ঢাকা, শনিবার   ২৮ জুন ২০২৫

বিবেচনা করছে সরকার, পরীক্ষার সুযোগ পেতে পারেন সেই ছাত্রী 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২১:০৯, ২৭ জুন ২০২৫ | আপডেট: ২১:১১, ২৭ জুন ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

রাজধানীর সরকারি বাঙলা কলেজ কেন্দ্র। সময় সকাল সাড়ে ১১টা। চোখেমুখে আতঙ্ক আর ক্লান্তি নিয়ে ছুটে এলেন একজন ছাত্রী, নাম আনিসা। এদিন তাঁর জীবনের প্রথম এইচএসসি পরীক্ষা, বাংলা প্রথমপত্র। কিন্তু ততক্ষণে নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেছে এক ঘণ্টা ৩০ মিনিট। নিয়ম বলছে, পরীক্ষার শুরুর ৩০ মিনিট পর আর কেউ কেন্দ্রে ঢুকতে পারবে না। তাই তাকে ফিরিয়ে দিলো কেন্দ্র। 

তবে এই ঘটনা কোনো সাধারণ দেরির গল্প নয়। আনিসার বাবা নেই। মাকে নিয়ে তিনিই ছিলেন একমাত্র ভরসা। হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন মা। হাসপাতালে ভর্তি করতে ছুটতে হয় মেয়েকে।
মাকে রেখে পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন আনিসা, কিন্তু পরীক্ষাকক্ষে আর পৌঁছানো হলো না। শত অনুরোধেও পরীক্ষার সুযোগ না পেয়ে কেন্দ্রের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। কেন্দ্রের বাইরে কান্নায় ভেঙে পড়া আনিসার ছবি ও ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তে ভাইরাল হয় সে দৃশ্য। সে দৃশ্য নাড়িয়ে দেয় দেশবাসীর মন। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে শিক্ষাবিদ, প্রশাসক সবাই মানবিকতার প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন।

শুক্রবার সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে মেয়েটির ছবি ও ভিডিও। জানা গেছে, ওই পরীক্ষার্থীর নাম  আনিসা।

আনিসার ঘটনাকে ‘মানবিক ট্র্যাজেডি’ হিসেবে দেখছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, আনিসার বিষয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা ড. চৌধুরী রফিকুল (সি আর) আবরার ‘বিশেষ বিবেচনা’র আওতায় বিষয়টি দেখছেন।

তিনি বলেন, “মানবিক কারণে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় রয়েছে। পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে পাবলিক পরীক্ষা সংক্রান্ত আইন ও বিধির আলোকে সমাধানের চেষ্টা চলছে।”

পাবলিক পরীক্ষা আইন ১৯৮০ অনুযায়ী, পরীক্ষার শুরুর ৩০ মিনিট পর আর কাউকে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া যায় না। কেউ এই নিয়ম ভাঙলে ৫ বছর পর্যন্ত জেল বা অর্থদণ্ড হতে পারে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক কামাল উদ্দিন হায়দার বলেন, “আইন বলছে ৩০ মিনিটের বেশি দেরি হলে প্রবেশ নয়। তবে মানুষের জন্যই আইন। মানবিক কারণে ব্যত্যয় হয়তো সম্ভব।”

যেহেতু আনিসা বাংলা প্রথমপত্র দিতে পারেননি, তবে দ্বিতীয়পত্রে যদি ভালো ফল করেন (উদাহরণস্বরূপ, ৬৬ বা তার চেয়ে বেশি), তবে শুধুমাত্র দ্বিতীয়পত্রের ভিত্তিতে তাকে পাস হিসেবে গণ্য করার সুযোগ রয়েছে।

সব পরীক্ষা শেষে, সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে সিদ্ধান্ত এলে বোর্ড তার জন্য আলাদাভাবে বাংলা প্রথমপত্রের পরীক্ষা নিতে পারে। তবে তখন প্রশ্নপত্র, কেন্দ্র, নিরাপত্তা ইত্যাদি নানা বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে।

শিক্ষা বোর্ডের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা বলছেন, ‘বিশেষ বিবেচনা’ মানে সব নিয়মের ঊর্ধ্বে যাওয়ার অনুমতি। তবে তারা আশঙ্কা করছেন, এতে অন্যরাও আদালতে গিয়ে দাবি তুলতে পারেন, ফলে পুরো ব্যবস্থায় জটিলতা তৈরি হতে পারে।

তবুও, পরীক্ষক, নীতিনির্ধারক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত একমত, এই পরিস্থিতিতে মানবিকতা যেন নিয়মের ওপরে স্থান পায়।

এই ঘটনা কেবল আনিসার নয়, বরং হাজারো ছাত্র-ছাত্রীর বাস্তব জীবনের প্রতিচ্ছবি যারা নানান দুর্যোগ সত্ত্বেও ভবিষ্যতের জন্য লড়াই করছে। আনিসার কান্না যেন প্রশ্ন রাখে,  আইন কি সত্যিই জীবনের চেয়ে বড়?


এমবি//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি