ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪

রাজশাহীতে নারীকে গাছে বেঁধে নির্যাতন, লজ্জায় আত্মহত্যা

রাজশাহী প্রতিনিধি 

প্রকাশিত : ১৪:৫৮, ২ জানুয়ারি ২০২০

রাজশাহীর বাগমারায় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এক সদস্যের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে আক্তারুন নেছা (৪২) নামে এক নারী আত্মহত্যা করেছেন। এই ঘটনায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে ওই ইউপি সদস্যসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

আক্তারুন নেছার স্বামীর বাড়ি কুষ্টিয়া জেলার পুড়াদহ এলাকায়। স্বামী মারা যাওয়ার পর ১৩ বছরের মেয়েকে নিয়ে উপজেলার বড় বিহানালী ইউনিয়নের বাগান্না গ্রামে তার বাবার বাড়িতে থাকতেন। তার বাবার নাম মৃত এনায়েত আলী। 

এ ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) ভোরে পুলিশ ওই ইউপি সদস্যের ভাই করিমকে গ্রেফতার করেছে বলে জানিয়েছেন বাগমারা থানার পরিদর্শক মিজানুর রহমান। 

তিনি বলেন, ‘গত মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) রাতে ওই নারীকে তুলে নিয়ে গিয়ে গাছে বেঁধে নির্যাতন করা হয় এবং বুধবার সকালে তিনি কীটনাশক পান করে আত্মহত্যা করেন। ইউপি সদস্য আবদুল মজিদ তার ফসল নষ্ট করার অভিযোগ তুলে আক্তারুনকে গাছের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে নির্যাতন করে বলে তার পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন। তাদের মধ্যে আগে থেকেও অর্থ লেন-দেন নিয়ে বিরোধ ছিলও বলে জানা গেছে।’ 

তিনি বলেন, ‘এই ঘটনায় থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মামলা হয়েছে। ওই নারীর ভাই সাইফুল ইসলাম বাদি হয়ে ছয়জনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন। এর আগে খবর পেয়ে পুলিশ ওই নারীর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। বৃহস্পতিবার সকালে লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে।’

স্থানীয়রা জানান, আক্তারুনের সঙ্গে মজিদের বিরোধ বহুদিনের। সম্প্রতি তা আরও তিক্ত হয়। গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টায় ফসল নষ্টের অভিযোগে ওই নারীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তাকে রশি দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন চালানো হয়েছে। খবর পেয়ে রাতেই স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান গ্রাম পুলিশ সদস্যদের পাঠিয়ে আক্তারুনকে উদ্ধার করে তার বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করেন।

আক্তারুনের ভাই সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বুধবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে আক্তারুন স্থানীয় বাঘাবাড়ি বাজারের একটি দোকান থেকে কীটনাশক কিনে নিয়ে এসে তা পান করেন। এতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়।  একই দিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেলা সাড়ে ১২টার দিকে মারা যান তিনি।’

সাইফুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ‘তার বোনকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। এই ক্ষোভ ও লজ্জায় তার বোন বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন। আব্দুল মজিদের সঙ্গে তার অর্থ লেনদেন নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল।’

তিনি বলেন, ‘গত ইউপি নির্বাচনের সময় ইউপি সদস্য মজিদ তার বোনের কাছে এক লাখ টাকা ধার নেয়। কিন্তু সে টাকা দিচ্ছিল না। টাকা উদ্ধারের জন্য ১০/১১ মাস আগে তার বোন মজিদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। কিন্তু মামলা করেও টাকা ফেরত পায়নি। তবে মামলার করার পর থেকে তাদের মধ্যে বিরোধ বেড়ে যায়।’

তবে ইউপি সদস্য আবদুল মজিদ নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘ব্যক্তিগত বিরোধের জেরে আক্তারুন এক সপ্তাহ ধরে তার খেতের পেঁয়াজ ও আলু নষ্ট করে আসছিলেন। গত মঙ্গলবার রাতেও তিনি ফসল নষ্ট করেছেন। খবর পেয়ে তাকে বাড়ি থেকে নিয়ে এসে খেতের পাশে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। পরে গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে বাড়িতে ফেরত পাঠানো হয়।’

এসময় তিনি নির্যাতন করা হয়নি বলে দাবি করেন। তবে ওই নারীর সঙ্গে অর্থ লেনদেন ও মামলা-মোকদ্দমা থাকার কথা স্বীকার করেন মজিদ।

ইউপির চেয়ারম্যান মাহমুদুর রহমান মিলন বলেন, ‘আমি এলাকার বাইরে থাকার কারণে ঘটনাস্থলে যেতে পারিনি। তবে খবর পেয়ে সাথে সাথে ফোন করে গ্রাম পুলিশ পাঠিয়ে নারীটিকে উদ্ধার করে বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। একইসঙ্গে বুধবার দু-পক্ষকে নিয়ে বসে একটি সমাধানের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু এর আগেই ওই নারী ক্ষোভে আত্মহত্যা করেন।’

এআই/   


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি