টানা বৃষ্টিতে দুর্ভোগ চরমে, রাতে ঝড়ের আভাস
প্রকাশিত : ১৯:৩২, ৮ জুলাই ২০২৫

টানা বর্ষণে দেশের বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে পানিবন্দী হয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন হাজারো মানুষ। এর মধ্যেই আজ রাত ১টার মধ্যে দেশের সাত অঞ্চলে সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে বলে আভাস দিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের দেওয়া রাত ১টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দর সমূহের পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টার মধ্যে খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালি, নোয়াখালি, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার অঞ্চল সমূহের ওপর দিয়ে দক্ষিণ/দক্ষিণ- পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দর সমূহকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এছাড়াও আগামীকাল সকাল ৯টার মধ্যে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। এছাড়া সারাদেশের দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
এদিকে সোমবার রাত থেকে দেশের প্রায় সকল বিভাগেই টানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে এবং কোনও কোনও অঞ্চলের নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার কাছাকাছি চলে এসেছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ২৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতে ফেনী শহরের পাঠানবাড়ি এলাকা, নাজির রোড, একাডেমি, রামপুর শাহীন অ্যাকাডেমি এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় তৈরি হয়েছে জলাবদ্ধতা।
স্থানীয়রা জানান, ফুলগাজী বাজারের শ্রীপুর রোডে মুহুরী নদীর বেড়ীবাঁধ ভেঙে কয়েকটি দোকান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
টানা বর্ষণে নোয়াখালী জেলা শহরের মাইজদীর প্রেসক্লাব সড়ক, টাউন হল মোড়, ইসলামিয়া সড়ক, জেলা প্রশাসক সড়ক, মহিলা কলেজ সড়ক, জেল রোড, মাইজদী বাজার সড়ক, মাইজদী স্টেশন রোড, হাকিম কোয়াটার রোড, নোয়াখালী সরকারি কলেজ রোড, মাইজদী মাস্টার পাড়ার বিভিন্ন সড়ক, মাইজদী হাউজিং এস্টেট এলাকা, লক্ষ্মীনারায়নপুর, দরগা বাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে সড়কে চলাচলে চরম দুর্ভোগে পড়েন শহরবাসী।
স্থানীয়রা বলছেন, পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা এবং পানি নিষ্কাশনের নালা ও জলাশয়গুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় শহরবাসীর এ দুর্ভোগ। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকে দায়ী করছেন অনেকে। হালকা বৃষ্টিতেই নোয়াখালী পৌরসভা এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
বরিশাল নগরীতে টানা বৃষ্টিতে ড্রেন, নালা ও ডোবা পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। মৃতপ্রায় খালগুলোতে পানি আটকে ময়লা আবর্জনা পথে উঠে এসেছে। অনেক স্থানে জলাবদ্ধতারও তৈরি হয়েছে। বৃষ্টিতে অনেকেই ঘরবন্দি সময় কাটাচ্ছেন। তবে বৃষ্টিতে খুশি হয়েছেন চাষিরা। ক্ষেতে ধানের বীজ বপনে উপযুক্ত সময়ে বৃষ্টিপাত মাটিকে উর্বর করবে বলে জানান তারা।
এছাড়া বৃষ্টিতে পটুয়াখালীর পৌর এলাকার বিভিন্ন সড়ক ও বাসাবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। বিশেষ করে শহরের ডিসি অফিস রোড, হাসপাতাল এলাকা, বাইপাস সড়ক, গোরস্তান রোড, সোনালী ব্যাংকের পেছনে, সার্কিট হাউস চত্বর, ঝাউতলা ও সরকারি কলেজ রোডসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকা জলাবদ্ধতায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
প্রায় সারাদেশেই টানা বৃষ্টিপাতের ফলে অনেকে বন্যার আশঙ্কা করছেন। তবে আপাতত বন্যার আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র ও আবহাওয়া অধিদফতর।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হলেও প্রধান নদীগুলোর পানি বিপদসীমার নীচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তাই, আগামী তিন দিনে বন্যার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা বলেন, এখন পর্যন্ত বন্যার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। কারণ বৃষ্টি আমাদের উত্তর দিকে হচ্ছে না, পশ্চিম দিকে হচ্ছে। তাই, বন্যার প্রবণতা কম।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সর্বশেষ পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, চট্টগ্রাম বিভাগের ফেনী, সাঙ্গু, হালদা, সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে, এসব নদীর পানির মাত্রা আগামী এক দিন বৃদ্ধি পেয়ে পরে স্থিতিশীল হতে পারে।
এসএস//
আরও পড়ুন