ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪

যৌন নির্যাতনের : যৌন স্বাধীনতাকে দায়ী করলেন সাবেক পোপ বেনেডিক্ট

প্রকাশিত : ২২:৪৯, ১২ এপ্রিল ২০১৯

পোপের দায়িত্ব থেকে যিনি অবসর নিয়েছেন, সেই ষোড়শ বেনেডিক্ট একটি চিঠি প্রকাশ করেছেন যাতে যাজকদের যৌন নিপীড়নের জন্য ১৯৬০ দশকের "অবাধ যৌন স্বাধীনতা"-কে দায়ী করা হয়েছে। তিনি বলেন, সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক পটপরিবর্তন ক্যাথলিকদের নৈতিকতাকে "শিথিলীকরণের" দিকে ঠেলে দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ১৯৬০ দশকের যৌনতার বিপ্লব ক্যাথলিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমকামিতা এবং শিশু যৌন নিগ্রহের বিস্তার ঘটিয়েছে।

তবে ধর্মতত্ত্ববিদরা এই চিঠির তীব্র সমালোচনা করেছেন - তাদের মতে এটি "দারুণ ত্রুটিপূর্ণ"। ভ্যাটিকান বিশেষজ্ঞ জশুয়া ম্যাকএলউই ন্যাশনাল ক্যাথলিক রিপোর্টার-এ বলেন: "নিপীড়নের ঘটনাগুলো চাপা দেয়ার কাঠামোগত ব্যবস্থা কিংবা ভ্যাটিকানের ক্ষমতাশালী ডকট্রিন কার্যালয়ের প্রধান হিসেবে বেনেডিক্টের ২৪ বছরের দায়িত্ব পালনের বিষয়টি এই চিঠিতে উঠে আসেনি"।

যাজকদের বিষয়ে কিছু বলা পোপ বেনেডিক্টের জন্য বেশ বিরল ঘটনা। গত প্রায় ৬০০ বছরের মধ্যে তিনিই হচ্ছেন প্রথম পদত্যাগকারী পোপ - যিনি সরে দাঁড়ান ২০১৩ সালে। তবে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে তিনি শিশুদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন এবং তদন্ত চাপা দিয়েছেন। সাবেক এই পোপ অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

পোপ বেনেডিক্ট বলেন, সমস্যাটির একমাত্র সমাধান হলো "প্রভু যিশুখ্রিষ্টের প্রতি আনুগত্য এবং ভালোবাসা"।

যৌন কেলেঙ্কারীর ঘটনাগুলো রোমান ক্যাথলিক চার্চকে এরই মধ্যে প্রবলভাবে নাড়া দিয়েছে। তবে যৌন নিপীড়নের বিষয়ে পোপ বেনেডিক্টের বিশ্লেষণ অনেকটাই ধর্মতত্ত্ব ও ঐতিহাসিক পটভূমি আশ্রয়ী, যা পোপ ফ্রান্সিস থেকে ভিন্নতর।
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে চার্চে শিশুদের সুরক্ষা দেয়ার বিষয়ে একটি সম্মেলন হয়. তাতে যোগ দিয়েছিলেন পোপ ফ্রান্সিস
ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত একটি সম্মেলনে বর্তমান পোপ সংকট সমাধানে শুধু "সাধারণ এবং সুস্পষ্ট নিন্দা" প্রকাশ নয়, বরং "বাস্তবসম্মত ব্যবস্থা" গ্রহণের আহবান জানান।

পোপ বেনেডিক্ট তাঁর চিঠিতে লেখেন, যে সময়ে অনেকগুলো ঘটনা প্রকাশিত হয় তখন তিনি "চার্চের রাখাল হিসেবে একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছিলেন" এবং তিনি "একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনার ক্ষেত্রে ভুমিকা" পালন করতে চেয়েছিলেন।

জার্মান ক্যাথলিক ম্যাগাজিন ক্লেরুসব্লাট-এ প্রকাশিত চিঠিটিতে ৫,৫০০ শব্দ রয়েছে, আর এটি তিনটি ভাগে বিভক্ত।

প্রথম ভাগে উপস্থাপন করা হয়েছে "প্রশ্নের বৃহত্তর সামাজিক পটভূমি", যেখানে ১৯৬০-এর দশককে এমন একটি সময় হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে যখন "যৌনতার বিষয়ে এর আগের সময়ের সব ধরণের মানদণ্ড পুরোপুরি ধসে পড়ে"।

সাবেক পোপ বেনেডিক্ট এর জন্য দায়ী করেন যৌন চলচ্চিত্র, নগ্ন ছবি এবং "সেই সময়ের পোশাক-আশাককে", যার ফলাফল "মনোগত ধস" এবং "সহিংসতা"।

পোপ বেনেডিক্ট বলেন, যৌন বিপ্লবের ওই সময়ে "ক্যাথলিক অ্যাধ্যাত্বিক ধর্মতত্ত্বে ধস নামে, যার ফলে সমাজে যে পরিবর্তন হচ্ছিল তা মোকাবেলায় চার্চ অসহায় হয়ে পড়ে"।

শিশুদের যৌন নিপীড়ন যৌন বিপ্লবের কারণেই "অনুমোদিত এবং যথাযথ হিসেবে" গণ্য হয়ে যায়। চিঠিতে এর পরে দেখা হয়েছে ওই সময়টি কীভাবে "খ্রিস্টীয় নৈতিকতার ধারণাকে শিথিল" করে দেয় - বিশেষ করে ক্যাথলিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশপরা ক্যাথলিকতার ক্ষেত্রে "নতুন, আধুনিক কিছু আনতে" চেষ্টা করেন এবং যৌন বিপ্লব শিক্ষালয়গুলোতে "সমকামী চক্র" গড়ে উঠতে সাহায্য করে।

তিনি দাবী করেন যে শিক্ষার্থীরা যাতে "বিশ্বাসের বিপরীত আচরণ ঠেকাতে" পারে সেজন্য একজন বিশপ তাদের অশ্লীল সিনেমা দেখিয়েছিলেন।

`এক পাদ্রী আমাদের নগ্ন হয়ে সাঁতরাতে বাধ্য করেন`। "শিশু যৌন নিপীড়নের প্রশ্নটি, আমি যতদূর মনে করতে পারি, ১৯৮০`র দশকের দ্বিতীয়ার্ধের আগে তেমন জটিল অবস্থায় উপনীত হয়নি," লিখেছেন পোপ বেনেডিক্ট।

"শিশুদের যৌন নিপীড়ন আজ এই অনুপাতে পৌঁছেছে কেন?" প্রশ্ন তোলেন পোপ বেনেডিক্ট। "চুড়ান্ত পরিণামে কারণ হলো ঈশ্বরের
খারাপ স্বাস্থ্যের কারণে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে পদত্যাগ করেন পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট - বিদায়ের আগে একটি অনুষ্ঠানে
তিনি বলেন, "কোন সমাজে ঈশ্বরের মৃত্যু" হলে এর মানে দাঁড়ায় "স্বাধীনতার অবসান" এবং এর সমাধান হলো "ঈশ্বরকে নিয়ে বেঁচে থাকা এবং তাঁর কাছে উপনীত হওয়া"।

নিবন্ধের শেষে তিনি তাঁর উত্তরসূরী পোপ ফ্রান্সিসকে "আজও নির্বাপিত হয়নি এমন ঈশ্বরের আলো বারবার দেখানোর জন্য তিনি যা কিছু করেছেন" তার জন্য ধন্যবাদ জানান।

২০১৮ সালে প্রকাশিত এক চিঠিতে পোপ ফ্রান্সিস বলেছিলেন যে শিশুদের যৌন নিপীড়নের বিষয়টিতে চার্চ "সময়মত ব্যবস্থা নিতে পারেনি" এবং "ছোট বাচ্চাদের প্রতি কোন দরদ দেখায়নি; আমরা তাদের পরিত্যাগ করেছিলাম"।

তথ্যসূত্র: বিবিসি।

এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি