এনবিআরে অচলাবস্থা: দিনে ৩ হাজার কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা
প্রকাশিত : ২০:০৯, ২৮ জুন ২০২৫

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চলমান অচলাবস্থার কারণে দেশের ব্যবসায় দৈনিক প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশের শীর্ষ স্থানীয় ব্যবসায়ী নেতারা। দ্রুত সংকট সমাধানে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপও দাবি করেছেন তারা।
২৮ জুন রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রপ্তানিমুখী বিভিন্ন শিল্পখাতের নেতারা জানান, এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কলম বিরতি কর্মসূচি গত ১৪ মে থেকে শুরু হলেও আজ থেকে তা পূর্ণাঙ্গ অচলাবস্থায় রূপ নিয়েছে, যা আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
সংবাদ সম্মেলনে আইসিসি বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, শিল্প মালিকদের সংগঠন বিএসআইসির সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী (পেয়ারভেজ), বিজিএমইএ’র সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু, বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল, বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ নাসিম মনজুর এবং ডিএসসিসিআই সভাপতি তাসকিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান অপসারণের বিরোধীতা করে নেতারা বলেন, এনবিআর চেয়ারম্যান অপসারণের দাবিকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট অচলাবস্থা আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান সম্ভব। তবে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা কেউ শ্রমিক ইউনিয়নের মতো আন্দোলনে নামতে পারেন না বলেও মন্তব্য করেন তারা।
ব্যবসায়ী নেতারা বলেছেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধতা নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তারা স্পষ্ট করেছেন, কোনো অবস্থাতেই আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটানো যাবে না।
ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, এনবিআরের কলম বিরতি কর্মসূচির কারণে প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার ব্যবসায়িক কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা সংকট নিরসনে সরকারের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়ে বলেন, দেশের অর্থনীতি এবং বৈদেশিক বাণিজ্য সচল রাখতে দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে এই অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠতে হবে।
তারা বলেন, ‘আমাদের তৈরি পোশাক, চামড়া, জুতা, সিরামিকস, ওষুধ, কৃষিপণ্য এবং প্লাস্টিক খাত এখন শীতকালীন মৌসুমের কার্যাদেশ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। অথচ কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট ও কাস্টমস হাউজে অচলাবস্থার কারণে সময়মতো রপ্তানি করা সম্ভব হচ্ছে না।
নেতারা জানান, অনেক ক্রেতা কার্যাদেশ বাতিলের হুমকি দিচ্ছেন এবং নতুন কার্যাদেশ দিতেও অনাগ্রহ প্রকাশ করছেন। পরিস্থিতি এভাবে চলতে থাকলে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়বে এবং প্রতিবেশী দেশের কাছে বাজার হারানোর আশঙ্কা রয়েছে।
ব্যবসায়ী নেতারা এনবিআরের আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানের জন্য প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
আলোচনায় অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (বিডা) সম্পৃক্ত করার পরামর্শ দেন তারা।
একই সঙ্গে তারা আন্দোলনরত এনবিআর কর্মীদের ভবিষ্যৎ ন্যায্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান, যেন জাতীয় অর্থনীতিতে আর কোনো ধরনের ক্ষতি না হয়।
নেতারা বলেন, বন্দরে পণ্য আটকে থাকায় ডিমারেজ বা জরিমানার পরিমাণ চার গুণ বেড়েছে, যা ব্যবসায়িক খরচকে অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে।
নেতারা হুঁশিয়ারি দেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজার বাংলাদেশের জন্য অপেক্ষা করবে না। অর্ডার প্রতিবেশী দেশে চলে গেলে জাতীয় অর্থনীতির জন্য তা অপূরণীয় ক্ষতি ডেকে আনবে।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পণ্য ছাড় করতে বিলম্ব হওয়ায় বন্দরে ডিমারেজ বা অতিরিক্ত জরিমানার পরিমাণ চার গুণ বেড়েছে। এতে ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ব্যবসায়ীদের দাবি—
১. এনবিআরের আন্দোলনরত কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক করা।
২. বিতর্কিত অধ্যাদেশ আলোচনার মাধ্যমে পর্যালোচনা করা— যাতে আন্তর্জাতিক মান ও দেশের বাস্তবতা সমন্বয় হয়।
৩. ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সব সরকারি দপ্তরের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা বাড়ানো।
৪. এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সময়সীমাবদ্ধ সংস্কার কর্মসূচি চালু করা।
আরও পড়ুন