ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৩ মে ২০২৫

ছেলেকে গুম করতে চেয়েছিল: রাশেদের বাবা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:১৯, ৭ জুলাই ২০১৮ | আপডেট: ২০:২২, ৭ জুলাই ২০১৮

Ekushey Television Ltd.

কোটা আন্দোলনের প্লাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ এর যুগ্ম আহ্বায়ক রাদেশ খানকে গ্রেফতারের আগেই গুম করতে চেয়েছিল বলে অভিযোগ করছেন রাশেদের বাবা নবাই বিশ্বাস। আজ শনিবার বিকালে রাজধানীর ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশে (ক্র্যাব) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।

নবাই বিশ্বাস বলেন, রাশেদকে গ্রেফতার করার আগের দিন ঝিনাইদহ ছাত্রলীগের সভাপতি রানা আমার মোবাইল নম্বরের জন্য কয়েকজনকে আমাদের বাড়িতে পাঠায়। এরপর ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ আমার মোবাইলে ফোন দেয়। ফোনে আমাকে বলে, আপনি কেমন সন্তান জন্ম দিয়েছেন, সে তো একটা কুলাঙ্গার। ছেলেকে এসব থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন, নাহলে গুম করে দেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘এরপর আবার ১০ জন কর্মী মোটরসাইকেল নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসে। ছেলেকে ফিরিয়ে আনার জন্য আমার ঘাড় ধরে হুমকি দিয়ে যায়। পরদিন আমার ছেলেকে গ্রেফতার করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে রাশেদের বাবা আরও বলেন, ‘আমরা ছেলের খোঁজে শাহবাগ থানায় গেলে আমাদের দেখে তারা হাসেন। আমরা এখন পর্যন্ত রাশেদের সঙ্গে দেখা করতে পারি নাই। কোথায় আছে, কী অবস্থায় আছে, আমরা কিছুই জানি না। অনেকেই বলে, নাকি আমি জামায়াত-শিবিরের লোক, আমি নাকি রাজাকার। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল ৬ মাস। আমি একজন সাধারণ দিনমজুর, কাজ করে খাই। আমার এবং আমার পরিবারের কোনও নিরাপত্তা নাই, আমরা নিরাপত্তা চাই।’

এসময় রাশেদের স্ত্রী রাবেয়া বলেন, ‘‘রাশেদ যেদিন গ্রেফতার হয়, সেদিন বেলা ১২টার দিকে আমাকে ফোন দিয়ে বলে খাবার রেডি করতে। এদিকে আধাঘণ্টা ধরে একজন লোক ঘোরাঘুরি করতেছে এবং রাশেদকে খুঁজতেছে বলে জানতে পারি। আমি একথা রাশেদকে জানালে সে ভয় পেয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পর রাশেদকে তারা টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যায়। তার কাপড় খুলে ফেলার মতো অবস্থা হচ্ছিল। রাশেদ বার বার বলছিল ওরকম করতে না, তাদের সঙ্গে সে এমনিতেই যাবে বললেও তারা কোনও কথা শোনে নাই। তারা বলছিল- ‘তোকে রাতে ধরলে ভালো হতো। তাকে নিয়ে যাওয়ার পর দৌড় দিয়ে থানায় যাই কিন্তু সেখানেও কিছু জানাতে পারে নাই। অথচ রাশেদকে যারা ধরে নিয়ে গেছে তাদের থানা থেকে বের হতে দেখেছি। কিন্তু ওসি সাহেব বলেছেন- উনি তাদের চেনেন না।

রাবেয়া আরও বলেন, ‘পরের দিন আমরা শাহবাগ থানায় যাই। সেখানে খোঁজ করতে গেলে তারা আমাদের নিয়ে হাসাহাসি করে। ওসি সাহেবের রুমে অনুমতি নিয়ে ঢুকে রাশেদের কথা জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলে ওঠেন- একে ঢুকতে দিছে কে? এরপর একটা কাগজ দেখায় বলেছেন- গুরুতর মামলা হয়েছে তার নামে। কিন্তু তাকে কোথায় রাখা হয়েছে কিছুই বলে নাই। শুধু জানতে পারলাম রাশেদকে কোর্টে হাজির করা হবে। সময়টাও কেউ বলে নাই। আমরা সুপ্রিম কোর্টে যাই, জজ কোর্টে যাই। পরে দেখি দু’জন ডিবির লোক তাকে টেনে কোর্টে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা মানবাধিকার সংগঠনের মাধ্যমে আইনি লড়াই করে যাচ্ছি।

ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়াসহ ২০ জন আইনজীবী বিনামূল্যে রাশেদের পক্ষে আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘গতকাল (শুক্রবার) স্যারকে (ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া) জিজ্ঞেস করলাম- ‘কী অবস্থা?’ তিনি বললেন, ‘আমাদেরও কিছু জানানো হচ্ছে না’।

রাশেদকে আবার কোর্টে তোলার ব্যাপারে রাবেয়া বলেন, ‘এখন শুনেছি রোববার নাকি আবার তাকে (রাশেদ) কোর্টে হাজির করা হবে কিন্তু সময় কেউ বলে না।

রাশেদের সঙ্গে আরও একজনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘রাশেদের সঙ্গে মাহফুজকেও তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। অথচ মাহফুজেরও কোনও খোঁজ নাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তারা অথচ কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত কোনও খোঁজ নেয় নাই। আমরা রাশেদসহ গ্রেফতারকৃত সবার মুক্তি চাই। তাদের পরীক্ষা বাকি আছে, সেটা দিতে দেওয়া হোক। অবিলম্বে প্রজ্ঞাপন জারি করা হোক।

সংবাদ সম্মেলনে রাশেদের মা মছাম্মত ছালেহা বেগম, বোন সোনিয়া ও ‘সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ এর যুগ্ম আহ্বায়ক আতাউল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।

 টিআর/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি