সারা দেশে নৌ-ধর্মঘটে চরম ভোগান্তি
প্রকাশিত : ২২:৫১, ৩০ নভেম্বর ২০১৯

নৌ-ধর্মঘটে স্থবির সদরঘাট
বেতন বৃদ্ধি, খোরাকি ভাতা, চাকরী স্থায়ীকরণসহ ১১ দফা দাবিতে শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) রাত থেকে লাগাতার ধর্মঘট পালন করছেন বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা। ফলে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে সারা দেশে লঞ্চ ও পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এতে শনিবার দিনভর ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা।
বিশেষত বরিশাল ও খুলনা বিভাগের মানুষ বেশি দুর্ভোগে পড়েন। চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর ও ১৬টি ঘাটে পণ্য খালাস বন্ধ ছিল। দেশি-বিদেশি জাহাজগুলোয় ৩০ লাখ টনের বেশি পণ্য আটকা পড়ে।
এছাড়া মোংলা বন্দর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ, খুলনা ও যশোরের অভয়নগরসহ বেশিরভাগ বন্দরে জাহাজ থেকে পণ্য লোড-আনলোড কার্যক্রম কার্যত বন্ধ ছিল। তবে ঢাকা নদীবন্দর (সদরঘাট) থেকে হাতেগোনা কয়েকটি লঞ্চ ছেড়ে গেছে।
এদিকে এ ধর্মঘটকে অবৈধ আখ্যায়িত করে ধর্মঘট প্রত্যাহরসহ ৬ দফা দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে পণ্যবাহী জাহাজ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন।
সংগঠনের নেতারা বলেন, নৌ-খাতকে ধ্বংস করতে ৫-৬টি শ্রমিক সংগঠন যখন তখন ধর্মঘট ডাকছে। এ অবস্থার পরিত্রাণ চাই। অপরদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিরসনে মালিক ও শ্রমিক নেতাদের নিয়ে আলাদা বৈঠকে বসে শ্রম অধিদফতর।
ধর্মঘটে ভোগান্তির বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন অধিফতরের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমডোর এম মাহবুব উল ইসলাম বলেন, কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করায় অনেক নৌযান চলাচল করেনি। এতে যাত্রীদের যেমন ভোগান্তি হয়েছে, তেমনি পণ্য পরিবহনে সংকট তৈরি হচ্ছে। গত বুধবার শ্রম অধিদফতরে তিন দফায় মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠকে অনেক দাবি মেনে নেয়া হয়েছে। আমি আশা করি, মানুষের ভোগান্তি অনুধাবন করে এ ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হবে।
এদিকে শনিবার সকাল থেকে সদরঘাট ছিল অনেকটাই ফাঁকা। যাত্রী উপস্থিতিও কম। পুলিশ ও মালিকদের উপস্থিতিতে চাঁদপুরের উদ্দেশে কয়েকটি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। ধর্মঘটের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সদরঘাট টার্মিনালে মিছিল করেন ঘাট শ্রমিকরা।
বিআইডব্লিউটিএ’র যুগ্ম পরিচালক মো. আলমগীর কবীর বলেন, বেশির ভাগ লঞ্চের মাস্টারদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে মালিকরা ওইসব লঞ্চ ছাড়তে পারছেন না। সদরঘাটে যাত্রীদের আনাগোনাও কম। বরিশালের লঞ্চ বন্ধ রয়েছে।
দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার কথা জানান বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মো. শাহ আলম। তিনি বলেন, শ্রম অধিদফতরের ডাকে আমরা বৈঠকে এসেছি। মালিকপক্ষ শ্রম অধিদফতরের মহাপরিচালকের সঙ্গে বৈঠক করে চলে গেছেন। আমাদের সঙ্গে তারা বসবেন না বলে জানিয়েছেন। তারা যদি আমাদের সঙ্গে না বসেন, তবে আলোচনা ফলপ্রসূ হবে কি করে? তিনি বলেন, আমাদের দ্বিপাক্ষিক, ত্রিপাক্ষিক অনেক চুক্তি করেও তারা মানেননি। তাই ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে।
এর আগে শনিবার দুপুরে শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা এক যুক্ত বিবৃত্তিতে জানান, ১১ দফা দাবি নিয়ে প্রায় ১৬ মাস আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন নৌযান শ্রমিকরা। মালিক সমিতির অধিকাংশ সংগঠন সরকারের আহ্বানে বৈঠকে উপস্থিত না হওয়া ও চুক্তি বাস্তবায়ন না করায় বাধ্য হয়ে দাবি বাস্তবায়নের জন্য কর্মবিরতি পালন করছে। নেতারা আশা করেন, সরকার ও প্রশাসন ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে মালিকপক্ষকে ডেকে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার উদ্যোগ গ্রহণ করবে। অন্যথায় উদ্ভ‚ত পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের ওপর জুলম-নির্যাতনের ফলে পরিস্থিতির আরও অবনিত হলে এর দায় সরকারকেই নিতে হবে।
সংকট নিরশনে বিকেলে শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সাথে বৈঠকে বসেন মালিপক্ষ। দুই ঘন্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে নেতারা বলেন, দু'এক দিনের মধ্যে পরিস্থতি স্বাভাবিক হবে। অন্যথায় বিকল্প ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান মালিকরা।
মালিকরা বেরিয়ে যাওয়ার পরই শ্রমিকদের সাথে বৈঠকে বসেন শ্রম মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক।
এদিকে, ২০২১ সালের আগে শ্রমিকদের দাবি মেনে নেয়া হবে না বলে সাফ জানিয়েছেন লঞ্চ মালিকরা। তাদের বেতন বাড়ানোর দাবি অযৌক্তিক উল্লেখ করে লঞ্চ মালিকরা, অবৈধ ধর্মঘট প্রত্যাহার করে ক্ষমা চেয়ে কাজে যোগ দিতে শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানান মালিকরা। শ্রম ভবনে অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সাথে বৈঠক শেষে এসব কথা বলেন তারা।
এনএস/
আরও পড়ুন