ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪

শিকলে বাঁধা অসহায় মেছোবাঘ

বাউফল প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৫:৪৭, ২২ জানুয়ারি ২০২০ | আপডেট: ১৫:৫৩, ২২ জানুয়ারি ২০২০

শিকলে বাঁধা অসহায় মেছোবাঘ। আবাসস্থল হারিয়ে মূলভূখন্ডে ছুটে আসতে সাতরে নদী পার হতে গিয়ে জেলেদের বৈঠার আঘাতে আহত হয় বাঘটি। আটকের পর বাঁধা পড়ে শিকলে। 

পটুয়াখালীর বাউফলের নিমদী লঞ্চঘাট এলাকা থেকে আজ বুধবার সকালে ওই বাঘটিকে উদ্ধার করা হয়।

নিমদী লঞ্চঘাট এলাকার কয়েক ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা জানান, আবাসস্থল বিলুপ্ত হওয়ায় বিচ্ছিন্ন চন্দ্রদ্বীপ  ইউনিয়নের চর আলগী থেকে প্রায় কিলোমিটার প্রশস্ত তেঁতুলিয়া নদীর পাড়ি দিয়ে মূলভূখন্ডে ছুটে আসার সময় ধানদী আরসিসি ভাঙারাস্তা পয়েন্ট থেকে সঙ্গে থাকা সহযোগি একজনকে নিয়ে মেছোবাঘটি আটক করে নিমদী গ্রামের জেলে জয়নাল ব্যাপারী। এরপর নৌকায় তুলে নিয়ে এসে গলায় মোটা পলিমার রশি ও শিকলে তালাবন্ধ করে রাখা হয় একটি গাছের সঙ্গে স্থানীয় ৭১ নং নিমদী সরকারি প্রাইমারি স্কুল মাঠে। আটকের সময় বৈঠার আঘাত আর কনকনে শীত দুর্বল হয়ে পড়ছিল বাঘটি। ভিড় জমায় স্থানীয় উৎসুক লোকজন বাঘটিকে দেখতে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপস্থিত একজন জানান, প্রচন্ড শীত আর আটকের সময় নৌকার বৈঠার আঘাতে দুর্বল হয়ে পড়ছিল মেছোবাঘটি। এছাড়া মোটা পলিমার রাশি ও শিকল পড়ানো সময়ও কিছুটা আহত হয়। মুখ দিয়ে রক্ত ঝরতেও দেখা যায়। অসহায় মেছোবাঘটি নিয়ে কথা হচ্ছিল নানা ধরনের। মুরগি শিকারের কথা তুলে কেউ কেউ মেরে ফেলার কথা বলছিল। কেউ আবার আগ্রহ দেখান বাড়িতে পোষার। টাকার বিনিময় জনৈক একটি গার্ডেনের লোকজনের হাতে তুলে দেওয়ার কথাও চলছিল। এরপর ‘সেভ দি বার্ড অ্যান্ড বি’ নামে স্থানীয় প্রাণ-প্রকৃতি-প্রতিবেশ রক্ষা বিষয়ক পরিবেশবাদী আন্দোলনের কয়েকজন ছুটে এলেও অসহায় মেছোবাঘটিকে তাদের মাধ্যমে ছেড়ে দিতে রাজি হচ্ছিল না আটকারীরা। পরে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানালে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে উদ্ধার করে উপজেলা সদরে নিয়ে যাওয়া হয় মেছোবাঘটিকে।

এ ব্যাপারে প্রাণ-প্রকৃতি-প্রতিবেশ রক্ষা বিষয়ক পরিবেশবাদী সংগঠনের পরিচালক মণ্ডলীর একজন শামসুন নাহার বলেন, ‘বৈশ্বয়িক আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাবে উপকুলীয় এই অঞ্চলে মেছোবাঘের মতো নানা ধরনের প্রাণী ও পক্ষীকুল বিপন্ন হচ্ছে। বিপন্ন এই প্রাণীদের সম্পর্কে সচেতনতায় ব্যাপক প্রচার-প্রচারণাসহ সকলের অনুকূল দৃষ্টিভঙ্গি ও যত্নবান হওয়া উচিত।’

এ ব্যাপারে কালিশুরী ডিগ্রী কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক তাসলিমা বেগম বলেন, ‘প্রায়ই ধরা পড়ছে এ ধরনের মেছোবাঘ। বনজঙ্গল ঝোপঝার ধ্বংস আর জলবায়ূ পরিবর্তনের বিরুপ প্রতিক্রিয়ায় এরা বিলুপ্তির পথে। এদের প্রতি এখনই যত্নবান না হলে ধ্বংস হবে উপকূলীয় জীববৈচিত্র।’

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, ‘মেছোবাঘটিকে চিকিৎসা দিয়ে বনবিভাগের মাধ্যমে শিগগির নিরাপদ আবাসস্থলে অবমুক্ত করা হবে।’


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি