ঢাকা, শুক্রবার   ০৩ মে ২০২৪

শেয়ারবাজারে এমন ওঠা-নামা হতেই পারে: অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২৩:৩০, ২২ এপ্রিল ২০১৯

সম্প্রতি শেয়ারবাজারে সূচকের অব্যাহত পতনের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, শেয়ারবাজারে এমন ওঠা-নামা হতেই পারে। বাজারে এখন আমি খারাপ কিছু দেখি না। পাঁচ হাজার ৯০০ থেকে পাঁচ হাজার ৩০০ হয়েছে, এতে কী এমন হয়ে গেছে। সব জায়গায় শেয়ারবাজারে ওঠা-নামা আছে।

সোমবার বিকেলে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) শীর্ষ ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের কাছে এ মন্তব্য করেন।

এ সময় সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হয়, বন্ধের দিনে বৈঠক করার কারণ কী? এর উত্তরে তিনি বলেন, আপনারাই তো পত্রিকায় লিখছেন, মার্কেট নাই হয়ে গেছে। কোথায় দেখলেন মার্কেট ফল (পতন) করছে? সূচক পাঁচ হাজার ৯০০ হয়ে গিয়েছিল। এখন পাঁচ হাজার তিনশ আছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ভয় দেখালে হবে না। আমাদের শেয়ারবাজার অন্য জায়গার থেকে ভিন্ন। বাইরে থেকে যারা শেয়ারবাজারে আসেন তারা বোঝেন এবং পড়ালেখা করে আসেন। কিন্তু দুঃখ্জনকভাবে আমাদের এখানে শেয়ারবাজার বোঝেন এমন বিনিয়োগকারীর সংখ্যা খুবই কম। সবাই যদি বুঝতো তাহলে বাজার নিয়ে আমাদের এতো শক্তিশালী কমিশন দরকার ছিল না। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে অনেক আইন-কানুন করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, শেয়ারবাজারে আমরা কাউকে জোর করে আনতে পারি না। এখানে যার খুশি সে আসবে। যার ইচ্ছা হবে না, সে আসবে না। তবে সামনে বাজেট, আমরা চাই শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীরা আসুক। ধীরে ধীরে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের দিকে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছি।

অর্থমন্ত্রী বলেন, বাজারে বার বার এমন ঘটনা (পতন) ঘটছে, তার মানে এর পেছনে কেউ না কেউ আছে। একবার ১৯৯৬ সালে, আরেকবার ২০১০ সালে। ব্যবসায়ীদের জেলে পাঠানোর ঘটনা খুবই কম। কিন্তু আমাদের এখানে ব্যবসায়ীদের জেলে পাঠানো হচ্ছে।

শেয়ারবাজার বর্তমানে ভালো অবস্থানে আছে- এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ভালো কোম্পানিগুলো এখানে আসবে না। আসলে খারাপ কোম্পানির সঙ্গে মিশে গিয়ে তারাও খারাপ হয়ে যাবে। তবে আমি মনে করি, এ মুহূর্তে বাজার পরিস্থিতি খারাপ নয়। এখন মূল্য আয় অনুপাত (পিই) বেশ কম; ১৫ থেকে ২০ এর মধ্যে আছে। একসময় মূল্য আয় অনুপাত ৯০ হয়ে গিয়েছিল।

অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসার কারণ হিসেবে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, বাজেটে পুঁজিবাজারের কিছু ইস্যু আছে। বাজাটে পুঁজিবাজারকে ভালো অ্যাড্রেস করা হবে। স্যার’র (অর্থমন্ত্রী) সময় তো লিমিটেড। ওনার কোনো শুক্রবার নাই, বন্ধের দিন নাই। প্রতিদিনই কাজ আছে।

এ সময় শেয়ারবাজারের সকল বিনিয়োগকারীর জন্য টিআইএন বাধ্যতামূলক হচ্ছে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়া এবং গ্রামীণফোনের কাছে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা দাবি করার কারণে শেয়ারবাজারে বর্তমানে মন্দাভাব দেখা দিয়েছে এমন ইঙ্গিত করেন বিএসইসির চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, আট বছর ধরে আমরা যেটা করে আসছি, এমন কিছু ঘটে নাই। তিনটা কাজ একসঙ্গে ঘটছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) টিআইএন, গ্রামীণফোনের কোথায় কি লাগবে, আরও দুই একটা ইস্যু মিলে...।

বিটিআরসি গত ২ এপ্রিল একটি দাবিনামার মাধ্যমে গ্রামীণফোনের কাছে বিটিআরসিকে ৮ হাজার ৪৯৪ কোটি ১ লাখ টাকা এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ৪ হাজার ৮৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা পরবর্তী ১০ কর্মদিবসের মধ্যে পরিশোধ করার নির্দেশ দেয়।

বিটিআরসির নিয়োগ করা জেভিসিএ অব তোহা খান জামান অ্যান্ড কোম্পানি নামের একটি অডিট ফার্ম গ্রামীণফোনের যাত্রার সময় ১৯৯৭ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সময়ে ইনফরমেশন অ্যান্ড সিস্টেম অডিট পরিচালনা করে এই টাকা (৮ হাজার ৪৯৪ কোটি ১ লাখ) দাবি করে।

তবে এরপর গ্রামীণফোনের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়, এই অডিটে বিটিআরসির দাবি করা ৮ হাজার ৪৯৪ কোটি ১ লাখ টাকার মধ্যে প্রায় ৭৩ শতাংশ বা ৬ হাজার ১৯৪ কোটি ৩ লাখ টাকাই হলো সুদ যা ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ধরা হয়েছে।

এর আগে ২০১৮ সালের আগস্টে বিটিআরসি গ্রামীণফোনকে অডিটের প্রতিবেদনের ওপর আনুষ্ঠানিক জবাব দিতে বলে। গ্রামীণফোন নির্ধারিত সময়ে সেপ্টেম্বর ২০১৮ সালে বিস্তারিত ব্যাখ্যা ও যুক্তি উপস্থাপন করে। কিন্তু বিটিআরসি তাদের দাবিনামায় শুধুমাত্র ২০১৮ সালে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেয়া গ্রামীণফোনের ব্যাখ্যা আমলে নিয়েছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়েছে।

এদিকে ২ এপ্রিল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে প্রাকবাজেট আলোচনা করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এরপর গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের জন্য টিআইএন বাধ্যতামূলক হচ্ছ। তবে ১৬ এপ্রিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে এ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলা হয়, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের বেনিফিসিয়ারি ওনার্স (ডিও) একাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে টিআইএন নম্বর বাধ্যতামূলক নয়।

প্রায় তিন মাস ধরে শেয়ারবাজারে চলা মন্দাভাবের মধ্যে এই দু’টি ঘটনা শেয়ারবাজারে বড় ধরণের নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ফলে মূল্য সূচকের বড় পতনের পাশাপাশি দেখা দেয়া চরম লেনদেন খরা। বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকটের কারণে শেয়ারবাজারের এই মন্দা দেখা দেয় বলে বাজার সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।

এ বিষয়ে বিএসইসির চেয়ারম্যানকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, শেয়ারবাজারে আস্থার সংকট থাকা উচিত না। কেউ যদি ট্রেড করে থাকে বাজারের স্টেকহোল্ডার হইয়া, পার্টিসিপেট হইয়া, বিনিয়োগকারী হইয়া, এটা তারা অন্যায় করছে। কারণ নিজের পারসেপশন দিয়ে পুরো মার্কেটকে প্রভাবিত করা ঠিক না।

মার্কেটে কথা বলার বিষয়ে একটা রেস্ট্রিকশন আছে। কথা যদি বাস্তব ও জ্ঞান নির্ভর হয় তাহলে সমস্যা নেই। কিন্তু যা তা তো বলা যাবে না’ বলেন খায়রুল হোসেন।

এদিকে শেয়ারবাজারের টানা দরপতন ও লেনদেন খরা দেখা দেয়ায় দুই সপ্তাহ ধরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সামনে বিক্ষোভ করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। বিক্ষোভ থেকে বিএসইসির চেয়ারম্যান পদ থেকে খায়রুল হোসেনের পদত্যাগসহ আরও কয়েকটি দাবি জানান তারা।

বিনিয়োগকারীদের এই বিক্ষোভের সমালোচনা করে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, ভারতের শেয়ারবাজারের সূচক এখন ৩৯ হাজার। এই সূচক ২১ হাজার থেকে ৭ হাজারে নেমেছিল। ভারতের লোকজন কিন্তু বিক্ষোভে নামেনি। আমেরিকায় বিক্ষোভ করেনি। জাপানে বিক্ষোভ করেনি। আমাদর বিনিয়োগকারীদের শিক্ষিত করতে হবে।

আরকে//


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি