ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪

সোনামসজিদ স্থলবন্দরে আমদানি বাণিজ্যে ধস

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৯:২০, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মোহদীপুর এলসি স্টেশনে রপ্তানি পণ্যবাহী শত-শত ট্রাক জট থাকলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থল বন্দরে পণ্য আমদানি নেমেছে প্রায় শুন্যের কোঠায়। ২৭ বছর পূর্বে সোনামসজিদ স্থল বন্দর চালুর পর থেকে এমন অচলাবস্থা দেখা যায়নি বলে অভিমত পোষণ করেন, স্থলবন্দর সিএ্যাণ্ডএফ এজেন্ট আমদানি-রপ্তানিকারক ও বিভিন্ন স্তরের ব্যবসায়ীরা। 

ইতোমধ্যে স্থলবন্দরে গতিশীলতা-সচলাবস্থা ফেরাতে দুই দেশের সিএ্যাণ্ডএফ এজেন্ট, আমদানি-রপ্তানিকারক, কাষ্টমস কর্তৃপক্ষ এবং প্রাইভেট অপারেটর পানামা-সোনামসজিদ পোর্ট লিংক কর্র্তৃপক্ষ যৌথসভা করেছেন।

সভায় ভারতীয় পণ্য রপ্তানি ও বাংলাদেশে পণ্য আমদানিতে সমস্যা ও জটিলতা চিহ্নিত করে উত্তরণের জন্য উভয় দেশের সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ জরুরি বলে দাবি করেছেন তারা।

মোহদীপুর স্থল বন্দরটির অবস্থান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলায়। অপর অংশে বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সোনামসজিদ স্থল বন্দর। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভারতীয় পণ্য রপ্তানিতে মোহদীপুর পূর্ণাঙ্গ বন্দর না হলেও একটি পরিপূর্ণ এলসি স্টেশন। মোহদীপুরে শত-শত, সহস্র পণ্য রপ্তানিবাহী ট্রাকের জট নিত্যদিনের চিত্র। 

এলসি স্টেশনের ব্যবসায়ীরা জানান, ভারতীয় কিছু অভ্যান্তরীণ জটিলতার পাশাপাশি আইনশৃংখলা বাহিনীর হয়রানিতে পড়েন তারা। রয়েছে শ্রমিক-মজুরদের অঘোষিত কর্মসূচী। মোহদীপুর এলসি স্টেশনে রপ্তানি পণ্য ডাম্পিংয়ের কারণে ভারতীয় রপ্তানিকারক ও সিএ্যাণ্ডএফ এজেন্টদের পড়তে হয় জটিলতায়। 

প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে রপ্তানি পণ্যবাহী ট্রাকের জট থাকে প্রায় ১০ কিলোমিটার ব্যাপী মালদার সুশতানী এলাকা থেকে মোহদীপুর এলসি স্টেশন পর্যন্ত। এর বাইরেও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় গড়ে ওঠা কয়েক’শ বিঘার পার্ক এলাকায় আটকে থাকে বাংলাদেশে রপ্তানিবাহী শতশত পণ্য বোঝাই ট্রাক।

মোহদীপুর এলসি স্টেশনের রপ্তানিকারক সজল ঘোষ, সিএ্যাণ্ডএফ এজেন্ট ফিরোজ খান জানান, স্থান সংকুলান না হওয়ায় সোনামসজিদ স্থল বন্দরে ভারতীয় পন্য রপ্তানিতে রয়েছে বহুমুখী জটিলতা। এ বিষয়ে দুইদেশের বন্দর ব্যবসায়ীদের মধ্যে যৌথসভা করেও কাঙ্খিত ফলাফল পাওয়া যায়নি। 
এছাড়া ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পণ্য মোহদীপুর ডাম্পিং জটিলতা, শ্রমিক-মজুরদের নায্য প্রাপ্তিজনিত আন্দোলনের পাশাপাশি ভারতীয় আইনশৃংখলা বাহিনীর হয়রানিমূলক আচরণ রয়েছে।
এদিকে সোনামসজিদ স্থল বন্দর সিএ্যাণ্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তাক আহম্মেদ, আমদানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুল ইসলাম, প্রাইভেট অপারেটর পানামা-সোনা মসজিদ পোর্ট লিংকের ডেপুটি পোর্ট ম্যানেজার মইনুল ইসলাম জানান, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে (৪ সেপ্টেম্বর) উভয় দেশের সিএ্যাণ্ডএফ এজেন্ট আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির ব্যবসায়ী ও সোনা মসজিদ স্থলবন্দর কাষ্টমস কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এক বাণিজ্যিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার আলোচনায় উঠে আসে বহুমুখী জটিলতা। 
 
ওই যৌথ সভায় মোহদীপুর এলসি স্টেশন সিএ্যাণ্ডএফ ওয়েলফেয়ার এ্যাসেসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ভুপতি মন্ডল পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের রাজনৈতিক জটিলতাকে দোষারোপ করেন। এর পাশাপাশি তিনি মোহদীপুর এলসি স্টেশনের অনলাইন নেটওয়ার্ক সার্ভারের জটিলতা ও বিদ্যুতের লোড সেডিং জনিত সমস্যার কথা উল্লেখ্য করেন।

প্রাইভেট অপারেটর পানামা-সোনা মসজিদ পোর্ট লিংকয়ের ডেপুটি পোর্ট ম্যানেজার মইনুল ইসলাম বলেন, ইতোপূর্বে সোনামসজিদ স্থলবন্দরে নুন্যতম ৪’শ পণ্যবাহী ট্রাক আসতো। কখনো-কখনো ৭’শ ট্রাক পণ্যবাহী ট্রাকও আসতো। কিন্তু বেশ কিছুদিন যাবৎ ভারতীয় ব্যবসায়ীদের তেমন সাড়া পাওয়া যায় না। ভারতীয় রপ্তানি পণ্যবাহী ট্রাকের সংখ্যাও নেমে দাঁড়িয়েছে ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৯০ ট্রাক।

সোনামসজিদ স্থল বন্দর কাষ্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জামাল জানান, গত ১৫-১৬ অর্থ বছরে মোহদীপুর এলসি স্টেশন পথে সোনামসজিদ স্থল বন্দরে ভারতীয় আমদানি পণ্যবাহী ট্রাক আসে ১ লাখ ১ হাজার ৯৯৭টি। 

বিভিন্ন প্রকার ভারতীয় পণ্য আমদানি হয় ৩ হাজার কোটি ১৮ লাখ ৭১ হাজার টাকার। এ থেকে বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব আয় হয় ৫৩২ কোটি ১৯ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। ১৮-১৯ অর্থ বছরে ভারতীয় আমদানি পণ্যবাহী ট্রাক আসে ৬৭ হাজার ২১৮টি। বিভিন্ন প্রকার ভারতীয় পণ্য আমদানি হয় ১ হাজার ৯’শ কোটি ৯৯ লাখ ৫ হাজার ৯’শ মেট্রিক টন। 

রাজস্ব আয় হয় ৪১০ কোটি ৬২ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। কিন্ত বর্তমান ১৯-২০ অর্থ বছরের আড়াই মাস অতিবাহিত হলেও উল্লেখ্য করার মত ভারতীয় পণ্য আমদানি হয়নি সোনামসজিদ স্থল বন্দরে।

আই/এসি
 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি