ভেজালবিরোধী আন্দোলনের নেপথ্যে
প্রকাশিত : ১৫:০৮, ১৩ মে ২০১৯

বর্তমান সময়ের টক অব দ্য ডে খাদ্যে ভেজাল। খাদ্যে ভেজাল যেন দেশে মহামারি রূপ নিয়েছে। বাজারে প্রচলিত সব ধরনের খাদ্য পণ্যের ৪০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ভেজাল। এ নিয়ে চলছে দেশের বিভিন্ন জায়গায় আলোচনা-সমালোচনা।
সম্প্রতি ৯৬টি প্রতিষ্ঠানের দুধের মধ্যে ৯৩টিতে ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া গেছে। এছাড়া বিএসআইটিআই ৫২টি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যে ভেজাল পেয়েছে। এই ভেজাল পণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহার এবং মান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত নতুন করে উৎপাদন ও বিক্রি বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
হাইকোর্টে এ বিষয়ে রিট করে বেসরকারি ভোক্তা অধিকার সংস্থা ‘কনসাস কনজুমার্স সোসাইটি’ (সিসিএস)। পরে সিসিএসের যুব শাখাকে আলাদা করে নাম দেয়া হয় ‘কনজুমার ইয়ুথ বাংলাদেশ’ (সিওয়াইবি)।
এ বিষয়ে কথা হলো সিওয়াইবির বর্তমান কেন্দ্রীয় সভাপতি পলাশ মাহমুদের সঙ্গে।
ভেজালের কারণে কী ক্ষতি হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে একুশে টিভি অনলাইনকে পলাশ মাহমুদ বলেন, দেশে বর্তমানে ২ কোটির বেশি মানুষ কিডনি রোগী। প্রায় দেড় কোটি হৃদরোগী। ক্যান্সারে প্রতি বছর ৩ লাখ মানুষ মরছে। কিডনি রোগে প্রতি ঘণ্টায় মরছে ৬ জন। ২০৩০ সালের মধ্যে ক্যান্সার রোগী হবে প্রায় ২ কোটি। ‘তার মানে কয়েক বছরের মধ্যে ক্যান্সার, কিডনি ও হার্টের রোগী হবে প্রায় ৭ কোটি।
তিনি বলেন, বিষয়টি চিন্তা করলে তো ঘুম আসে না। আমরা কোথায় যাচ্ছি? কী হচ্ছে দেশে? দেশে স্বাস্থ্যঝুঁকি কোথায় যাচ্ছে চিন্তা করে দেখুন। এ জন্য আমরা ব্যাপকভাবে মানুষকে সচেতন করতে কাজ করছি।
৫২টি পণ্য নিয়ে হাইকোর্টে রিট করার বিষয়ে পলাশ মাহমুদ বলেন, পণ্যের মান নিশ্চিত করার দায়িত্ব বিএসটিআইয়ের। আর নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার দায়িত্ব নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের দায়বদ্ধতা রয়েছে। এজন্য তাদেরকেই বিবাদী করে রিটটি করা হয়। আদালত শুনানি শেষে যে রায় দিয়েছেন তাতে জনগণের হৃদয়ের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করেছে।
হাইকোর্টের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় পলাশ মাহমুদ আরও বলেন, এখনও খুব খুশি হওয়ার কিছু নেই। কারণ শুধু এই ৫২টি পণ্য নয়, অন্যান্য পরীক্ষা দেখা গেছে প্রায় ৭০ ভাগ পণ্যে ভেজাল আছে। চাইলেই এই মহামারি দূর হবে না। এ জন্য সরকার, জনগণ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সবাইকে কাজ করতে হবে। আদালত সেটিই বলেছেন। সরকারে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে ভেজালের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করতে বলেছেন।
যার রিটের কারণে হাইকোর্ট এই যুগান্তকারী রায় দিয়েছেন সেই পলাশ মাহমুদের গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি থানায়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা অবস্থাতেই তিনি সাংবাদিকতা শুরু করেন। প্রথম বর্ষে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত হলেও দুই গ্রুপের এক সংঘর্ষ দেখে আর রাজনীতিতে অগ্রসর হননি।
পলাশ মাহমুদ সাংবাদিকতা ও সামাজিক সংগঠনের কাজ করতে থাকেন সমান তালে। তিনি দৈনিক ইনকিলাব, দৈনিক বণিকবার্তা, দৈনিক মানবজমিন, দৈনিক যুগান্তরে খুবই সুনামের সঙ্গে কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি বেসরকারি টেলিভিশন সময় টিভির অনলাইন বিভাগে সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত আছেন।
এদিকে চলতে থাকে ভোক্তা অধিকার ও ভেজালবিরোধী আন্দোলন। কোনো ধরনের আর্থিক সহায়তা ছাড়াই পলাশ মাহমুদ ও কয়েকজন শুভাকাঙ্ক্ষী এবং এর সদস্যদের স্বেচ্ছাশ্রম ও অর্থে এগোতে থাকে সিসিএস।
রাজধানীর গ্রিন রোডে ছোট্ট একটি অফিস নিয়ে চলছে সিসিএস। তাও একজন শুভাকাঙ্ক্ষীর দেয়া। পরে সিসিএসের যুব শাখাকে আলাদা করে নাম দেয়া হয় ‘কনজুমার ইয়ুথ বাংলাদেশ’ (সিওয়াইবি)।
সংগঠনটি ইতিমধ্যে প্রায় ২০টি শাখা চালু করেছে। দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে সংগঠনটি। এ পর্যন্ত প্রায় ৪০টি ইভেন্ট সম্পন্ন করেছে সিওয়াইবি ও সিসিএস। প্রায় ২০০০ শিক্ষার্থীকে ভোক্তা অধিকার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে মূলত সিওয়াইবি সদস্যরাই এই সংগঠনের চালিকা শক্তি।
সিসিএস পরিচালনা করার পাশাপাশি কয়েকটি আন্তর্জাতি সংগঠনের সঙ্গে কাজ করছেন পলাশ মাহমুদ। তিনি বর্তমানে ‘ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ সোসাইটি’ (আইওয়াইএস) এর কান্ট্রিডিরেক্টর, থাইল্যান্ডের ‘ও-ইয়েস ফাউন্ডেশন’র এর কান্ট্রি কোঅর্ডিনেটর, সুইডভিত্তিক ‘ওয়ার্ল্ড পিস কনফারেন্স’ এর কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর হিসেবে দাযিত্ব পালন করছেন।
আরও পড়ুন