ঢাকা, মঙ্গলবার   ২২ জুলাই ২০২৫

কপিরাইট আইন : সংশোধনের দাবিতে সোচ্চার গীতিকবি সংঘ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৪:৫২, ২৬ আগস্ট ২০২০

Ekushey Television Ltd.

এককালীন কিছু টাকা দিয়ে একটি গান কিংবা ১২ গানের একটি অ্যালবামের চিরস্থায়ী মালিক হওয়ার দিন শেষ। গত এক যুগে সংগীত বাজারে আলোচনার বড় বিষয় ছিল কপিরাইট অধিকার। এতে শিল্পীরা যেমন সচেতন হয়েছেন, তেমনি সরকারি উদ্যোগও হয়েছে সক্রিয়। গঠিত হয়েছে বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি অধিকার (আইপিআর) টাস্কফোর্স। কপিরাইট অফিস নানা সময় কপিরাইট–সচেতনতায় শিল্পীদের সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। গত বছরের জুন মাসে সরাসরি অর্থদণ্ড করেছে কপিরাইট রেজিস্ট্রার। মেধাস্বত্ব আইন নিয়ে আলাপ, সচেতনতা বা বাস্তবায়নের বাংলাদেশ মিউজিক্যাল ব্যান্ডস অ্যাসোসিয়েশনের (বামবা) ভূমিকা ছিল লক্ষণীয়। নতুন করে কপিরাইট আইনে সংশোধনের বিষয়ে সোচ্চার হয়ে উঠেছে ‘গীতিকবি সংঘ’ নামের একটি সংগঠন।

তারা সম্প্রতি আইনটি সংশোধনে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসে চিঠি দিয়েছে। যেখানে লিখিতভাবে দশটি প্রস্তাবও দিয়েছে তারা।

জানা গেছে, গীতিকবি সংঘের চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রেজিস্ট্রার জাফর রাজা চৌধুরীর সাথে এক সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। যে প্রতিনিধি দলে ছিলেন গীতিকবি হাসান মতিউর রহমান, আসিফ ইকবাল, কবির বকুল ও জুলফিকার রাসেল।

এ সাক্ষাতে গীতিকবিদের নৈতিক ও আর্থিক অধিকার আদায়ে গীতিকবি সংঘের সাংগঠনিক অবস্থান, সংগীতাঙ্গনে বিরাজমান অস্থিরতা ও সংক্ষুব্ধতা নিরসনে সংঘের ভূমিকা ও অবস্থান, সকল পক্ষের সাথে আলোচনার মাধ্যমে পারস্পরিক আস্থার পরিবেশ তৈরির প্রচেষ্টা, কপিরাইট আইনের নানা দিকসহ গীতিকবিদের অপ্রাপ্তি ও বঞ্চনার বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। এ সময় কপিরাইট ডেপুটি রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ রায়হানুল হারুনও আলোচনায় অংশ নেন।

আলোচনা সভায় গীতিকবিদের প্রতিনিধিত্বমূলক সংগঠন হিসেবে গীতিকবি সংঘের প্রতিনিধিরা কপিরাইট আইনে গীতিকবিসহ সকল সুরকার, কন্ঠশিল্পী, যন্ত্রশিল্পী, প্রযোজক ও মিউজিক লেবেলের ন্যায্য স্বার্থ বিষয়ে শ্রদ্ধাশীল থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এবং আলোচনার পরিবেশ তৈরিতে সংঘের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন।

জাফর রাজা চৌধুরী কপিরাইট আইন নিয়ে গীতিকবি সংঘের আগ্রহ ও পর্যালোচনার প্রশংসা করেন এবং সংগীতাঙ্গনে গীতিকবিসহ সকল পক্ষের স্বার্থ নিশ্চিতকরণে কার্যকর ভূমিকা রাখার প্রতিশ্রুতি দেন।

আলোচনা শেষে গীতিকবি সংঘের প্রতিনিধিরা প্রস্তাবিত কপিরাইট আইনে গীতিকবি সংঘের দশটি প্রস্তাব সন্নিবেশিত করার জন্যে একটি চিঠি কপিরাইট রেজিস্ট্রার জাফর রাজা চৌধুরীর কাছে হস্তান্তর করেন।

বর্তমান আইনে সংগীতের গীতিকার ও সুরকার হচ্ছে আইনত প্রণেতা ও কপিরাইটের মালিক। কণ্ঠশিল্পী, প্রযোজক ও ব্রডকাস্টিং অরগাইনেজেশন হচ্ছে রিলেটেড রাইটসের অধিকারী। তবে কপিরাইট ও রিলেটেড রাইটস মূলত একই অধিকার বহন করে। সংগীত প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত দুই ক্ষেত্রেই নিবন্ধন করা যায়। গীতিকার ও সুরকারের কপিরাইট হচ্ছে জীবনকাল ও মৃত্যুর পর ৬০ বছর। কণ্ঠশিল্পীর ক্ষেত্রে মেয়াদ ৫০ বছর। আর প্রযোজকের ক্ষেত্রে ৬০ বছর ও ব্রডকাস্টিং অরগানাইজেশনের বেলায় ২৫ বছর পর্যন্ত কপিরাইটের মেয়াদ থাকে। কপিরাইট নিবন্ধনের জন্য আবেদনের নিয়মকানুন একই রকম।

সাধারণত চলচ্চিত্র, আলোকচিত্র আর সঙ্গীতের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি কপিরাইট লঙ্ঘন হচ্ছে। গীতিকার কিংবা সুরকার বা শিল্পীর অনুমতি ছাড়া বিভিন্নভাবে তাদের গান ব্যবহার করা হচ্ছে, যা আইনের লঙ্ঘন। সাহিত্যের ক্ষেত্রে এটি কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও গীতিকার সুরকারের অনুমতি ছাড়া এখন অনেকক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হচ্ছে মূল সঙ্গীতকে। রিংটোন, ওয়ালপেপারে সেট হচ্ছে অর্থাৎ ডিজিটালাইজেশন করা হচ্ছে মূল মালিকের অনুমতি ছাড়াই।

এছাড়া ইন্টারনেট থেকে গান ডাউনলোড করে নেয়া, মোবাইল ফোন বা পেন ড্রাইভের ম্যাধমে গান বা চলচ্চিত্র পাইরেসির ফলে এর নির্মাতার বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

বাংলাদেশে কপিরাইট আইন প্রথম তৈরি হয় ১৯৭৪ সালে। কিন্তু এরপর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। সিডি, মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট ইত্যাদির কারণে সৃষ্টিশীলতা ও কপিরাইট ধারণারও বদল হয়েছে।

পরবর্তীতে ২০০০ সালে নতুন একটি কপিরাইট আইন করা হয়, যা পরে ২০০৫ সালে সংশোধন হয়। যা আবারও পরিবর্তনের দাবি উঠেছে। সেই সঙ্গে এই আইন কার্যকর করারও দাবি উঠেছে। 

সে ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন ও সংযোজন প্রয়োজন বলে মত দিয়েছে গীতিকবি সংঘ।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সংগীতাঙ্গনে গেল ৪৯ বছরেও গড়ে ওঠেনি সর্বস্তরের কোনও সংগঠন। এ নিয়ে সংগীত স্রষ্টাদের মাঝে রয়েছে হতাশা। কারণ, অধিকার নিয়ে কথা বলার কেউ নেই, নেই কোনও প্ল্যাটফর্ম। সেটি কাটিয়ে তোলার লক্ষ্যে চলমান করোনাকাল উপেক্ষা করে জোটবদ্ধ হলেন দেশের সর্বস্তরের গীতিকবিরা। অন্তর্জালে কয়েক দফা বৈঠক শেষে গত ২৪ জুলাই সৃষ্টি হয় ‘গীতিকবি সংঘ, বাংলাদেশ’ নামের সংগঠনটি।

এসএ/

 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি