ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪

রবিন-অনিকের পরিবারও চান আবরার হত্যার বিচার (ভিডিও)

রাজশাহী প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১১:০২, ১২ অক্টোবর ২০১৯

বুয়েটছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা মামলার এজাহারভূক্ত ১৯ আসামির মধ্যে দুইজনের বাড়ি রাজশাহীতে। এরা হলেন মেহেদী হাসান রবিন (২২) ও অনিক সরকার (২২)। তারা দুইজনই ২০১৫ ব্যাচের ছাত্র এবং শেরেবাংলা হলের আবাসিক ছাত্র।

এদের মধ্যে মামলার ৪ নম্বর আসামি মেহেদী হাসান রবিনের বাড়ি পবা উপজেলার কাটাখালি পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে পূর্ব কাপাসিয়ায়। তিনি স্কুল শিক্ষক মাকসুদ আলীর একমাত্র ছেলে। মেহেদী হাসান রবিন বুয়েট ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। আর ৩ নম্বর আসামি অনিক সরকারের বাড়ি মোহনপুর উপজেলার বড়ইকুড়ি গ্রামে। তিনি কাপড় ব্যবসায়ী আনোয়ার সরকারের ছেলে। অনিক সরকার বুয়েট ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক। 

আবরার হত্যাকাণ্ডের পর রাজশাহীতে আলোচনায় আসেন এলাকায় নিরীহ এবং শান্ত ছেলে হিসেবে পরিচিত রবিন ও অনিক। তাদের পরিবারের কে কোন দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এ নিয়ে বেশ আলোচনা-সমালোচনায় এসেছে পরিবার দুইটি। তবে উভয় পরিবার তাদের সন্তানদের এমন কৃতকর্মে হতাশ। সন্তানরা যদি সত্যিই দোষী হয় তবে তাদের বিচার চান পরিবারের সদস্যরা। 

কাটাখালি পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘এলাকায় খুব নিরীহ ও শান্ত ছেলে হিসেবে পরিচিত রবিন। সে এলাকার ছেলেদের সঙ্গে তেমন মেলামেশা বা কথা বলতো না। রবিন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত সে বিষয়টিও এলাকার কেউ জানত না।’

বিএনপিপন্থী কাউন্সিলর আসাদ আরও বলেন, ‘রবিনের দাদা ও চাচা দুজনেই জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। রবিনের দাদা মমতাজ উদ্দিন জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে একবার কাউন্সিলর নির্বাচনও করেছেন। আর চাচা ইমরান আলী সক্রিয়ভাবে জামায়াতের রাজনীতি করতেন। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে চারটি নাশকতার মামলা রয়েছে।’

আসাদ বলেন, ‘রবিনের বাবা মাকসুদ আলী ভাবিচা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক। বর্তমানে রবিনের বাবা কাটাখালি পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। মূলত শিক্ষকতার চাকরি পাওয়ার পর থেকে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।’

রবিনের বাবা মাকসুদ আলী বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য। তবে রবিনের দাদা ও চাচা এক সময় জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও এখন তারা নিষ্ক্রিয়। কলেজের চাকরি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে রবিনের চাচাকে চারটি নাশকতার মামলায় আসামি করা হয়।’

মাকসুদ বলেন, ‘রবিন বুয়েটে ভর্তি হওয়ার পর রাজশাহীতে জড়িয়ে পড়েছে তা বছর খানেক আগে জানতে পেরেছি। তাকে রাজনীতি না করার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু শোনেনি। রবিন যদি এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকে তবে তার সাজা হবে। এতে আমাদের কিছু বলার নেই।’

এদিকে, আবরার হত্যা মামলার ৩ নম্বর আসামি অনিকের বাবা আনোয়ার হোসেন সরকার এলাকায় একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। রয়েছে কাপড়সহ পেট্রোলপাম্প ও সারের ডিলারের ব্যবসা। দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট অনিক। নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডে হতবাক অনিকের পরিবারও। এসএসপি পরীক্ষার পর থেকে অনিক ঢাকাতেই লেখাপড়া করছে। অনিক ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল তা জানেনা তার পরিবারের সদস্যরা। 

মোহনপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘অনিক যে বুয়েটের ছাত্রলীগের নেতা আমরা তা কখনোই শুনিনি। গণমাধ্যমের খবর দেখে আমরা জানতে পারি অনিক ছাত্রলীগ করে।’

অনিকের এক মামা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত বলে জানিয়ে রাজ্জাক বলেন, ‘তার বাপ চাচারা সবাই বিএনপি করে। সে কিভাবে ছাত্রলীগ করে। তাকে পদ দেয়ার আগে তার পরিবারটা দেখা উচিত ছিল।’

অনিকের বাবা আনোয়ার হোসেন সরকার বলেন, ‘কারো সন্তান যেন এমন না হয়; এমনটা না করে। আমি আশা করব অনিকের মত আর কেউ যেন ভুল পথে না যায়। আইন সবার জন্য সমান। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমার ছেলে অপরাধী হলে প্রচলিত আইনে তার যে সাজা হবে আমি মেনে নেব। আমি চাই আমার ছেলের বিচার হোক।’

নিজে কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয় দাবি করে আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘অনিক রাজশাহীতে থাকা অবস্থায় কোনো রাজনীতি করতো না। কারো সাথে তেমন মিশতোও না। কি করে সে রাজনীতিতে প্রবেশ করলো তা জানি না। আমরা জানি অনিক সেখানে পড়ালেখা করছে। যখন জানতে পারলাম অনিক এক ছাত্রকে হত্যা করেছে। সেই দায়ে তাকে আটক করেছে পুলিশ। আমরা অবাক হয়ে গেছি। কখনো ভাবিনি আমার ছেলে কাউকে খুন করবে।’

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, অনিক সরকারের ডাক নাম অপু। সে ছোট থেকেই মেধাবী। তিনি মোহনপুর কেজি স্কুল থেকে ৫ম শ্রেণিতে ট্যালেনপুলে বৃত্তি পেয়ে সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ৮ম শ্রেণিতেও ট্যালেন্ডপুলে বৃত্তি পান তিনি। ২০১৩ সালে একই বিদ্যালয় হতে জিপিএ ৫ পেয়ে এসএসসি পাস করেন তিনি। এরপর ঢাকা নটরডেম কলেজে ভর্তি হন এবং জিপিএ ৫ পেয়ে ২০১৫ সালে এইচএসসি পাস করেন। একই সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ভর্তি হন। তিনি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র।


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি