বিজিবির রক্তে ভেজা পাহাড়, পার্বত্য সীমান্তের গৌরবগাঁথা
প্রকাশিত : ১৩:৪৯, ১১ অক্টোবর ২০২৫

স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সীমান্ত সুরক্ষায় প্রাণ দিয়েছেন ১১০ জন সীমান্তরক্ষী। এদের মধ্যে ২ জন মায়ানমার সীমান্তে এবং বাকিরা শান্তিবাহিনীর গুলিতে শহীদ হন। স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে দেশের মানচিত্র সুরক্ষায় অসীম সাহসিকতা প্রদর্শনের জন্য বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের ১ জন বীর বিক্রম এবং ৮ বীর প্রতীক খেতাব অর্জন করেন। যাদের রক্তের বিনিময়ে আজও অটুট আমাদের প্রিয় মানচিত্র, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি— বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সেই সব বীরদের স্মরণে বাহিনীর পুরোনো নথি ঘেঁটে লিখেছেন সাঈফ ইবনে রফিক।
রাত্রি নামছে পাহাড়ে। ঘন কুয়াশায় ঢাকা বনপথে জোনাকি জ্বলে নিভে যাচ্ছে। হঠাৎ গর্জে উঠল স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের আওয়াজ, পাহাড়ি নৈঃশব্দ্য ছিন্ন হয়ে গেল এক মুহূর্তে। রেজুপাড়া বিওপির পাশে পড়ে থাকা একটি বুটজোড়া সাক্ষী দেয়— আরেকটি তরুণ প্রাণ মিশে গেল সীমান্তের মাটিতে, বাংলাদেশের পতাকার জন্য। এটি কোনো উপন্যাস নয়, কোনো সিনেমার দৃশ্যও নয়—এটি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের ইতিহাস, যেখানে প্রতিটি পাহাড়, প্রতিটি নদী, প্রতিটি কাঁটাতার লেগে আছে রক্ত, ঘাম আর প্রতিজ্ঞার গন্ধ।
একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের পূর্বসুরী ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের বীরত্বগাঁথা সবারই কমবেশি জানা। ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠের মধ্যে ২ জনই এই বাহিনীর। ৮ জন বীর উত্তম, ৩২ জন বীর বিক্রম এবং ৭৭ জন বীর প্রতীক খেতাব অর্জন করেন। তবে দেশজুড়ে যুদ্ধ শেষ হলেও স্বাধীনতার ঠিক পরপরই, ১৯৭২ সাল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম যেন নতুন করে জ্বলে ওঠে। পাহাড়ে শুরু হয় আরেক সংঘাত। “শান্তিবাহিনী” নামে সশস্ত্র গোষ্ঠী রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতা শুরু করে, আর সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবানের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। তৎকালীন বিডিআর— বর্তমান বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ—তখনই বুঝেছিল— যুদ্ধ শেষ হয়নি, শুধু শত্রু বদলেছে।
প্রথম দিকে পাহাড়ের ঢালে, নদীর কিনারে, বাঁশবাগানে রক্তে ভেসে গেছে সীমান্ত। সিপাহী আব্দুল লতিফ, আব্দুল হালিম মিজু, নায়েক রজব আলী, সিপাহী আমজাদ হোসেন, সিপাহী আবদুর রহিম, সিপাহী মো. আজম, নায়েক আবদুস সালাম, সিপাহী আমজাদ আলী— এ রকম ১০৮টা নীলপদ্ম, ১০৮ জন শহীদের নামের একটি দীর্ঘ তালিকা, যারা পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন কথিত শান্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে। মায়ানমার সীমান্তে দুটি ঘটনায় শহীদ হয়েছেন ল্যান্সনায়েক মোশারফ হোসেন এবং নায়েক মো. মিজানুর রহমান। এক এক করে তারা হারিয়ে গেলেও প্রতিরোধ থেমে যায়নি। এক ইঞ্চি মাটিও বিচ্যুত হয়নি দেশের মানচিত্র থেকে।
স্বাধীন বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে বিজিবির মৃত্যুর মিছিল শুরু হয় সিপাহী আবদুল লতিফকে দিয়ে। ১৯৭২ সালের ১ জুন শান্তিবাহিনীর গুলিতে শাহাদাৎ বরণ করেন। ওই বছর ২৬ জুন শান্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে অপারেশনে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন সিপাহী আবদুল হালিম মিজু।
১৯৭৬ সালের শীত পড়ার আগে পাহাড়ে ছিল এক অদ্ভুত নীরবতা। সেই নীরবতা ভেঙে দিয়েছিলেন নায়েক ওবায়েদ উল্লাহ। রাঙামাটির পার্বত্য এলাকায় শান্তিবাহিনীর গুলিতে শাহাদাত বরণ করেন তিনি। পান রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ‘বীর প্রতীক’—আর পাহাড়ের গায়ে রেখে যান অমরত্বের দাগ। সেই অপারেশনে তার আরও দুই সহযোদ্ধা শহীদ হন।
২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৯ সালে দুর্গম সীমান্তে শান্তিবাহিনীর হামলায় শহীদ হন তিনজন, যাদের মধ্যে নায়েক আব্দুল আজিজের নাম আজও পাহাড়ে ফিসফিসিয়ে উচ্চারিত হয়। কাঁপন ধরায় শত্রুর বুকে৷ বজ্রপাতের মতো গুলির শব্দে আকাশ কেঁপে উঠেছিল, তবু তিনি পিছু হটেননি। তাঁর সেই বীরত্বের জন্য তিনি পান বীর প্রতীক খেতাব।
১৯৮০ সালে সশস্ত্র বিদ্রোহী দমনের অভিযানে নামে মারিশ্যা ব্যাটালিয়নের একটি দল। মেজর সৈয়দ একরামুল হক খন্দকারের নেতৃত্বে দলটি বাঘাইছড়ির কেরাংগাতলীতে শান্তিবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করে তাদের একটি ক্যাম্প দখল করেন। সে সময় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ বেশ কয়েকজনকে আটক করে তৎকালীন বিডিআর। মেজর একরাম বীর বিক্রম খেতাবে ভূষিত হন। একই ঘটনায় বীর প্রতীক খেতাব পান সিপাহী মো. নূরুল ইসলাম, মো. আকতার হোসেন এবং মো. আব্দুল জলিল।
১৯৮০ সালের ২২ এপ্রিল বান্দরবান জেলার মদক সীমান্ত ফাঁড়িতে অতর্কিত হামলা চালায় শান্তিবাহিনী। গুলিবর্ষণে সুবেদার আজিজুর রহমানসহ ২০ জন ঘটনাস্থলেই নিহত হন। তিন ঘণ্টা ধরে যুদ্ধ চলে, পালানোর সুযোগ পেলেও ফাঁড়ি ছাড়েননি আজিজুর রহমান। অসীম সাহসিকতার জন্য তাকে দেওয়া হয় বীর প্রতীক খেতাব।
এরপরের বছরগুলোও ছিল রক্তাক্ত ও উত্তপ্ত। ১৯৮২ সালে বরকলের আন্দারমানিক বিওপিতে ৯ জন সৈনিক শহীদ হন। একই বছর ১৭ নভেম্বর খাগড়াছড়িতে সীমান্ত চিহ্নিতকরণের দায়িত্বে নিয়োজিত ৭ জন বিজিবি সদস্যকে গুলি করে হত্যা করে শান্তিবাহিনী। ১৯৮৪ সালে কাপ্তাই সীমান্তে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ সীমানা চিহ্নিতকরণ কাজ চলার সময় শান্তিবাহিনীর অতর্কিত আক্রমণে শহীদ হন সিপাহী মোহাম্মদ হোসেন। ১৯৮৭ সালের বর্ষার রাতে বরকলের জঙ্গলে অতর্কিত হামলা হয়। নায়েক আলিফ আলী, ল্যান্স নায়েক আব্দুল মালেক, সৈনিক কুদ্দুস আলীসহ সাতজন শহীদ হন। কেউ মারা যাওয়ার আগ মুহূর্তেও রেডিও কল বন্ধ করেননি। শেষবার তাঁরা বলেছিলেন—“অবস্থান অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে।”
৬ মে ১৯৮৯ তারিখে পার্বত্য চট্টগ্রামের পানছড়ি ছত্রাছড়ায় শান্তিবাহিনীর গুলিতে সিপাহী হুমায়ুন কবির, সিপাহী এবাদত হোসেন, সিপাহী আবুল হাসান, সিপাহী আবু বকর ও সিপাহী সিগন্যাল দেলোয়ার হোসেন, এই পাঁচজন বিজিবি সৈনিক শাহাদাত বরণ করেন।
তারপর আসে ১৯৯০ সালের জানুয়ারি। কুয়াশায় ঢাকা পাহাড়ি পথে কুকিছড়া ক্যাম্প থেকে ফিরছিল ৩০ জনের টহল দল। জিরার খামারের কাছে অতর্কিতে হামলা হয়। ক্যাপ্টেন আর.এ.এম. নিজামুল ইসলাম খান, হাবিলদার আবুল বাশার, নায়েক আমিনুল হক, ল্যান্স নায়েক নূরে আলমসহ ১২ জন শহীদ হন। পরে এক সহযোদ্ধা লিখেছিলেন“আমরা সীমান্ত পাহারা দেই, কিন্তু কখনো ভাবিনি পাহাড়েই হবে আমাদের কবর।”
১৯৯১ সালের মার্চে বরকল ছত্রাছড়া ক্যাম্পের বাঁশবাগানে গুলিতে শহীদ হন নায়েক সিরাজুল ইসলাম ভূঁইয়া। শান্তিবাহিনীর গুলিতে সর্বশেষ বিজিবি সদস্যের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ২০০৫ সালের ৩ জানুয়ারি। সেদিন মারিশ্যায় শাহাদাৎ বরণ করেন সিপাহী শাহজাহান আলী।
তবুও শান্তি আসে না সহজে। ২০১৪ সালের ২৮ মে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে পিলার ৫২-এর কাছে মায়ানমারের বিজিপির গুলিতে শহীদ হন নায়েক মিজানুর রহমান। তাঁর মৃত্যু যেন স্মরণ করিয়ে দেয়—“সীমান্তে শান্তি চাইলে পাহাড়ের নীরবতা রক্তে কিনতে হয়।” ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরেও রেজুপাড়া বিওপিতে শহীদ হন ল্যান্স নায়েক মোশাররফ হোসেন, যখন মায়ানমারের নাসাকা বাহিনী অতর্কিতে গুলি চালায়।
কিন্তু সব গল্পের নায়ক বেঁচে থাকে না, গৌরবময় মৃত্যুর পরও অমরত্ব পান না বিস্মৃত অনেকেই। অনেকেই ছিলেন অবিবাহিত তরুণ—যাদের বাবা-মা জানতেন, ছেলে শহীদ হয়েছে, কিন্তু তাঁদের মৃত্যুর পর আর কেউ স্মরণ করে না। সেই নামগুলো পড়ে আছে ধুলোমাখা রেকর্ড ফাইলে, স্মৃতির প্রান্তে হারিয়ে যাওয়া একেকটি তারার মতো। আশার কথা— বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এখন সেই ভুলে যাওয়া নামগুলো নতুন করে খুঁজে আনছে, শহীদদের গল্প ফিরিয়ে দিচ্ছে জাতির হৃদয়ে।
এই ১১০ জনের বাইরেও পাহাড়ে ঝরেছে অনেক তাজা রেজিমেন্টাল প্রাণ। এই সীমান্তরক্ষার গল্প শুধু সশস্ত্র সংঘর্ষের নয়— এটি রোগ, দুর্ভোগ ও আত্মনিবেদনেরও ইতিহাস। পার্বত্য এলাকায় বহু সৈনিক ম্যালেরিয়ার প্রকোপে প্রাণ হারিয়েছেন। অনেকে টহলরত অবস্থায় জ্বরাক্রান্ত হয়ে পাহাড়েই মৃত্যুবরণ করেছেন। শীতের রাতে পাহাড়ে ঠান্ডা হাওয়া আর বৃষ্টিঝরার মধ্যে টহল দিতে দিতে তাঁরা কাঁপতে কাঁপতে পতাকা রক্ষা করেছেন। তাঁদের মৃত্যু সংবাদ কেবল ব্যাটালিয়ন ডায়েরিতে লেখা হয়, জাতি জানে না।
এই দীর্ঘ সংগ্রামজুড়ে বিজিবি মোকাবিলা করেছে বহুরৈখিক শত্রুতার। ভারতের মিজোরাম, নাগাল্যান্ড ও মণিপুর থেকে আসা বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী যেমন মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট (এমএনএফ), পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ), কিংবা মায়ানমারের চিন ন্যাশনাল আর্মি (সিএনএ) ও আরাকান আর্মি (এএ)—এদের অস্ত্রের ছায়া ছুঁয়েছিল বাংলাদেশের সীমান্তও। ১৯৭০–৯০ দশকে এই বিদ্রোহীরা পার্বত্য করিডোরকে ব্যবহার করত জঙ্গি রুট হিসেবে। বিজিবি তখনই সীমান্তজুড়ে স্থাপন করে অস্থায়ী পোস্ট, রিকনাইস্যান্স টহল, আর পাহাড়ে পাহাড়ে নজরদারি।
সময়ের সঙ্গে এই চ্যালেঞ্জ আরও জটিল হয়েছে। মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির উত্থান, আরসা ও আরএসওর নতুন সন্ত্রাসী ঘাঁটি, কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের অনুপ্রবেশ, সাথে জেএসএস আর ইউপিডিএফতো আছেই— সব মিলিয়ে সীমান্ত এখন বহুমুখী হুমকির মুখে। বিজিবি ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন অভিযানে জেএসএসের ৬ জন, ইউপিডিএফের ২ জন, আরাকান আর্মির ৪ জন, কেএনএফের ১ জন ও আরসার ১৯ জন সদস্যকে আটক করেছে। উদ্ধার করেছে ৩টি এসএসবিএল, ১টি এসএমজি, ৬টি রাইফেল, ৮টি পিস্তল ও ৩৫২ রাউন্ড গোলাবারুদ। এসব অভিযান শুধু সীমান্ত সুরক্ষা নয়, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের সুরক্ষাও নিশ্চিত করেছে।
আজ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ শুধু সীমান্ত পাহারা দেয় না, পাহাড়ের মানুষকেও জুড়ে নিচ্ছে রাষ্ট্রের সঙ্গে। তারা এখন পাহাড়ে বই বিতরণ করছে, চিকিৎসা শিবির বসাচ্ছে, স্থানীয় ভাষায় জনসচেতনতা কার্যক্রম চালাচ্ছে। মাদক, অস্ত্র ও মানবপাচার ঠেকাতে তৈরি করেছে প্রযুক্তিনির্ভর নজরদারি নেটওয়ার্ক। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের ১৮টি ব্যাটালিয়নের ১৫৪টি বিওপি, ৩৮টি বিজিবি ক্যাম্প, ২২টি বিশেষ ক্যাম্প, ১৪টি অস্থায়ী ক্যাম্প পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি প্রতিষ্ঠায় দিনরাত এক করে দিচ্ছে। এদের প্রহরায় আজ নিরাপদ পাহাড়।
যখন মায়ানমারের আরাকান আর্মি কিংবা কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট সীমান্তের ওপারে নতুন করে সংঘাত উসকে দিচ্ছে, তখন বিজিবি পাহাড়ের নৈঃশব্দ্য ভেঙে বলছে— বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব অখণ্ড, এই মাটি কারও দয়ার বিষয় নয়।
যখন সূর্য ডুবে যায় পাহাড়ের পেছনে, রেজুপাড়া বা বলিপাড়া বিওপির টাওয়ারে জ্বলে ওঠে লাল বাতি। সেই আলো নিছক সতর্কতার নয়, বরং এক বিশ্বাসের প্রতীক—এই পতাকা যেমন স্বাধীনতার প্রতীক, তেমনি প্রতিটি প্রহরীর প্রাণে তার রঙ মিশে আছে। যতদিন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আছে, ততদিন পাহাড়ের সীমান্তে এই লাল-সবুজ পতাকা উড়বে অবিচল, রক্তের বিনিময়ে রক্ষিত এক অমর প্রতিশ্রুতি হয়ে।
এসএস//
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।