতরে ঢুকতে পারিনি। ওইদিন নুসরাতকে ভেতরে নিয়ে গেছে। তাদের দুই ক্লাসমেটকে নিয়ে গেছে। তখন বলা হয়েছে, তার সঙ্গে আমাদের গোপন কথা আছে, আপনি ভেতরে ঢুকতে পারবেন না।’

উল্লেখ্য, গত ৬ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় আলিম পরীক্ষা কেন্দ্রে নুসরাতকে ছাদে ডেকে নিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। ৮ এপ্রিল তার ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান সোনাগাজী মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। ২৭ মার্চ ফেনীর সোনাগাজী ইসলামীয়া ফাজেল (ডিগ্রি) মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাতকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এনে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করে তার মা। 

১৫ এপ্রিল সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ঢাকার সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে এ মামলা করেন। ওইদিন ট্রাইব্যুনাল মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন।

১৭ জুন ওসি মোয়াজ্জেম জামিন আবেদন করলে নাকচ করেন সাইবার ট্রাইব্যুনাল। পরে তিনি ২ জুলাই হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন। সেখানেও তার জামিন নাকচ হয়।

১৬ জুন শাহবাগ এলাকা থেকে গ্রেফতার হন মোয়াজ্জেম হোসেন। ২০ জুন সাইবার ট্রাইব্যুনালে ওসি মোয়াজ্জেমের পক্ষে কারাগারে ডিভিশন পাওয়ার বিষয়ে আবেদন করা হলে বিচারক গত ২৪ জুন তাকে প্রথম শ্রেণির বন্দির (ডিভিশন) সব সুবিধা দেয়ার নির্দেশ দেন।

এমএস/এসি
 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি