ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪

সাগর-রুনি হত্যার ৮ বছর পূর্তি কাল

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:৩৮, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | আপডেট: ১২:২৬, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনী- ফাইল ছবি

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনী- ফাইল ছবি

হত্যার পর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অপরাধীদের গ্রেফতারের আশ্বাস দিয়েছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন। শুধু ৪৮ ঘণ্টা নয়, কেটেছে দুইবারের মতো ৪৮ মাস বা ৮ বছর। কিন্তু প্রকৃত অপরাধীদের এখনও পাকড়াও করা যায়নি। আদালতে চাঞ্চল্যকর এই মামলার প্রতিবেদন এখনো জমা দিতে পারেনি তদন্ত সংস্থা র‌্যাব। এ হত্যাকাণ্ডের আট বছর পূর্তির একদিন আগে আজ সোমবার ফের মামলাটিতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য আছে। 

তদন্ত শেষ না হওয়ায় আজও আদালতে প্রতিবেদন জমা দিতে পারছে না র‌্যাব বলে এক সূত্রে জানা যায়। আজও আদালতে সময় চাওয়া হবে। আট বছরে এ মামলায় আদালতের মোট দুই শতাধিক কার্যদিবস ব্যয় হয়েছে। এর মধ্যে শুধু তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৭১ বার সময় নেয়া হয়েছে। সর্বশেষ গত বছরের ১২ ডিসেম্বর মামলার প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য ছিল। 

দিনটি ছিল ২০১২ সালে ১১ ফেব্রুয়ারি। রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে নিজ বাসায় মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক গোলাম মোস্তফা সারোয়ার (সাগর সারোয়ার) ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন নাহার রুনা (মেহেরুন রুনী) দম্পতি খুন হন। ঘটনার পরের দিন রুনীর ভাই নওশের আলম রোমান রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যা মামলা করেন। আগামীকাল মঙ্গলবার এ চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের ৮ বছর পূর্ণ হবে।

এ পর্যন্ত মামলার কোন অগ্রগতি না হলে আশা ছাড়েননি তাদের স্বজনরা। সাগর সারোয়ারের মা সালেহা মনির বলেন, ‘৩০ বছর পর যদি সগিরা মোর্শেদ হত্যা মামলার বিচার শুরু হতে পারে, তবে আমাদের সন্তান হত্যার বিচার কেন হবে না। একদিন না একদিন বিচার হবেই। হয়তো আমি দেখে যাব, না হয় দেখে যেতে পারব না।’

তদন্ত সংস্থার সদিচ্ছা দরকার। আর আদালতকে ভূমিকা নিতে হবে উল্লেখ করে সালেহা মনি বলেন, ‘তারা (আদালত) তদন্তের জন্য একটি সময় বেঁধে দিতে পারেন। যদি আমার সন্তানরা রাষ্ট্রদ্রোহী হয়ে থাকে তদন্ত করে দেখাক, আমি বিচার চাইব না। মামলায় যারা গ্রেফতার হয়েছে তারা হতে পারে অন্য কোনো ক্ষেত্রে অপরাধী, তবে এ ঘটনায় নয়।’ তাই প্রকৃত আসামি গ্রেফতার এবং বিচারের আশায় আছেন বলে জানান তিনি।

মামলাটি পুলিশের গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগের (ডিবি) পর র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) তদন্তেও স্থবিরতা নেমে এসেছে। ঘটনাস্থলে দুই অজ্ঞাত পুরুষের ডিএনএ পাওয়া গেছে। তবে তাদের শনাক্ত করতে পারেনি তদন্ত সংস্থা। 

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবদুল্লাহ আবু বলেন, ‘এটা দুঃখজনক যে, আট বছরেও মামলাটির তদন্ত শেষ হয়নি। বিলম্ব জনমনে প্রশ্ন সৃষ্টি করে। আশা করি তদন্ত সংস্থা সেটা উপলব্ধি করে দ্রুত তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দাখিল করবে।’

এ মামলার তদন্তকাজ প্রথমে শুরু করেন শেরেবাংলা নগর থানার উপ-পরিদর্শক মো. জহুরুল ইসলাম। এরপর ২০১২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি গোয়েরন্দা শাখার (উত্তর) পুলিশ পরিদর্শক মো. রবিউল আলম এ মামলার তদন্তভার গ্রহণ করেন। হাইকোর্ট বিভাগের এক রিট পিটিশনে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল মামলার তদন্তভার র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র‌্যাব) কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেয়া হয়। পরদিন ১৯ এপ্রিল র‌্যাব সদর দফতরের জ্যেষ্ঠ পুলিশ সুপার মো. জাফর উল্লাহ মামলার তদন্তভার গ্রহণ করেন। র‌্যাবের এ কর্মকর্তা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে যাওয়ায় ২০১৪ সালের ১২ মার্চ এ মামলার তদন্তভার পান র‌্যাব সদর দফতরের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মো. ওয়ারেছ আলী মিয়া। নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি এ কর্মকর্তা মামলার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী সাগর-রুনীর ছেলে মাহির সরোয়ার মেঘকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তার জবানবন্দি ১৬১ ধারায় লিপিবদ্ধ করেন। ২০১৫ সালের মাঝামাঝি র‌্যাব সদর দফতরের সহকারী পরিচালক সহকারী পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন আহম্মদ এ মামলার তদন্তভার গ্রহণ করেন। তিনি মামলার নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করেন। ২০১৮ সালের র‌্যাব সদর দফতরের সহকারী পুলিশ সুপার মো. সহিদার রহমানের হাত ঘুরে বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শফিকুল ইসলাম। তিনি আগের সাক্ষীদের পর্যালোচনা করে তদন্ত অব্যাহত রেখেছেন।

আট বছরে র‌্যাব এ মামলার পাঁচটি তদন্ত অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করেছে। ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি, একই বছরের ৭ জুন, ২০১৬ সালের ২ অক্টোবর ও সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২১ মার্চ তদন্ত অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। তদন্ত অগ্রগতি সংক্রান্ত প্রতিটি প্রতিবেদনে প্রায় একই ধরনের তথ্য উল্লেখ করা হয়। সর্বশেষ তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে আলামত পরীক্ষা করে ঘটনাস্থলে দুই অজ্ঞাত পুরুষ ব্যক্তির ডিএনএ পাওয়া গেছে। তাদের শনাক্ত করতে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। এছাড়া আগের চারটি অগ্রগতি প্রতিবেদনের মতো সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদনেও বলা হয়- ঘটনাস্থল থেকে চুরি যাওয়া ল্যাপটপ বর্তমানে ব্যবহার হচ্ছে কিনা। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। মামলার ভিকটিম মিডিয়া কর্মী হওয়ায় তদন্তকালে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে তদন্ত করা হচ্ছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন, বিভিন্ন আলামত পরীক্ষা, বিদেশি বিশেষজ্ঞদের মতামত, বিভিন্ন ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহণ, সমসাময়িক অন্য হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বিশ্লেষণ, ঘটনাস্থলের নিকটবর্তী থানাসমূহে একই অপরাধ প্রক্রিয়ায় সংঘটিত অপরাধ ও অপরাধীদের বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত করা হচ্ছে। গ্রিল কাটা অপরাধে চোর-ডাকাতদের বিষয়েও নিবিড়ভাবে তদন্ত অব্যাহত আছে।

হত্যাকাণ্ডের পর মামলাটিতে নিহত রুনির কথিত বন্ধু তানভীর রহমান, বাড়ির সিকিউরিটি গার্ড এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবির, রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান অরুণ, পলাশ রুদ্র পাল ও আবু সাঈদ গ্রেপ্তার হন। তাদের মধ্যে তানভীর ও পলাশ রুদ্র পাল জামিনে আছেন।

এমএস/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি