ঢাকা, শুক্রবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

স্থানীয় সরকারে সরাসরি ভোট বাতিলের সুপারিশ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২২:০৪, ২০ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশন—সব ধরনের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে সরাসরি চেয়ারম্যান ও মেয়র নির্বাচনব্যবস্থা বাতিলের সুপারিশ করেছে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন। তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী, জনগণ কেবল সদস্য ও কাউন্সিলরদের ভোটে নির্বাচিত করবেন। এরপর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মধ্য থেকেই দ্বিতীয় ধাপে চেয়ারম্যান ও মেয়র নির্বাচন করা হবে।

কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত ৮ সদস্যের এই কমিশন রোববার (২০ এপ্রিল) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার ঢেলে সাজানোর জন্য ৫১টি সুপারিশ করা হয়েছে, যার মধ্যে স্থানীয় সরকার নির্বাচনব্যবস্থায় বড় পরিবর্তনের বিষয়টিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

প্রতিবেদন গ্রহণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই প্রতিবেদনটি জনসাধারণের সামনে প্রকাশ করা হবে যাতে সাধারণ নাগরিক, বিশেষজ্ঞ এবং অংশীজনরা এ বিষয়ে মতামত জানাতে পারেন। তার মতে, এসব সংস্কার ছোটবেলা থেকেই শেখানো উচিত, যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সচেতন নাগরিক হয়ে গড়ে ওঠে।

তোফায়েল আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কোনো নির্বাচনের আগে কাঠামোগত সংস্কার না করলে নির্বাচনের ফলাফল দীর্ঘমেয়াদে কাজে আসে না। এজন্য কমিশন একসাথে সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন করার সুপারিশ করেছে, যা ৪০ দিনের একটি সময়সীমার মধ্যে শেষ করা সম্ভব। এতে অর্থ ও জনবল সাশ্রয় হবে।

তিনি বলেন, বর্তমানে একেকটি নির্বাচন আয়োজনে খরচ হয় প্রায় ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা এবং প্রক্রিয়ায় অংশ নেয় প্রায় ১৯ লাখ জনবল। এক শিডিউলে নির্বাচন হলে খরচ কমে দাঁড়াবে প্রায় ৭০০ কোটি টাকায় এবং জনবল লাগবে ৯ লাখের মতো।

কমিশনের মতে, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো যেন সত্যিকারের সরকার রূপে কাজ করতে পারে, এজন্য তাদের অর্থায়ন বাড়াতে হবে। এখন জাতীয় বাজেটের মাত্র ৫ শতাংশ তাদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়, যা বাড়িয়ে করের একটি অংশ সরাসরি স্থানীয় সরকারে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

আরও সুপারিশে বলা হয়েছে, ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড সংখ্যা সর্বোচ্চ ৩৯টি করা যেতে পারে, তবে সর্বনিম্ন ৯টি থাকবে। তিনটি ওয়ার্ড শুধু নারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে, যেখানে শুধু নারীরাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। একইসঙ্গে ইউনিয়ন পর্যায়ে একটি কার্যকর স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ে তোলা ও সেখানে নারী চিকিৎসকসহ অন্তত তিনজন চিকিৎসক থাকার সুপারিশ করা হয়েছে।

বিচারপ্রক্রিয়ায় সহজলভ্যতা আনতে উপজেলায় পূর্ণাঙ্গ দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত স্থাপন, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা চালু ও গ্রাম আদালত ব্যবস্থা বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে।

কমিশনের সুপারিশে আরও রয়েছে স্থানীয় সরকার কাঠামোর জন্য ‘লোকাল গভর্নমেন্ট সার্ভিস’ নামে নতুন নিয়োগ কাঠামো গড়ে তোলা এবং ভূমির যথেচ্ছ ব্যবহার রোধে ‘ভূমি ব্যবহার আইন’ তৈরি ও জাতীয় ভৌত অবকাঠামো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন।

সবশেষে কমিশন ছয়টি নতুন আইন প্রণয়ন এবং কয়েকটি বিদ্যমান আইন সংশোধনের খসড়া দিয়েছে। প্রশাসনিক কাঠামোতেও সংস্কারের সুপারিশ করা হয়েছে, যাতে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে কার্যকর ও জনগণের কাছাকাছি আনা যায়।


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি