ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৪ মে ২০২৪

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচার শেষ পর্যায়ে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:২৫, ২১ আগস্ট ২০১৭ | আপডেট: ২১:৪৪, ২৭ আগস্ট ২০১৭

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের সময়ে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে চালানো ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ১৩ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। কিন্তু এখনও বিচারের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে ওই নৃশংস হামলায় হতাহত ব্যক্তিদের পরিবার।


মামলা পরিচালনায় যুক্ত সরকারপক্ষের কৌঁসুলিরা বলছেন, বিচার শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আগামী কিছুদিনের মধ্যে এই মামলার রায় হতে পারে। এখন আসামিপক্ষের সাফাই সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। সাফাই সাক্ষ্য শেষ হলে হবে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন। এরপরই রায়। তবে এই প্রক্রিয়া শেষ হতে কত দিন লাগবে, তা সুনির্দিষ্ট করে তাঁরা কিছুই বলতে পারেননি।


মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত সরকারি কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল বলেছেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি পৃথক মামলায় আদালতে দাখিল করা অভিযোগপত্রে মোট ৫২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। বিচার এখন শেষ পর্যায়ে। দীর্ঘ প্রত্যাশিত এই মামলার রায় চলতি বছরের মধ্যেই হবে বলে তিনি আশাবাদী।


বর্তমানে এ মামলায় আসামিপক্ষের ১৩ জনের সাফাই সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। আসামিপক্ষের আরও আট থেকে ১০ জনের সাফাই সাক্ষী নেওয়া হবে। পরে এ মামলায় উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণা করা হবে।
মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, এর আগে দুজন তদন্ত কর্মকর্তাসহ (আইও) ২২৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও তাদের আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জেরা সম্পন্ন করেন। এ মামলায় ৪৯১ জনের মধ্যে ২২৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়।


অভিযুক্তদের মধ্যে ১৯ জন এখনো পলাতক রয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামি সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় এবং অপর এক মামলায় হরকাতুল জিহাদ প্রধান মুফতি আবদুল হান্নানের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। এ ছাড়া আটজন জামিনে রয়েছে। অপর ১৯ জন আসামি বিভিন্ন দেশে পলাতক রয়েছে, তাদের গ্রেফতারে ইন্টারপোলের সহায়তা চাওয়া হয়েছে।


পলাতক ১৯ আসামি হলেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে, শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ সৌদি আরবে, হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক হানিফ কলকাতায়, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এ টি এম আমিন যুক্তরাষ্ট্রে, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ারদার কানাডায়, বাবু ওরফে রাতুল বাবু ভারতে, আনিসুল মোর্সালিন এবং তাঁর ভাই মুহিবুল মুক্তাকীন ভারতের কারাগারে এবং মাওলানা তাজুল ইসলাম দক্ষিণ আফ্রিকায় রয়েছেন।


জঙ্গিনেতা শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, মাওলানা আবু বকর, ইকবাল, খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে বদর, মাওলানা লিটন ওরফে জোবায়ের ওরফে দেলোয়ার, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপকমিশনার (পূর্ব) এবং উপকমিশনার (দক্ষিণ) ওবায়দুর রহমান এবং খান সাঈদ হাসান বিদেশে অবস্থান করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, তাদের বেশির ভাগই পাকিস্তানে রয়েছে। তবে অপর অভিযুক্ত পলাতক আসামি হারিস চৌধুরীর অবস্থান জানা যায়নি।


পলাতকদের মধ্যে মাওলানা তাজউদ্দিন ও বাবু ওরফে রাতুল বাবু এরা দুজন বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই। পিন্টুও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় অভিযুক্ত।


অভিযুক্ত ৫২ জনের মধ্যে বিএনপির সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু বর্তমানে জেলে রয়েছেন। এই মামলায় পুলিশের সাবেক আইজি আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক ও খোদাবক্স চৌধুরী এবং সাবেক তিন তদন্ত কর্মকর্তা- সিআইডির সাবেক এসপি রুহুল আমিন, সিআইডির সাবেক এএসপি আতিকুর রহমান ও আবদুর রশিদ জামিনে রয়েছেন।


২০০৮ সালের ১১ জুলাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২১ আগস্টের ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুটি মামলায় প্রথম চার্জশিট দাখিল করা হয়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু এবং ২১ জন হুজি নেতাকর্মীসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করা হয়।


নতুন করে তদন্তের পরে ২০১২ সালের ৩ জুলাই অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ৩০ জনকে অভিযুক্ত করে পৃথক দুটি সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করে। দুটি মামলায় মোট অভিযুক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫২ জন।


২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, শেখ হাসিনার বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে আকস্মিক গ্রেনেড বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলে মারাত্মক বিশৃঙ্খলা, ভয়াবহ মৃত্যু ও দিনের আলো মুছে গিয়ে এক ধোঁয়াচ্ছন্ন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই এই সিরিজ গ্রেনেড হামলা চালানো হলেও তৎকালীন ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ হানিফ এবং শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত দেহরক্ষী তাৎক্ষণিকভাবে এক মানববলয় তৈরি করে নিজেরা আঘাত সহ্য করে শেখ হাসিনাকে গ্রেনেডের হাত থেকে রক্ষা করেন।


মেয়র হানিফের মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত অস্ত্রোপচার করার কথা থাকলেও গ্রেনেডের স্প্লিন্টার শরীরে থাকার কারণে তাঁর অস্ত্রোপাচার করা সম্ভব হয়নি। পরে তিনি ব্যাংকক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।


এদিকে শেখ হাসিনা গ্রেনেডের আঘাত থেকে বেঁচে গেলেও তাঁর শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।


এই বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় নিহত ব্যক্তিরা হলেন মহিলা লীগ নেত্রী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমান, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ, আবুল কালাম আজাদ, রেজিনা বেগম, নাসির উদ্দিন সরদার, আতিক সরকার, আবদুল কুদ্দুস পাটোয়ারি, আমিনুল ইসলাম মোয়াজ্ঝেম, বেলাল হোসেন, মামুন মৃধা, রতন শিকদার, লিটন মুনশী, হাসিনা মমতাজ রিনা, সুফিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা), মোশতাক আহমেদ সেন্টু, মোহাম্মদ হানিফ, আবুল কাশেম, জাহেদ আলী, মোমেন আলী, এম শামসুদ্দিন ও ইসাহাক মিয়া।


মারাত্মক আহত ব্যক্তিরা হলেন শেখ হাসিনা, আমির হোসেন আমু, আবদুর রাজ্জাক, সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, ওবায়দুল কাদের, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, মোহাম্মদ হানিফ, এ এফ এম বাহাউদ্দিন নাসিম, নজরুল ইসলাম বাবু, আওলাদ হোসেন, সাঈদ খোকন, মাহবুবা আখতার, অ্যাডভোকেট উম্মে রাজিয়া কাজল, নাসিমা ফেরদৌস, শাহিদা তারেক দিপ্তী, রাশেদা আখতার রুমা, হামিদা খানম মনি, ইঞ্জিনিয়ার সেলিম, রুমা ইসলাম, কাজী মোয়াজ্জেম হোসেইন এবং মামুন মল্লিক। সূত্র : বাসস।
//এআর


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি