ঢাকা, শনিবার   ০৫ জুলাই ২০২৫

সোলেইমানি হত্যাকান্ড

বিশ্ব বাজারে আরও বাড়বে তেলের দাম

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:৪৫, ৫ জানুয়ারি ২০২০

Ekushey Television Ltd.

ইরাকে মার্কিন হামলায় নিহত হয়েছেন ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের অভিজাত কুদস ফোর্সের কমান্ডার মেজর জেনারেল কাসেম সোলাইমানি। এ ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়েছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বাজারে। যুক্তরাষ্ট্র-ইরান টানাপড়েনে বিশ্ববাজারে বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম। এই হামলার পরপর বিশ্বব্যাপী তেলের দাম প্রায় ৪ শতাংশ বেড়ে যায়। ফলে প্রায় ৭০ ডলারে পৌঁছেছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দর। অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দরপতন হচ্ছে বিশ্বের প্রধান প্রধান শেয়ার বাজারগুলোতে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, অর্থনীতিতে এ প্রভাব খুবই প্রাথমিক। মার্কিন হামলার জবাবে ইরানের পাল্টা পদক্ষেপের পরই বোঝা যাবে আর্থিক ক্ষতির খতিয়ান। শুধু তেলের বাজার নয়, এ হত্যাকাণ্ডে বৈশ্বিক শেয়ারবাজারেও বেশ তোলপাড় তুলেছে। মার্কিন ও এশীয় শেয়ারবাজারে দেখা গেছে মন্দাভাব।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, তারকা জেনারেল কাসেম সোলাইমানি হ্ত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের দীর্ঘ দিনের বিরোধ আরও জোরালো হয়ে উঠতে পারে। এতে মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি, বিশেষত হরমুজ প্রণালীকে ঘিরে অস্থিরতা বাড়তে পারে। এর প্রভাব পড়বে অঞ্চলটি থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল সরবরাহে। এর জের ধরে আগামী দিনগুলোতে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।  

সাংহাই ও হংকং শেয়ার মার্কেটের দর পতন হয়েছে। সূচক কমেছে তাইওয়ান ও সিঙ্গাপুরের শেয়ারবাজারে। মার্কিন সরকারের বন্ডের দাম পড়ে গেছে। কমে গেছে প্রযুক্তি ভিত্তিক কোম্পানি, স্বাস্থ্যসেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ও এয়ারলাইনসগুলোর শেয়ারের দাম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি তেলের দাম বেড়েছে এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াতেও।

হংকং স্টক মার্কেট বিশ্লেষক পল পং বলেন, 'শেয়ার বাজারের বহু বিনিয়োগকারী ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধের আশংকায় আছে। যদিও এই যুদ্ধের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে মধ্যপ্রাচ্যে। তবে এটা ঠিক, পুরো বিশ্বের শেয়ারবাজারে এর একটা ধাক্কা লাগবে। যেমন খেয়াল করলে দেখবেন, হংকং শেয়ার বাজারের সূচক প্রায় ১০০ পয়েন্ট কমে গেছে।'

ইরানে এখনো সোলেইমানির মৃত্যুর শোক। শীর্ষ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনী এ হামলার কঠোর জবাব দেয়ার হুশিয়ারি ছাড়া এখনো কোন প্রতিক্রিয়া দেখায়নি ইরান। বিশ্লেষকরা বলছেন, অর্থনৈতিক সংকট কি মাত্রায় পড়বে তা নির্ভর করছে ইরানের নেয়া পাল্টা পদক্ষেপের পর।

অন্যদিকে স্বর্ণ, ইয়েন ও সরকারি সঞ্চয়পত্রের বাজারে দেখা গেছে বড় ধরনের উল্লম্ফন। অনিশ্চিত পরিস্থিতির আশঙ্কায় শেয়ারবাজারের বদলে স্বর্ণের মতো মূল্যবান ধাতু কেনার প্রবণতায় এমনটি তৈরি হয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। মধ্যপ্রাচ্যে যদি আরেকটি যুদ্ধ লেগেই যায়, সেক্ষেত্রে মুদ্রামান কমে যাবে এমনটি আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ হত্যাকাণ্ডের ফলে মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সব দেশই আক্রান্ত হবে। মূলত ইরানের পরবর্তী পদক্ষেপের ওপরই নির্ভর করছে অঞ্চলটির আগামী দিনগুলোর পরিস্থিতি।

মনে করা হচ্ছে, এই ধরনের হত্যাকাণ্ড যুদ্ধে রূপ নেবে না। ছোটো-খাটো প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমেই সীমাবদ্ধ থাকবে। ফলে তেলের দামে খুব বেশি প্রভাব পড়বে না। গত সেপ্টেম্বরে সৌদি আরবের তেল স্থাপনায় ড্রোন হামলার পর জ্বালানির দাম প্রায় ১৪ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছিল। তবে এটি স্থায়ী ছিল মাত্র ১১ দিন। পরে ৫৭ ডলারে নেমে আসছে ব্যরেল প্রতি অপরিশোধিত তেলের দাম।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের অর্থনীতি এখন দুর্বল। তাছাড়া অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অবস্থাও অস্থির। এ পরিস্থিতিতে বড়ো ধরনের পালটা হামলার আশঙ্কা করা হচ্ছে না। তবে প্রতিক্রিয়া যাই হোক, তাতে এই অঞ্চলের তেলের উত্পাদনকে বাধাগ্রস্ত করবে এবং তেলের দাম বাড়াবে। এর প্রভাব পুরো বিশ্ব অর্থনীতিতে পড়বে। ইউরেশিয়া গ্রুপের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ইরান যদি ইরাকের দক্ষিণ অঞ্চলে মার্কিন প্রভাবের তেল স্থাপনায় হামলা করে অথবা হরমুজ প্রণালিতে তেল চলাচলে বাধা দেয় সেক্ষেত্রে তেলের দাম ৮০ ডলার পর্যন্ত হতে পারে। আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার তথ্যানুযায়ী ২০১৯ সালে ইরাকের তেলক্ষেত্রগুলো হতে রেকর্ড তেল উত্তোলন করা হয়েছে। দৈনিক গড়ে ৪৭ লাখ ব্যারেল তেল উত্তোলিত হয়েছে ইরাকে। বিবিসির এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ২০০৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরাকের দ্বিতীয় যুদ্ধের সময়কালে এক রাতের ব্যবধানে ১০ ডলার বেড়েছিল তেলের দাম। সেসময় অর্থনীতিতেও এর বিরূপ প্রভাব পড়লেও বেশি দিন স্থায়ী হয়নি।

কাসেম সোলেইমানি হত্যার পর ইরাকের তেল ক্ষেত্রে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকরা দেশটি ছেড়ে চলে যাচ্ছে। ইরাকের তেলমন্ত্রী জানিয়েছেন, শুক্রবারের ঘটনার পর ইরাকের দক্ষিণাঞ্চলের মার্কিন কর্মীরা ঐ অঞ্চল ছেড়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র তাদের নাগরিকদের ইরাক ছাড়ার জরুরি বার্তা দেওয়ার পর দেশ ছাড়ছেন তারা।

উল্লেখ্য, কাসেম সোলাইমানি দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় ছিলেন। ইরানি এ জেনারেলের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য নীতি বাস্তবায়ন অনেকটাই বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল বলে মনে করে ওয়াশিংটন। শুক্রবার রাতে ইরাকের রাজধানী বাগদাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অভিমুখী কাসেমির গাড়িবহরে বিমান হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। এতে সোলাইমানিসহ বেশ কয়েকজন নিহত হন।

পেন্টাগনের পক্ষ থেকে কাসেম সোলাইমানির নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। এক বিবৃতিতে পেন্টাগন জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশেই কাসেম সোলাইমানির ওপর হামলা চালানো হয়েছে। ভবিষ্যতে ইরানের পক্ষ থেকে যেকোনো হামলার পরিকল্পনা নস্যাৎ করতে জেনারেল সোলাইমানিকে হত্যা করা হয়েছে।
এমএস/

 

 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি